সোমবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

ভুয়া কাগজে যত জামিন জালিয়াতি

মাহবুব মমতাজী

ভুয়া কাগজে যত জামিন জালিয়াতি

জামিন জালিয়াতি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। শাস্তির বিধান জানা সত্ত্বেও এমন ঘটনা অনেকগুলো ঘটেছে। ভুয়া নথি দাখিল করে জামিন আবেদনের ঘটনায় করা ২৭টি মামলার তদন্ত করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। এর মধ্যে ১৮টি মামলার তদন্ত করে সিআইডির ঢাকা মেট্রো দক্ষিণ এবং ৯টির তদন্ত করে সিরিয়াস ক্রাইম বিভাগ। সবগুলোই রাজধানীর শাহবাগ থানায় করা। আটটি মামলার তদন্ত এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। সিরিয়াস ক্রাইমে তদন্তে থাকা মামলাগুলোর মধ্যে আছে- ২০১৭ সালে ৮ আগস্ট শাহবাগ থানার মামলা। মামলা নম্বর-১৩। একই বছর ২০ সেপ্টেম্বরের আরেকটি মামলা। মামলা নম্বর-২৬। ২০১৫ সালের ১৩ আগস্টের একটি মামলা। মামলা নম্বর-২২। একই বছর ২০ মে ও ৩ ডিসেম্বরের মামলা। মামলা দুটির নম্বর-২১ ও ২। ২০১৪ সালের ৯ ডিসেম্বরের দুটি মামলা, ১৭ জানুয়ারি ও ১০ ফেব্রুয়ারির দুটি মামলা। মামলাগুলোর নম্বর যথাক্রমে-১৫, ১৬, ২১ ও ১৮।

এ ছাড়া ঢাকা মেট্রো দক্ষিণ বিভাগ যেসব মামলার তদন্ত করে তা হলো-২০১৯ সালের ২৬ আগস্ট করা মামলা। এটি মামলার ঘটনা প্রতারণামূলকভাবে আদালতের আদেশ জালিয়াতি করে আসল হিসেবে ব্যবহার করার ঘটনায়। একই জালিয়াতির অভিযোগে একই বছর ২০ আগস্ট করা মামলাটিরও তদন্ত করে দক্ষিণ বিভাগ। একই বছর ২৪ মে এবং ২০১৮ সালের ৩১ জুলাইয়ের মামলা দুটিও একই অভিযোগের। ২০১৮ সালের ৩ এপ্রিল জালিয়াতির ঘটনায় আরেকটি মামলা হয়। একই বছর ১৮ মার্চ আদালতের নথি জালিয়াতি করে তা আসল হিসেবে ব্যবহারের অভিযোগে মামলা হয়। একই জালিয়াতির ঘটনায় একই বছর ২৪ এপ্রিল আরেকটি মামলা হয়। এর আগে ২০১৭ সালের ২৪ অক্টোবর স্বাক্ষর জাল করার ঘটনায় মামলা হয়।

গত বছর ৪ ফেব্রুয়ারির মামলাটি হয় পরস্পর যোগসাজশে প্রতারণামূলকভাবে টাকা জমার চালান কপি জাল এবং তা আদালতে আসল হিসেবে ব্যবহার করার ঘটনায়। গত বছর ১১ এপ্রিলের মামলাটি হয় পরস্পর যোগসাজশে জামিন লাভের জন্য জালিয়াতি ও প্রতারণার মাধ্যমে সইমুহুরি নকল তৈরির ঘটনায়। একই বছর ১৩ জানুয়ারি বিশ্বাসভঙ্গ করে আদালতের নথি ও দলিল জালিয়াতি করে তা আসল হিসেবে ব্যবহারের অভিযোগে মামলা হয়। একই অভিযোগে গত বছর ১৫ ফেব্রুয়ারি আরেকটি মামলা হয়। ২০১৯ সালের ২৯ ডিসেম্বর মামলাটি হয় এজাহারের কপি জালিয়াতির ঘটনায়। একই বছর ২৭ আগস্ট একই অভিযোগে আরেকটি মামলা হয়। ২০২০ সালের ৪ নভেম্বর আরেকটি মামলা হয়েছে সরকারি নথি জাল-জালিয়াতি করে স্বাক্ষর ও সিল নকলের অভিযোগে। একই অভিযোগে একই দিনে আরেকটি মামলা হয়েছে।

সিআইডির তদন্ত-সংশ্লিষ্টরা জানান, যেসব মামলায় নিম্ন আদালতে আসামিদের জামিন হয় না, ওই সব মামলার কাগজপত্র জালিয়াতি করে উচ্চ আদালতের আইনজীবীদের মাধ্যমে জামিনের ব্যবস্থা করা হয়। আর এ জন্য আসামিপক্ষের লোকজনের কাছে ৫ লাখ থেকে শুরু করে আরও বেশি টাকা নেওয়া হয়। মূলত বিভিন্ন মামলায় দন্ডিত আসামিরা জামিন নেওয়ার ক্ষেত্রে মামলার ভুয়া এজাহার কিংবা এফআইআর, চার্জশিট, জব্দ তালিকা দাখিল করেন। মামলার এজাহারের কিছু স্পর্শকাতর শব্দ বদল করে তারা উচ্চ আদালতে তা জমা দিয়ে জামিন নেন। তবে ২০১৪ সালের একটি মামলায় ২০১৮ সালে হাই কোর্ট থেকে জালিয়াতি করে জামিন নেওয়ার পরই নড়েচড়ে বসেন উচ্চ আদালত। পরে জালিয়াতি ঠেকাতে উচ্চ আদালত সরাসরি হস্তক্ষেপ করেন। সিআইডি সূত্র জানায়, ২০১৮ সালে ২০ হাজার পিস ইয়াবা জব্দ মামলায় আসামি সেলিম কীভাবে জামিন পেলেন এবং এর সঙ্গে কারা জড়িত তা তদন্ত করতে সিআইডিকে নির্দেশ দিয়েছিলেন উচ্চ আদালত। ২০১৪ সালের অস্ত্র উদ্ধার-সংক্রান্ত ঘটনায় রাজবাড়ী থানায় একটি মামলা হয়। এ মামলায় পূর্ববাংলার চরমপন্থি দলের নেতা ইয়ার আলীকে অস্ত্রসহ গ্রেফতার করে পুলিশ। নিম্ন আদালতে জামিন না পাওয়ায় মামলার এজাহার, জব্দ তালিকা ও অভিযোগপত্র জালিয়াতি করে নতুনভাবে তৈরি করে উচ্চ আদালতে জামিনের আবেদন করেন আসামি। এরপর ছয় মাসের অন্তর্বর্তীকালীন জামিন নেন ইয়ার আলী। পরে ২০২০ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি জামিন জালিয়াতচক্রের হোতাসহ তিনজনকে গ্রেফতার করে সিআইডি। এরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ৫০টি আলোচিত মামলার আসামিকে জামিন জালিয়াতি করে কারামুক্ত করার কথা সিআইডির কর্মকর্তাদের কাছে স্বীকার করেন।

সর্বশেষ খবর