সোমবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

পুলিশ পরিচয়ে দেড় হাজার ছিনতাই

নারীদের হয়রানি

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর কল্যাণপুর থেকে পুলিশ পরিচয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীকে অপহরণ করে দিয়াবাড়ীতে ছিনতাইয়ের ঘটনায় মূল অভিযুক্তসহ চারজনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) উত্তরা বিভাগ। তারা হলেন- মো. শাকিল আহম্মেদ রুবেল, মো. আকাশ শেখ, দেলোয়ার হোসেন ও মো. হাবিবুর রহমান। এর মধ্যে মূল অভিযুক্ত শাকিল। গ্রেফতারের সময় তাদের কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল,  দুই রাউন্ড গুলি, একটি ম্যাগাজিন, একটি ওয়াকিটকি, দুটি পুলিশ স্টিকারযুক্ত মোটরসাইকেল ও ছয়টি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়েছে।

গতকাল রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। তিনি বলেন, রুবেল একজন পেশাদার ছিনতাইকারী। সে এখন পর্যন্ত পুলিশ পরিচয়ে দেড় হাজার ছিনতাই করেছে। ছিনতাইয়ের পাশাপাশি সে নারীদের সঙ্গে অশালীন আচরণও করত। রুবেলের মূল টার্গেট ছিল বিশ্ববিদ্যালয়  ও কলেজের নারী শিক্ষার্থী।

ঢাবি শিক্ষার্থীকে তুলে নিয়ে ছিনতাইয়ের আগে রুবেল ১২ আগস্ট উত্তরা-১২ নম্বর সেক্টর থেকে একটি মোটরসাইকেল ছিনতাই করে। সেই মোটরসাইকেলে ‘পুলিশ’ স্টিকার লাগিয়ে ঢাবির শিক্ষার্থীকে অপহরণ করে উত্তরার দিয়াবাড়ীতে নিয়ে ছিনতাই করে। পরে ঢাবি ছাত্রীর ছিনতাই হওয়া ব্যাগটি উদ্ধার করা হয়। রুবেলের বাড়ি গাজীপুরে। তবে আরও দুটি ঠিকানা পাওয়া গেছে। সেগুলো আমরা যাচাই-বাছাই করছি। রুবেলের ঢাকায় কোনো বাসা নেই। সে রাজধানীর বিভিন্ন হোটেলে রুম ভাড়া নিয়ে অবস্থান করত। সে মোটরসাইকেল ছিনতাই কিংবা ভাড়া নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কিংবা কলেজের শিক্ষার্থীদের টার্গেট করে এসব ছিনতাই বা নারীদের সঙ্গে অশালীন আচরণ করত। ডিবি কর্মকর্তা হারুন বলেন, রুবেল এখন পর্যন্ত ঢাকাসহ সারা দেশে দেড় হাজারের বেশি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটিয়েছে। এ ছাড়া ছিনতাইয়ের পর অর্ধশত নারীর সঙ্গে অশালীন আচরণ করেছে। ছিনতাইয়ের পর মেয়েদের সঙ্গে সে অশালীন আচরণ করত এ জন্য যে, তারা যেন পরে লোক-লজ্জার ভয়ে কোনো কথা না বলে বা পুলিশের কাছে কোনো অভিযোগ না করে। ছিনতাইয়ের জন্য নির্জন স্থান বেছে নিত রুবেল। মেয়েদের মোটরসাইকেলে উঠিয়ে পূর্বাচলের ৩০০ ফিট বা উত্তরার দিয়াবাড়ী এলাকায় নিয়ে যেত। তার বিরুদ্ধে ছিনতাইয়ের ছয়টি মামলা বিভিন্ন থানায় রয়েছে। সে এসব মামলায় জেলও খেটেছে। আমরা অনুরোধ করব পুলিশ পরিচয় দিলে যেন তার মোটরসাইকেলে কেউ উঠে না যায়। তাকে যেন চ্যালেঞ্জ করে এবং তার পরিচয় জানার চেষ্টা করে। কোনো পুলিশ মোটরসাইকেলে কখনো আসামি নিয়ে যায় না। তাহলে রুবেলের মতো মানুষকে আটকানো যাবে। রুবেলের হাতে ওয়াকিটকি, পিস্তল ও গাড়িতে পুলিশের স্টিকার দেখে হয়তো ওই ছাত্রী তাকে পুলিশ কর্মকর্তা ভেবে নেয় এবং তার মোটরসাইকেলে উঠে যায়। তবে সে যদি আশপাশের লোকজনকে ডেকে তাকে চ্যালেঞ্জ করত, তাহলে হয়তো এমন ঘটনা ঘটত না। ডিবিপ্রধান হারুন আরও বলেন, ছিনতাই এবং শ্লীলতাহানি রুবেলের পেশা ও নেশা। ষষ্ঠ শ্রেণি পাস রুবেল পুলিশের ছদ্মবেশে এ কাজগুলো গত ১০ বছর ধরে করে আসছিল। রুবেলের শ্বশুরবাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ। সে এতটাই নিকৃষ্ট যে, শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে গিয়েও চুরি করেছে। ওই চুরি মামলায় সে জেলও খেটেছে। গ্রেফতার তিনজন রুবেলকে বিভিন্ন সময় নানাভাবে সহযোগিতা করত। কেউ মোটরসাইকেল ভাড়া করে এনে দিত, আবার কেউ অন্যভাবে সহযোগিতা করত। রুবেল ওয়াকিটকি, পিস্তল ও ডিএমপির লোগো কীভাবে পেল তা রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। গতকাল চারজনের রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হলে আদালত রুবেলের তিন দিন এবং অন্য তিনজনের এক দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

সর্বশেষ খবর