শনিবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

দাম বৃদ্ধি স্বস্তি নেই প্রসাধনীতেও

জিন্নাতুন নূর

দাম বৃদ্ধি স্বস্তি নেই প্রসাধনীতেও

খাদ্যপণ্য, যানবাহনের ভাড়া, ওষুধ শুধু নয়, দেশের বাজারে দাম বেড়েছে সব ধরনের সাবান, টুথপেস্ট, শ্যাম্পু, গায়ে মাখার সুগন্ধিসহ নিত্য ব্যবহার্য প্রসাধনী পণ্যেরও। এসব পণ্যের দাম গত ১০ থেকে ১২ সপ্তাহে অনেক বেড়েছে। রাজধানীর কাঁচাবাজার ও প্রসাধনীর দোকানগুলো ঘুরে এই চিত্র পাওয়া যায়। বিশ্ববাজারে কাঁচামালের দাম, জাহাজভাড়া, মার্কিন ডলারের বিনিময় ও জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রভাবে পরিবহন খরচ বৃদ্ধিকে এর জন্য দায়ী করছেন ব্যবসায়ীরা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেশে বহুল ব্যবহৃত একটি ১০০ গ্রামের সুগন্ধি সাবান কিছুদিন আগেও বিক্রি হতো ৪৫ টাকায়। এখন তা বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকায়। পরিচিত আরেকটি জীবাণু ধ্বংসকারী সাবান বিক্রি হতো ৪২ টাকায়। সেটি এখন ৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সব ধরনের শ্যাম্পুর দামই কমবেশি বেড়েছে। পরিচিত একটি কোম্পানির ৩৫০ মি.লি. শ্যাম্পু আগে ৩০০ টাকায় বিক্রি হতো। এখন তা বিক্রি হচ্ছে সাড়ে ৩০০ টাকায়। ২০০ গ্রাম ওজনের টুথপেস্ট ১২০ টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ১৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দাম বেড়েছে সব ধরনের গুঁড়া সাবানেরও। গত বছর এপ্রিলে একটি পরিচিত ব্র্যান্ডের গুঁড়া সাবানের দাম ছিল ১৪০ টাকা। কিন্তু বর্তমানে তা বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকায়। কাপড় কাঁচার সাবানের দাম ২৫ টাকা থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।  

গত জানুয়ারি মাসে ১০০ গ্রাম ওজনের একটি সুগন্ধি সাবানের দাম ছিল ৪০ টাকা। কয়েক দফায় দাম বেড়ে এখন দাঁড়িয়েছে ৫৫ টাকায়। তবে বিদেশি সাবানের দাম বেড়ে দ্বিগুণের কাছাকাছি চলে  গেছে। সেই হিসেবে আট মাসের ব্যবধানে ১০০ গ্রাম ওজনের একটি সুগন্ধি সাবানের দাম বেড়েছে প্রায় সাড়ে ৩৭ শতাংশ।

বিভিন্ন কোম্পানির টুথপেস্টের দাম গড়ে ১০ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। কোম্পানি ভেদে শ্যাম্পুর দাম ২০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। বডি স্প্রের দামও প্রায় ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। কোম্পানিভেদে বেড়েছে বিদেশি লোশনের দামও। ছেলেদের শেভিং জেলের দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে।

রাজধানীর শ্যাওড়াপাড়ার বাসিন্দা নজরুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বাজারে খাদ্যপণ্যের দাম অস্বাভাবিক বৃদ্ধির কারণে এমনিতেই সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছি। এরপর এখন নিত্য ব্যবহার্য এসব পণ্যের দাম বাড়ায় আমাদের মতো মধ্যবিত্তদের বিপাকে পড়তে হয়েছে। এরই মধ্যে এসব পণ্য কম ব্যবহার শুরু করেছি। একেবারে না হলেই নয়, তা দিয়ে কোনো মতে চালাচ্ছি। খুচরা বিক্রেতারা জানান, এসব পণ্যের দাম আগে কিছুটা বেড়েছিল। জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির ঘোষণার পর আরেকবার বাড়ানো হয়েছে। তারা জানান, এখন যেসব পণ্য বিভিন্ন কোম্পানির কাছ থেকে আগের চেয়ে ১০ থেকে ৫০ টাকা বেশি দামে তাদের কিনতে হচ্ছে। প্রসাধনী আমদানিকারকরা জানান, চীন, দুবাই, ভারত, লন্ডন, জার্মানি ও আমেরিকা থেকে প্রসাধনী পণ্য আমদানি করতে হয়। এখন ডলার ও দিরহামে বেশি অর্থ পরিশোধ করতে হচ্ছে। এ ছাড়া প্রসাধনীতে ৩৩ শতাংশ শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। এর প্রভাব পড়েছে প্রসাধনীর বাজারে। কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, জীবন ধারণ ক্রমেই কঠিন হয়ে যাচ্ছে। নিম্নবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত মানুষ যে সুন্দরভাবে বাঁচবে তা এখন বহুলাংশেই অসম্ভব। অবশেষে সব কিছু ভোক্তার ঘাড়ে চাপছে। সরকারকে মানুষের আয় রোজগার বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। তা না হলে মানুষের জীবনমান দিন দিন কমতে থাকবে।  

বাংলাদেশ কসমেটিক্স অ্যান্ড ট্রয়লেট্রিজ ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের জেনারেল সেক্রেটারি আজমল হোসেইন বাবলু বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আগে ডলারের মূল্য ছিল ৮৬ টাকা এখন সরকার কেন্দ্রীয় ব্যাংকে মূল্য ধরে দিয়েছে ৯৬। আবার স্থানীয় ব্যাংকগুলো মনগড়া মূল্য নিচ্ছে। এগুলো দেখার কেউ নেই। এটা বন্ধ করতে না পারলে নিত্য ব্যবহার্য এসব পণ্যের দাম বৃদ্ধি পেতেই থাকবে। সরকার যে প্রসাধনী খাত থেকে আকাশচুম্বী রাজস্ব পায় তাও না। সাবান-শ্যাম্পুতে শুল্ক অত্যন্ত বেশি। দাম নিয়ন্ত্রণে আগে পাইপলাইন ঠিক রাখতে হবে। আমাদের পলিসি কিছু অসাধু চক্রকে সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার জন্য। দেশীয় পণ্যের ক্ষেত্রে কাঁচামাল বাইরে থেকে আনতে হচ্ছে। বিশ্ববাজারে কাঁচামালের দাম বৃদ্ধির প্রভাব দেশীয় পণ্য উৎপাদনের ওপর পড়ছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর