বৃহস্পতিবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

ভাঙনে দিশাহারা নদীপাড়ের মানুষ

♦ মানিকগঞ্জে বিলীন শত বছরের গরুর হাট ♦ শেরপুরে বসতবাড়ি ফসলি জমি নদীগর্ভে

প্রতিদিন ডেস্ক

ভাঙনে দিশাহারা নদীপাড়ের মানুষ

মানিকগঞ্জের ঘিওরে ইছামতী নদীর ভাঙনে দিশাহারা এলাকাবাসী -বাংলাদেশ প্রতিদিন

নদীভাঙনে লণ্ড ভণ্ড  হয়ে গেছে দেশের বিভিন্ন এলাকা। এর মধ্যে ইছামতী নদীর ভাঙনে মানিকগঞ্জের শত বছরের ঐতিহ্য ঘিওর গরুর হাট বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনঝুঁকিতে রয়েছে নদীর ওপর নির্মিত পাকা সেতু, বাড়িঘর দোকানপাটসহ বহু স্থাপনা। এ ছাড়া শেরপুরের নালিতাবাড়ী পৌর শহরের তারাগঞ্জের আড়াইআনী এলাকায় বিশাল এলাকাজুড়ে দুই দফা পাহাড়ি ঢলে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে কয়েকটি বসতবাড়ি ও স্থাপনাসহ বিস্তীর্ণ ফসলি মাঠ। এতে দিশাহারা হয়ে পড়েছেন নদীপাড়ের মানুষ।

মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, জেলার ঐতিহ্যবাহী ঘিওর গরুর হাটটি প্রায় সম্পূর্ণ নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। এ ছাড়া নদীপাড়ের অনেক বাড়িঘর নদীভাঙনের মুখে রয়েছে। স্থানীয় হাজি মো. বাবুল বলেন, ইছামতী নদীতে ঘিওর থেকে বেগুননারচি হয়ে হিজুলিয়া পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার এলাকাজুড়ে এবার ভাঙন দেখা দিয়েছে। প্রতি বছর নদী ভাঙলেও এবারের মতো এতটা ভাঙেনি। ছয় দিনের মধ্যে গরুর হাটটি নদীতে হারিয়ে গেল। এখন দুই পাড়ের লোকজন ভাঙনের ভয়ে রাত জেগে বসে থাকে। গরু বেপারি তোয়াব শেখ বলেন, এ হাটে আমার বাপ-দাদা গরুর ব্যবসা করেছে। আমি প্রায় ৫০ বছর ধরে গরুর ব্যবসা করি। অন্য কোনো জায়গায় হাটটি চালু না করলে খামারি ও ব্যবসায়ীরা সমস্যায় পড়বেন। নদীভাঙনের শিকার কামনা রানী সূত্রধর বলেন, আমাদের ছোট্ট বাড়িটি নদীতে ভেঙে যাচ্ছে। এই সম্বলটুকু হারিয়ে গেলে ছেলে মেয়ে নিয়ে কোথায় দাঁড়াব জানি না। ঘিওর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হামিদুর রহমান জানান, প্রতি বছরই ঘিওরের এই ইছামতি নদীতে ভাঙন দেখা দেয়। সমস্যা চিহ্নিত করে আমরা পানি উন্নয়ন বোর্ডে চিঠি দিয়েছিলাম। তারা কাজ শুরু করেছে। বালু ফেলে স্থায়ী সমাধান হবে না। স্থায়ী সমাধানের জন্য আড়াই কোটি টাকার একটি প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। অনুমোদন হলে কাজ শুরু করা হবে। শেরপুর প্রতিনিধি জানান, জেলার নালিতাবাড়ী পৌর শহরের তারাগঞ্জ আড়াইআনী বিশাল এলাকাজুড়ে দুই দফা পাহাড়ি ঢলে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে কয়েকটি বসতবাড়ি ও স্থাপনাসহ বিস্তীর্ণ ফসলি মাঠ। পাহাড়ি ঢলে নদীর উত্তরপাড়ের অঞ্চলজুড়ে দেখা দিয়েছে বিশাল ভাঙন। এতে ভাঙনের কবলে পড়েছে দুটি রাইসমিল, কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বসতবাড়ি ও স্থাপনা। কয়েক বছর ধরেই এ অঞ্চল ভাঙছেই। এতে ওই অঞ্চলের মানুষদের বেশ ভোগাচ্ছে ভোগাই নদী। নদী ভাঙনের আশঙ্কায় আতঙ্কে রয়েছেন স্থানীয়রা। ভাঙনকবলিত লোকজন জানান, এবার বর্ষার শুরুতে দুই দফা পাহাড়ি ঢলে নদীতে ব্যাপক স্রোতের সৃষ্টি হয়। এতে নালিতাবাড়ী পৌর শহরের ভোগাই নদীর আশপাশে দেখা দেয় ভাঙন। দুই দফা পাহাড়ি ঢল আর নদীভাঙনে বিলীন হয় কয়েকটি বসতবাড়ি ও স্থাপনাসহ বিস্তীর্ণ ফসলের মাঠ। সম্প্রতি নদীভাঙন বৃদ্ধি পাওয়ায় বেশ ঝুঁকিতে আছেন নদীপাড়ের মানুষ। তারাগঞ্জ ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষ আবদুল জব্বার জানান, নদীর দক্ষিণ পাশে পানি উন্নয়ন বোর্ড বাঁধ নির্মাণ করায় ওই পাশে ভাঙন রোধ হয়েছে। কিন্তু উত্তর পাশে বেড়েছে ভাঙনের মাত্রা। এভাবে নদীভাঙন অব্যাহত থাকলে এখানকার দুটি রাইস মিল ও তারাগঞ্জ ফাজিল মাদরাসা ভবনসহ বেশ কিছু বাড়ি নদীভাঙনে বিলীন হবে। পানিতে নষ্ট হবে কয়েক শ একর আবাদি জমি। এখনি ব্যবস্থা না নিলে ক্ষতির পরিমাণ বাড়বে। শেরপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তা উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. শাজাহান বলেন, ভোগাই নদীর ভাঙন ঠেকাতে কারিগরি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর