বৃহস্পতিবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

বেপরোয়া হর্ন, শব্দে সর্বনাশ

শিশু, অন্তঃসত্ত্বা ও হৃদরোগীদের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ, প্রসূতি মায়ের সন্তানসহ মৃত্যুর রেকর্ডও রয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক

বেপরোয়া হর্ন, শব্দে সর্বনাশ

দেশে শব্দ দূষণের ৭০ শতাংশ উৎস যানবাহন। শব্দ দূষণের ফলে ১১ দশমিক ৮ শতাংশ ট্রাফিক পুলিশের শ্রবণশক্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সাধারণভাবে মোবাইল ফোনে কথা শুনতে অসুবিধা হয় তাদের ১৫ দশমিক ৫ শতাংশের। কয়েক ঘণ্টা দায়িত্ব পালন করলে ৮ দশমিক ২ শতাংশ ট্রাফিক পুলিশ ঘূর্ণিরোগ, মাথা বনবন করা, বমি ভাব ও ক্লান্তির সমস্যায় ভোগেন।

স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) সমীক্ষায় এ চিত্র উঠে এসেছে।  হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে গতকাল শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণে সচেতনতামূলক সভায় এ তথ্য জানানো হয়। সভায় জানানো হয়, দেশে হাইড্রোলিক হর্ন নিষিদ্ধ থাকলেও ২০ থেকে ২৫ শতাংশ যানবাহনে অবৈধভাবে এ হর্ন ব্যবহার করা হচ্ছে। চোরাইপথে আসা ও স্থানীয়ভাবে হাইড্রোলিক হর্নে উৎপাদন ঠেকাতে না পারলে সমস্যা দিন দিন বাড়তে থাকবে। আরও জানানো হয়, অনুমোদিত মাত্রার অতিরিক্ত শব্দ উৎপন্ন দণ্ডনীয় অপরাধ। এ কারণে মানুষ শ্রবণশক্তি হ্রাস পায়, চাপা উত্তেজনা, মানসিক চাপ, বিষণ্নতায় ভোগে ও সামাজিক কর্মকাণ্ড পরিহার করে। উচ্চ শব্দ শিশু, অন্তঃসত্ত্বা মা ও হৃদরোগীদের জন্য মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। শব্দ দূষণের কারণে অন্তঃসত্ত্বা মায়ের সন্তানসহ মৃত্যুর রেকর্ডও রয়েছে। উচ্চ শব্দে বিরক্তি, নেতিবাচকতা, রাগ ও ক্লান্তি দেখা দেয়, স্মৃতিশক্তি ও নতুন কিছু শেখার ক্ষমতা কমে যায়, ঘুমের বিঘ্ন ঘটে এবং আকস্মিক উচ্চ শব্দে মানবদেহের রক্তচাপ এবং হৃদকম্পন বাড়িয়ে দেয়, মাংসপেশির সংকোচন করে, পরিপাকে বিঘ্ন ঘটায়, শিরা ও স্নায়ুতন্ত্রের ওপর প্রচণ্ড চাপ দেয়। ক্যাপসের গবেষণায় হবিগঞ্জ শহরের তিনটি স্থান শব্দ দূষণে রেড জোনে স্থান পেয়েছে। শব্দ দূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা অনুযায়ী শব্দের মানমাত্রা ৭০ ডেসিবেল হওয়ার কথা থাকলেও এ শহরের বেবিস্ট্যান্ড মোড়ে ৮৫, নতুন বাসস্ট্যান্ড ৮৩ এবং কালীবাড়ি ক্রস রোডে রয়েছে ৮০ ডেসিবেল। একই শহরের পোস্ট অফিস রোডে ৫৩, পুরান মুন্সেফ রোডে ৫৪ এবং সমুর্তা রাইস মিল এলাকায় মানমাত্রা ৫৭ ডেসিবেল হওয়ায় এ এলাকাগুলো স্থান পেয়েছে গ্রিন জোনে। 

শব্দ দূষণ নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত ও অংশীদারিত্বমূলক প্রকল্পের আওতায় এ মতবিনিময় সভা বাস্তবায়ন করে পরিবেশ অধিদফতর। সার্বিক সহযোগিতায় ছিল ইকিউএমএস কনসালটিং লিমিটেড ও বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস)। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক ইশরাত জাহান ও সভাপতিত্ব করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মিন্টু চৌধুরী। এ সময় হবিগঞ্জ ২৫০ শয্যা আধুনিক জেলা সদর হাসপাতাল এলাকায় শব্দের মানমাত্রা নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেন জেলা প্রশাসক। সভায় বক্তব্য দেন স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার, বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক নাসির আহমেদ পাটোয়ারী, হবিগঞ্জ পরিবেশ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মিজানুর রহমান, ক্যাপসের গবেষক তৌফিকী ইলাহি হোসেন ও রিয়াজুল ইসলাম, বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) হবিগঞ্জের সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল প্রমুখ। 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর