বৃষ্টি, পূর্ণিমার জো আর নিম্নচাপের প্রভাবে বঙ্গোপসাগর উত্তাল থাকায় প্লাবিত হয়েছে উপকূলীয় পটুয়াখালীর অর্ধশত চর, বাগেরহাটে শতাধিক গ্রাম, সাতক্ষীরায় ২০০ বিঘা মাছের ঘের, ঝালকাঠিতে অর্ধশত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, আশ্রয়ণের ঘরসহ ২৭টি গ্রাম ও বরগুনার নিম্নাঞ্চল। হুমকিতে রয়েছে সুন্দরবনের ৩৭৫ প্রজাতির বন্যপ্রাণী। নোয়াখালী ও কক্সবাজারে সেন্টমার্টিন দ্বীপের সঙ্গে নৌচলাচল বন্ধ রয়েছে। ভোলার ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দি রয়েছে।
পটুয়াখালী প্রতিনিধি জানান, বঙ্গোপসাগর উত্তাল থাকায় নদ-নদীর পানি বেড়েছে। উপকূলীয় এলাকা পানিতে থই থই করছে। জেলায় গতকাল ভোর থেকে মাঝারি ও ভারী বৃষ্টি হয়েছে। পটুয়াখালী ও খেপুপাড়া আবহাওয়া অফিস প্রায় ২০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে। আবহাওয়া অধিদফতরের পক্ষ থেকে পায়রা বন্দরকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। সাগরে মাছ ধরা সব ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। খেপুপাড়া রাডার স্টেশন কর্মকর্তা মো. ফিরোজ কিবরিয়া জানান, সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ১১০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। বাগেরহাট প্রতিনিধি জানান, বাগেরহাট শহর, মোংলা ও মোরেলগঞ্জ পৌরসভাসহ মোরেলগঞ্জ, মোংলা, রামপাল, বাগেরহাট সদর, কচুয়া, চিতলমারী ও শরণখোলা উপজেলার নিম্নাঞ্চলে শতাধিক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। জেলার কয়েক হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। জলোচ্ছ্বাসে কয়েক হাজার মাছের খামার ও পুকুর তলিয়ে মাছ ভেসে গেছে। নোয়াখালী প্রতিনিধি জানান, সকাল থেকে বৃষ্টি হচ্ছে। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় হাতিয়ার সঙ্গে সারা দেশের নৌ যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। পিরোজপুর প্রতিনিধি জানান, ইন্দুরকানী উপজেলার সাইদখালী, কালাইয়া, চরখালী, মঠবাড়িয়া উপজেলার বড় মাছুয়া, মাঝেরচর, বেতমোড়, ভাণ্ডারিয়া উপজেলার তেলীখালী, চরখালী এবং সদর উপজেলার শারিকতলা এলাকায় এক থেকে দেড় ফুট পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। বরগুনা প্রতিনিধি জানান, একটানা ৩/৪ দিন বরগুনার বিষখালী, বুড়ীশ্বর ও খাকদন নদীতে জোয়ারে পানির চাপ বৃদ্ধি পাওয়ায় বরগুনার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। জোয়ারের পানিতে বড়ইতলা-বাইনচটকি, পুরাঘাটা-আমতলী ফেরিঘাটের পন্টুন ডুবে যাওয়ায় যানবাহন চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। ভোলা প্রতিনিধি জানান, মেঘনা ও তেঁতুলিয়া নদীতে পানি বিপৎসীমার ৭৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বাঁধের বাইরের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। জেলায় প্রায় ২০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। সাতক্ষীরা প্রতিনিধি জানান, আশাশুনি ও শ্যামনগরের সুন্দরবন সংলগ্ন কপোতাক্ষ, চুনা, খোলপেটুয়া, রাইমঙ্গলসহ বেশ কিছু নদ-নদীর পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ১/২ ফুট উচ্চতায় রয়েছে। আশাশুনির খাজরা ইউনিয়নের গদাইপুরে খোলপেটুয়া নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে ২০০ বিঘা মাছের ঘের প্লাবিত হয়েছে। ঝালকাঠি প্রতিনিধি জানান, বিষখালী ও হলতা নদীর জোয়ের পানি ৩-৪ ফুট বেড়ে কাঁঠালিয়া উপজেলার অর্ধশত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ২৭টি গ্রাম ও শতাধিক আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর প্লাবিত হয়েছে। ভেঙে গেছে কাঁঠালিয়া গ্রামের বিষখালী নদীর তীরবর্তী রাস্তা ও চিংড়াখালী খালের বাঁধ। কক্সবাজার প্রতিনিধি জানান, টেকনাফের সঙ্গে সেন্টমার্টিন দ্বীপের নৌ যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। বরিশাল থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, ৮টি নদীর ৯টি পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বগুড়া থেকে নিজস্ব প্রতিবেদক জানান, সারিয়াকান্দিতে নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হলেও নদীর পানি এখন স্থিতিশীল রয়েছে।