শুক্রবার, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

ঢাকঢোলের খোল বানিয়েই জীবিকা

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি

ঢাকঢোলের খোল বানিয়েই জীবিকা

সনাতন ধর্মাবলম্বীদের দরজায় কড়া নাড়ছে প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। মণ্ডপে মণ্ডপে বাদ্যযন্ত্র, ঢাকঢোলের শব্দ আর ধূপের গন্ধে মেতে উঠবেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা। দুর্গাপূজা সামনে রেখে ব্যস্ত সময় পার করছেন টাঙ্গাইলের বাদ্যযন্ত্র কারিগররা। জেলা শহর থেকে শুরু করে উপজেলা ও গ্রামগঞ্জে তাঁরা বাদ্যযন্ত্র তৈরিতে ব্যস্ত থাকলেও এখন আর সেই ব্যস্ততা পরিলক্ষিত হয় না। তবে কিছু কারিগর ঐতিহ্য ধরে রাখতে পূর্বপুরুষের পেশা টিকিয়ে রাখার চেষ্টা করছেন। আধুনিক বাদ্যযন্ত্রের কারণে উৎসব-অনুষ্ঠানে এখন আর ঢোলের তেমন কদর না থাকলেও পূজা-পার্বণে এখনো কদর রয়েছে। পূজার আরতিতে ঢোলের কোনো বিকল্প নেই। তাই বছরের এ সময়টায় ব্যস্ত থাকেন ঢুলি থেকে শুরু করে ঢোল-খোলের কারিগররা। পূজা ছাড়াও বিভিন্ন লোকসংগীতের আসরে ঢাকঢোল অন্যতম বাদ্যযন্ত্র। সরেজমিন দেখা যায়, নাগরপুরের সদর ও সহবতপুর ইউনিয়নের ঋষিপাড়ায় ঢাকঢোল তৈরিতে ব্যস্ত কারিগররা। দম ফেলার ফুরসত নেই। কাঠের খুটখাট শব্দে মুখর বাড়ির উঠান। ঢাকঢোলের জন্য খোল তৈরি, রং করা, চামড়া লাগানো এবং মেরামতে ব্যস্ত তারা। নাগরপুর সদর ইউনিয়নের ঋষিপাড়ার কারিগর নিত্য বাদ্যকর বলেন, ‘পূজায় ঢাকঢোলের বাজনা অপরিহার্য। তাই ঢাকঢোল ছাড়া পূজা-অর্চনার কথা ভাবাই যায় না। আগের দিনের মতো ঢাকঢোলের তেমন চাহিদা নেই। যুগ পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে হারিয়ে যেতে বসেছে ঢাকঢোল, খোল, তবলা। তবে পূজা উপলক্ষে ঢাকঢোলের চাহিদা কিছুটা বেড়েছে। তিন পুরুষ ধরে এ পেশায় জড়িত। অনেক কষ্ট করে বাপ-দাদার পেশার হাল ধরে রেখেছি। ঢাকঢোলের খোল বানিয়েই চলে জীবিকা।’ একাধিক কারিগর জানান, বছরে তিন মাস (আশ্বিন, কার্তিক, অগ্রহায়ণ) কাজের চাপ বেশি থাকে। দুর্গাপূজার জন্য কিছু কাজ করছি। এ ব্যবসায় এখন যা আয় হয় তা দিয়ে পরিবারের ভরণপোষণ করা কষ্টসাধ্য। গানবাজনা, যাত্রাসহ আচার-অনুষ্ঠান কম হওয়ায় ঢোলের চাহিদাও কমে যাচ্ছে দিন দিন। তাই সংসারের খরচ মেটানো কঠিন হয়ে পড়েছে। বাদ্যযন্ত্র অনুরাগী নাগরপুর সরকারি কলেজের সাবেক সহকারী অধ্যাপক লক্ষ্মীকান্ত সাহা বলেন, ‘আমাদের প্রায় সবারই পূজার সানাইয়ে মন কেমন করে ওঠে। শুধু সানাই নয়, জোড়া কাঠিতে ঢাক কিংবা কাঁসরের ওপর একটানা একটি কাঠির তিনটি শব্দ সুরের যে মূর্ছনা সৃষ্টি করে এসেছে তা বাঙালির একান্ত নিজের সুর। এ সুরের ইন্দ্রজাল ছিঁড়ে আমাদের বাঙালির গানে প্রবেশ করেছে গিটার, প্যাডড্রাম ইত্যাদি বাদ্যযন্ত্র।

তবে এ কথাও সত্য, আমাদের দেশজ যন্ত্রে সুর মে স্তিমিত হয়ে আসার অন্যতম কারণ এগুলো সঠিকভাবে বাজানো এবং সঠিক সংগীতের উপযোগী করে তৈরি করা লোকের অভাব। তাই ঢাকঢোল-মিশ্রিত সংগীতের জন্য হৃদয় ব্যাকুল হলেও একদিন সত্যিই স্তিমিত হয়ে যাবে দেশজ বাদ্যযন্ত্রের সুর।’

জেলা শিল্পকলা একাডেমির প্রশিক্ষক শিল্পী ইব্রাহিম মিয়া বলেন, ‘ঢুকি, তবলা, ঢোল এ বাদ্যযন্ত্রগুলোর আলাদা ঐতিহ্য রয়েছে। এখনো অনেক গান রয়েছে যার সঙ্গে ঢোলের সম্পর্ক নিবিড়। ঢাকঢোল বাজাইও না। ঢাকঢোল বাজাইলে মনে পইড়া যায় একদিন বাঙালি ছিলাম রে...।’

সর্বশেষ খবর