মঙ্গলবার, ৩০ আগস্ট, ২০২২ ০০:০০ টা

১০ শিক্ষার্থীর বিপরীতে থাকবে একজন শিক্ষক

বেসরকারি মেডিকেল কলেজ বিল পাস

নিজস্ব প্রতিবেদক

বেসরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজে প্রতি ১০ জন শিক্ষার্থীর জন্য একজন শিক্ষক থাকার বাধ্যবাধকতা রেখে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনায় নতুন আইনের খসড়া সংসদে পাস হয়েছে। গতকাল স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক ‘বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ও ডেন্টাল কলেজ বিল-২০২২’ সংসদে পাসের প্রস্তাব করেন। পরে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়।

এর আগে বিলের ওপর দেওয়া জনমত যাচাই, বাছাই কমিটিতে পাঠানো এবং সংশোধনী প্রস্তাবগুলোর নিষ্পত্তি করেন ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু। গত ৩০ মার্চ বিলটি সংসদে তোলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। পরে বিলটি পরীক্ষা করে সংসদে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো     হয়। সংসদে আসার আগে গত বছরের ৩ মে খসড়া এ আইনটি চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। বেসরকারি মেডিকেল কলেজ ও ডেন্টাল কলেজগুলো এখন বেসরকারি মেডিকেল কলেজ স্থাপনা এবং অপারেশন গাইডলাইনস-২০১১ এবং বেসরকারি ডেন্টাল কলেজ প্রতিষ্ঠা এবং অপারেশন গাইডলাইনস-২০০৯ এর অধীনে পরিচালিত হচ্ছে।

এই দুটি নীতিমালার ওপর ভিত্তি করে নতুন আইন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। নতুন আইন অনুযায়ী, বেসরকারি মেডিকেল কলেজ বা ডেন্টাল কলেজের প্রত্যেক বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর অনুপাত হবে ১:১০। এসব প্রতিষ্ঠানে কোনো বিভাগের খণ্ডকালীন শিক্ষকের সংখ্যা সংশ্লিষ্ট বিভাগের অনুমোদিত পদের শতকরা ২৫ শতাংশের বেশি রাখা যাবে না। মেডিকেল বা ডেন্টাল কলেজের ৫ শতাংশ আসন অসচ্ছল মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে। প্রতি শিক্ষাবর্ষে এই আসনের ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের তালিকা ভর্তির শেষ হওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে সরকারকে জানাতে হবে। বেসরকারি মেডিকেল বা ডেন্টাল কলেজে অন্যূন ৫০ জন শিক্ষার্থীর আসনবিশিষ্ট হতে হবে। বেসরকারি মেডিকেল কলেজ স্থাপনের জন্য মেট্রোপলিটন এলাকায় কমপক্ষে ২ একর এবং ডেন্টাল কলেজের জন্য ১ একর জমি থাকতে হবে। অন্য এলাকায় এই জমির পরিমাণ ৪ একর ও ২ একর হতে হবে। এই জমি-সংশ্লিষ্ট কলেজের নামে নিরঙ্কুশ, নিষ্কণ্টক, অখণ্ড ও দায়মুক্ত হতে হবে। মেডিকেল কলেজ বা ডেন্টাল কলেজ এবং এর অধীন পরিচালিত হাসপাতাল কোনোভাবেই ইজারা বা ভাড়া নেওয়া জমিতে বা ভবনে স্থাপন করা যাবে না। নতুন আইন অনুযায়ী, মেডিকেল কলেজের নামে অন্যূন ৩ কোটি টাকা এবং বেসরকারি ডেন্টাল কলেজের নামে ২ কোটি টাকা যে কোনো তফসিলি ব্যাংকে সংরক্ষিত থাকতে হবে। এরই মধ্যে স্বীকৃতি পাওয়া মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজের নামে ১ কোটি টাকা জমা থাকতে হবে। তবে ৫০ আসনের বেশি অতিরিক্ত প্রতি আসনের জন্য মেডিকেল কলেজের ক্ষেত্রে ৩ লাখ টাকা এবং ডেন্টাল কলেজের জন্য ২ লাখ টাকা সংরিক্ষত তহবিল হিসেবে জমা থাকতে হবে। ব্যক্তি নামে মেডিকেল বা ডেন্টাল কলেজের  ক্ষেত্রে আরও ১ কোটি টাকা সংরক্ষিত তহবিল হিসাবে জমা থাকতে হবে। আইন অনুযায়ী, প্রত্যেক বেসরকারি মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজের সব শিক্ষার্থীর ভর্তি ফি সরকার নির্ধারণ করবে। কোনো মেডিকেল বা ডেন্টাল কলেজ কাউন্সিলের অনুমোদন না নিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করলে এক বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। ৫ শতাংশ আসন অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের জন্য না রাখলে এবং অতিরিক্ত শিক্ষার্থী ভর্তি করলেও একই দণ্ড। সরকারের অনুমতি ছাড়া নতুন শিক্ষার্থী ভর্তি করলে ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। আগে স্থাপিত  মেডিকেল ও ডেন্টাল কলেজগুলোকে আইনটি কার্যকর হওয়ার এক বছরের মধ্যে এর অধীনে অনুমোদন নিতে হবে।

খুব বেশি লোক ভারতে চিকিৎসার জন্য যায় না : বাংলাদেশ থেকে প্রতিবেশী দেশ ভারতে চিকিৎসার জন্য খুব বেশি লোক যায় না বলে দাবি করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক। গতকাল জাতীয় সংসদের অধিবেশনে বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদের এক সম্পূরক প্রশ্নের উত্তরে এ দাবি করেন মন্ত্রী। হারুনুর রশীদ তার প্রশ্নে বলেন, বিগত সরকারের দোহাই দিয়ে আর কোনো লাভ নেই। কারণ, আপনারা ১৫ বছর টানা ক্ষমতায়। দেশে স্বাস্থ্যসেবা পাচ্ছে না বলেই মানুষ প্রতিবেশী ভারতে চিকিৎসার জন্য যাচ্ছে। এতে দেশ থেকে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার পাচার হচ্ছে। সেই সুযোগ সৃষ্টি করার জন্য আপনারা স্বাস্থ্য খাতগুলো দুর্বল করে রাখছেন কি না জানি না।

এরপর স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বিএনপির আমলে স্বাস্থ্যসেবা খাতে কোনো উন্নয়ন হয়নি বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, প্রতিবেশী ভারতে চিকিৎসার জন্য খুব বেশি লোক যায় না। যখন স্বাস্থ্যসেবার ব্যবস্থা দেশেই করবেন, তখন লোকে বাইরে যাবে না। আপনারা কিছুই তৈরি করেননি। গত ১৫ বছরে এ খাতে যে উন্নয়ন হয়েছে তাতে দেশের গড় আয়ু ৭৩ বছর ও এমডিজি অর্জন হয়েছে। ভ্যাকসিন হিরো হয়েছে। আপনাদের সময় একটা পুরস্কারের মুখও কেউ দেখে নাই। সেটা ভুলে গেলে চলবে না।

প্রশ্ন রেখে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, আপনাদের সময়ে কয়টা হাসপাতাল ছিল? এখন কয়টা হাসপাতাল আছে সেটা জানেন? দুই একটা বলতে হয়। দেশে ১১১টি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল আছে। আপনাদের সময় ১০টাও ছিল না। সেটাও করেন না। এখন নার্সিং ইনস্টিটিউট আছে সাড়ে ৩০০। আপনাদের সময় সিট ছিল সাড়ে ৬০০। এখন ৩৪ হাজার নার্সিং আসন রয়েছে।

দেশে একই রোগের ওষুধের একেক কোম্পানির একেক রকম দাম উল্লেখ করে সম্পূরক প্রশ্ন করেন বিরোধী দল জাতীয় পার্টির সদস্য পীর ফজলুর রহমান মিসবাহ। জানতে চান দামের এ তারতম্যের ব্যাপারে সরকার কোনো উদ্যোগ নেবে কি না। উত্তরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ওষুধের দাম নির্ধারণ পদ্ধতি অনুযায়ী ওষুধ প্রশাসন দাম নির্ধারণ করে দেয়। তার মধ্যে এর কাঁচামাল যেগুলো আমদানি করা হয় এবং অন্যান্য উৎপাদন খরচ ধরে ভ্যাট যোগ করে একটা মূল্য ঠিক করে দেওয়া হয়। কিন্তু তার পরের দামটা (ভোক্তা পর্যায়ে) ওষুধ প্রশাসন দেখে না। ভ্যাট নির্ণয়টা সঠিক আছে কি না, সেটা তার এখতিয়ার। এসেনশিয়াল ড্রাগের ১৩০টির মতো আমরা নিয়ন্ত্রণ করে থাকি। বাকি শত শত ওষুধের দামটা আমরা নিয়ন্ত্রণ করি না। আমরা শুধু ভ্যাট ও উৎপাদন খরচ দেখে থাকি। আসলে দামের এত তারতম্য হওয়া উচিত না। অনেকেই কাঁচামাল ইউরোপ থেকে আনেন। তাদের দাম বেশি। কেউ ভারত ও চায়না থেকে আনেন, তাদের আবার দাম একটু কম থাকে। এটারও একটা তারতম্য হয়। তারপরও দামের এত তারতম্য হওয়া উচিত না। আমরা বিষয়টি দেখব। যাতে এই বিষয়ে যা যা করার দরকার আমরা করব।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর