সোমবার, ১২ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

প্লাবিত সুন্দরবন উত্তাল সাগর

নিম্নচাপের প্রভাবে বেড়েছে নদ-নদীর পানি

প্রতিদিন ডেস্ক

প্লাবিত সুন্দরবন উত্তাল সাগর

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের কারণে জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয়েছে সুন্দরবনের সব থেকে উঁচু এলাকা করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন ও পর্যটন কেন্দ্র। নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে চার থেকে পাঁচ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে। সাগর উত্তাল থাকায় নিরাপদ আশ্রয়ে চলে গেছে শত শত ট্রলার। বাগেরহাটে ভারী বৃষ্টিসহ ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাচ্ছে। মোংলা বন্দরকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অফিস। বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের ৯টি নদীর পানি প্রতিদিন দুইবার বিপৎসীমা অতিক্রম করছে। গত শনিবার রাত থেকে বিরামহীন বৃষ্টি হচ্ছে। আরও দুই দিন এই বৃষ্টি অব্যাহত থাকার পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ।

বাগেরহাট : বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের কারণে জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয়েছে সুন্দরবনের সব থেকে উঁচু এলাকা করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন ও পর্যটন কেন্দ্র। গতকাল দুপুরে পূর্ণিমার স্বাভাবিক জোয়ারের তুলনায় তিন ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয় করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন ও পর্যটন কেন্দ্রটি। এই অবস্থায় করমজলে আটকা পড়েছেন অনেক পর্যটক। সকাল থেকেই সুন্দরবনের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে ভারী বৃষ্টিসহ ঝড়ো হাওয়া। বঙ্গোপসাগর উপকূলে সুন্দরবনের কটকা, কচিখালী, দুবলা, বঙ্গবন্ধু আইল্যান্ডসহ সুন্দরবনের নিম্নাঞ্চল চার থেকে পাঁচ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয়েছে। করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন ও পর্যটন কেন্দ্রের প্রাণীগুলো এখনো নিরাপদ রয়েছে। তবে সুন্দরবনের নিম্নাঞ্চলে থাকা বাঘ, হরিণসহ অন্যান্য প্রাণীর ভাগ্যে কী ঘটেছে তা নিশ্চিত করে বলতে পারেনি বন বিভাগ। বঙ্গোপসাগর উত্তাল থাকায় কয়েক শ ফিশিং ট্রলার কটকা, কচিখালী, দুবলাসহ ভেদাখালী, ভাঙ্গার খাল ও মেহেরআলী খালসহ বিভিন্ন খালে আশ্রয় নিয়েছে। দুপুর থেকে বাগেরহাটের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বিপৎসীমার তিন থেকে চার ফুট ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সকাল থেকে জেলাজুড়ে ভারী বৃষ্টিসহ ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাচ্ছে। নিম্নচাপের কারণ মোংলা বন্দরকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অফিস। বরিশাল : বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের ৯টি নদীর পানি প্রতিদিন দুইবার বিপৎসীমা অতিক্রম করছে। বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের হাইড্রোগ্রাফি বিভাগ ৯টি নদীর ৯টি স্থানে পানির উচ্চতা পরিমাপ করে এই তথ্য জানিয়েছে। এদিকে নিম্নচাপের প্রভাবে বরিশালে গত শনিবার রাত থেকে বিরামহীন বৃষ্টি হচ্ছে। আরও দুই দিন এই বৃষ্টি অব্যাহত থাকার পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ। অপরদিকে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে সমুদ্র বন্দরে ৩ নম্বর স্থানীয় সংকেত এবং নদী বন্দরে ১ নম্বর সতর্কতা সংকেত জারি করা হয়েছে। গতকাল রবিবার বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের হাইড্রোগাফি বিভাগের পরিসংখ্যান অনুযায়ী আগের দিনের চেয়ে কীর্তনখোলা নদীর পানি ১৩ সেন্টিমিটার বেড়ে ২.৭০ মিটার উচ্চতায় প্রবাহিত হয়েছে।

কীর্তনখোলা নদীর পানির বিপৎসীমা ২.৫৫ মিটার। ভোলা খেয়াঘাট এলাকায় তেঁতুলিয়া নদীর পানি ৩.০৫ মিটার উচ্চতায় প্রবাহিত হয়। তেঁতুলিয়া নদীর পানির বিপৎসীমা ২.৯০ মিটার। দৌলতখান পয়েন্টে মেঘনা ও সুরমা নদীর পানি গতকাল ৪.১৮ মিটার উচ্চতায় প্রবাহিত হয়। দৌলতখান পয়েন্টে এই দুই নদীর পানির বিপৎসীমা ৩.৪১ মিটার। এই দুই নদীর তজুমুদ্দিন পয়েন্টে গতকাল ৩.৮০ মিটার উচ্চতায় পানি প্রবাহিত হয়েছে। দৌলতখান পয়েন্টে এই দুই নদীর পানির বিপৎসীমা ২.৮৩ মিটার। বিষখালী নদীর ঝালকাঠি পয়েন্টে গতকাল ২.৩০ মিটার উচ্চতায় পানি প্রবাহিত হয়। ঝালকাঠি পয়েন্টে বিষখালী নদীর বিপৎসীমা ২.০৮ মিটার। একইভাবে বুড়িশ্বর ও পায়রা নদীর পানি পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ পয়েন্টে গতকাল বিপৎসীমার (২.৮১ মিটার) ৩৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে, বিষখালী নদীর বরগুনা পয়েন্টে বিপৎসীমার ( ২.৮৫ মিটার) ৪০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে, বিষখালী নদীর পাথরঘাটা পয়েন্টে বিপৎসীমার (২.৮৫ মিটার) ৯০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে, পিরোজপুরের বলেশ্বর নদীর পানি বিপৎসীমার (২.৬৮ মিটার) ১৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে এবং উমেদপুর পয়েন্টে কঁচা নদীর পানি বিপৎসীমার (২.৬৫ মিটার) ২৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়। বরগুনা পয়েন্টে বিষখালী নদীর পানি ছাড়া অন্য সব নদীর পানি আগের দিনের চেয়ে গতকাল রবিবার আরও বেশি উচ্চতায় প্রবাহিত হয়েছে। নদ-নদীতে পানি বেড়ে যাওয়ায় নদী তীরবর্তী এবং নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হচ্ছে। আবার ভাটির সময় পানি নেমে যাচ্ছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড বরিশাল জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. নুরুল ইসলাম সরকার বলেন, গভীর সমুদ্রে সৃষ্ট নিম্নচাপের প্রভাবে দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বেড়েছে। এই পানি বৃদ্ধির হার আগামী ১-২ দিন অব্যাহত থাকতে পারে। এরপর পানি ধীরে ধীরে কমতে থাকবে বলে তারা ধারণা করছেন।

নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করায় নদী-তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল এবং চরাঞ্চলে জোয়ারের পানি প্রবেশ করেছে। আবার ভাটির সময় পানি নেমে যাচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত বিভাগের কোথাও বেড়িবাঁধে সমস্যা হয়নি বলে জানিয়েছে বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ড।

পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার বেড়িবাঁধের বাইরে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। শনিবার রাত থেকে উপকূলীয় এলাকায় মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর