শনিবার, ৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা
তিস্তাপারে আবারও বন্যা

পানিবন্দি হাজারো মানুষ, খোলা আকাশের নিচে ভাঙনকবলিতরা

প্রতিদিন ডেস্ক

পানিবন্দি হাজারো মানুষ, খোলা আকাশের নিচে ভাঙনকবলিতরা

রংপুরে পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টিতে তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়ে বন্যা দেখা দিয়েছে। ছবিটি গতকাল লক্ষীটারী ইউনিয়নের বাগেরহাট থেকে তোলা -বাংলাদেশ প্রতিদিন

উজানের ঢল ও টানা বৃষ্টিতে তিস্তার পানি বেড়ে বন্যার সৃষ্টি হয়েছে। নিম্নাঞ্চল ও নদীতীরবর্তী এলাকা ডুবে গেছে। পানি নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যারাজের ৪৪টি গেট খুলে দিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড। রংপুরের তিন উপজেলার নদীতীরবর্তী চরাঞ্চলের প্রায় ৪ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের সংকট। কুড়িগ্রামে নিচু এলাকার আমন ও সবজি খেত তলিয়ে গেছে। জেলা শহর ও উলিপুর পৌর এলাকার বেশ কয়েকটি এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। বেশ কিছু এলাকায় দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন।

লালমনিরহাট প্রতিনিধি জানান, তিস্তার পানি বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় বিপৎসীমার ৩০ সেমি ওপর দিয়ে প্রবাহিত হলেও গতকাল সকালে বিপৎসীমার ১৫ সেমি ওপরে প্রবাহিত হয়। ভাটি এলাকায় ধীরে ধীরে পানি বেড়ে নদীতীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বন্যা মোকাবিলায় নিজেদের সবটুকু গুছিয়ে নিচ্ছেন নদীপারের মানুষ।

পাউবোর উপবিভাগীয় প্রকৌশলী রাশেদীন ইসলাম জানান, উজানে ভারী বৃষ্টি হয়েছে। ব্যারাজের ৪৪টি গেট খুলে দিয়ে পানি নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বিকাল ৩টায় তিস্তার পানি বিপৎসীমার ৫ সেমি নিচ দিয়ে প্রবাহ রেকর্ড করা হয়েছে ৫২.৫৫ সেন্টিমিটার (স্বাভাবিক ৫২.৬০), যা বিপৎসীমার ৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত রেকর্ড করা হয়।

লালমনিরহাট জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বলেন, ‘তিস্তার পানি বিপৎসীমার ওপরে প্রবাহিত হয়ে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। আমরা জরুরি পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত রয়েছি।’

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর বলেন, ‘তিস্তার পানি বৃদ্ধিতে জেলার চর এলাকার মানুষ পানিবন্দি হয়েছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে পানিবন্দি পরিবারগুলোর তালিকা তৈরির জন্য। তালিকা অনুযায়ী খুব দ্রুত ত্রাণসামগ্রী দেওয়া হবে।’

রংপুর : ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে তিস্তার পানি বেড়ে রংপুরে বন্যা পরিস্থিতির তৈরি হয়েছে। গতকাল বিকাল ৩টায় পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হলেও দুর্ভোগ কমেনি। পানি নিষ্কাশনের জন্য ডালিয়া ব্যারাজের ৪৪টি গেট খুলে রাখা হয়েছে। রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, তিস্তার উজানে ভারতে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে বৃহস্পতিবার রাত থেকে পানি বাড়তে থাকে। বৃহস্পতিবার রাত ৯টা থেকে ১২টা পর্যন্ত তিস্তার পানি ডালিয়া পয়েন্টে বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এতে রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার নোহালী, আলমবিদিতর, কোলকোন্দ, লক্ষ্মীটারী, গজঘণ্টা, মর্ণেয়া, গঙ্গাচড়া সদর, কাউনিয়ার পাঞ্জরভাঙ্গা, পীরগাছার শিবচর, হাগুড়িয়াসহ তিস্তা তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল, চরের প্রায় ৪ হাজার পরিবার পান্দিবন্দি হয়ে পড়েছে। বন্যার হাত থেকে বাঁচতে গবাদি পশু-পাখি নিয়ে নদীর বাঁধে আশ্রয় নিয়েছে অনেক পরিবার। চরাঞ্চলগুলোয় বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। ডুবে গেছে আমনের খেত। রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান হাবীব বলেন, ‘আগামী ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টায় তিস্তার উজানের অংশ সিকিম ও গ্যাংটকে আবার মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের শঙ্কা রয়েছে। এতে তিস্তার পানি আবার বেড়ে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে। তিস্তা তীরবর্তী উপজেলা প্রশাসনসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের এ বার্তা পৌঁছানো হয়েছে।’

কুড়িগ্রাম : কয়েকদিনের ভারী বৃষ্টির কারণে কুড়িগ্রাম শহরের জজ কোর্ট, ডিসি অফিস, ফায়ার সার্ভিস অফিসসহ পাড়ামহল্লায় জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। উজানে বৃষ্টির কারণে দুই দিন ধরে ধরলা ও তিস্তা নদীর পানি বাড়ছে। ফলে দেখা দিয়েছে ভাঙন। মাত্র তিন দিনের তিস্তার প্রবল ভাঙনে উলিপুর উপজেলার বজরা ইউনিয়নের তিনটি গ্রামের আড়াই শতাধিক বাড়িঘর বিলীন হয়েছে। বিলীন হয়েছে কমিউনিটি ক্লিনিক, দুটি মসজিদ, একটি মন্দির, ঈদগাহ মাঠ, বজরা পশ্চিমপাড়া দাখিল মাদরাসা, পুরাতন বজরা বাজার ও বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ভাঙনকবলিতের অনেকেই আশ্রয় নিয়েছেন খোলা আকাশের নিচে।

সর্বশেষ খবর