বুধবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা
মন্ত্রণালয়ের তদন্ত প্রতিবেদন

প্রাইভেটেই বেশি মনোযোগী ছিলেন হলিক্রসের শিক্ষক

নিজস্ব প্রতিবেদক

হলিক্রস স্কুল অ্যান্ড কলেজের উচ্চতর গণিতের শিক্ষক শোভন রোজারিও প্রাইভেট পড়ানোতেই বেশি মনোযোগী ছিলেন। অনুত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের শিখন ঘাটতি পূরণে তিনি ছিলেন উদাসীন। ওই প্রতিষ্ঠানের নবম শ্রেণির ছাত্রী পারপিতা ফাইহার মাকে শোভন রোজারিও ফোন করে মেয়েকে প্রাইভেট পড়ানোর প্রস্তাব দিতেন। পারপিতা আত্মহত্যার ঘটনা খতিয়ে দেখতে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদফতরের (ডিআইএ) তদন্ত প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে গতকাল এ প্রতিবেদন পাঠানো হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, অসুস্থতা নিয়ে দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল পারপিতা। অন্যান্য বিষয়ে ভালো ফল এলেও উচ্চতর গণিত, গণিত ও জীববিজ্ঞান বিষয়ে ফেল করে সে। শিক্ষার্থীরা যেন ফলাফল খারাপ করে শিক্ষকের কাছে প্রাইভেট পড়তে যায় সে কারণে উদ্দেশ্যমূলক পরীক্ষার প্রশ্নপত্র কঠিন করার বিষয়টি উঠে আসে।

স্কুলছাত্র পারপিতা ফাইহা রাজধানীর তেজগাঁওয়ের ১২তলা ভবনের ছাদ থেকে গত ২৩ আগস্ট বিকালে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করে। তদন্ত প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, পারপিতা ফাইহা রাজধানীর মনিপুরীপাড়ার একটি স্কুল থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ালেখা করে। ওই শ্রেণিতে সে মেধাবৃত্তি পেয়েছিল। এরপর হলিক্রস স্কুল অ্যান্ড কলেজে ভর্তি হয়। এখানে সে বরাবর ভালো ফলাফল করলেও নবম শ্রেণিতে প্রথম ও দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষায় জীববিজ্ঞান, উচ্চতর গণিত ও গণিতে ফেল করে। প্রথম ও দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষায় উচ্চতর গণিতের প্রশ্ন অনেক কঠিন করা হয়েছিল। এমনই কঠিন করা হয়েছিল যে, সংশ্লিষ্ট বিষয়ের শিক্ষকের পক্ষে তা তাৎক্ষণিক সমাধানও প্রায় অসম্ভব ছিল।

প্রথম সাময়িক পরীক্ষায় নবম শ্রেণির দুই শাখার ১০৩ শিক্ষার্থীর মধ্যে ৫২ জন ফেল করেছিল। দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষায় ফেল করেছিল ৪০ জন। প্রথম সাময়িক পরীক্ষার হতাশাজনক ফলের পরও কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের অবস্থার উন্নয়নে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়নি। যে কারণে দ্বিতীয় সাময়িক পরীক্ষার ফলেও আশানুরূপ উন্নতি হয়নি।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, হলিক্রস স্কুলের পাস ও ফেল করা শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের আলাদা সাক্ষাৎকারের জন্য ডাকা হয়। এটি শিক্ষার্থীদের বাড়তি চাপ তৈরি করে। প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত অভিভাবক সমাবেশ করা হয় না। বিভিন্ন গণমাধ্যমে ‘পারপিতার সৎ মা নির্যাতন করতেন’ এমন সংবাদ প্রকাশিত হলেও শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিবেদনে বলা হয়, পারপিতার কোনো সৎ মা নেই।

প্রতিবেদনে পিছিয়ে পড়া শিক্ষার্থীদের নিরাময়মূলক ক্লাসের ব্যবস্থা, এনসিটিবির সিলেবাস ও শিক্ষা বোর্ডের প্রশ্ন প্রণয়ন নীতিমালা অনুসরণ, স্কুলে অভিজ্ঞ ও সিনিয়র শিক্ষকদের মাধ্যমে প্রশ্নপত্র মডারেশন কমিটি থাকা, নিয়মিত অভিভাবক সমাবেশ করা, নিজ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়ানো বন্ধের সুপারিশ করা হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর