শিরোনাম
বুধবার, ১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা
রাজধানীর গণপরিবহন

দিনে ১৮২ কোটি ৪২ লাখ টাকা অতিরিক্ত ভাড়া

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীতে গণপরিবহনে যাত্রীদের কাছ থেকে প্রতিদিন ১৮২ কোটি ৪২ লাখ টাকা অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে বলে দাবি করেছে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতি। গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবে যাত্রী অধিকার দিবসের আলোচনা সভায় এ দাবি করা হয়। তারা বলছেন, বিভিন্ন শ্রেণির গণপরিবহনে প্রতিদিন গড়ে সাড়ে ৩ কোটি ট্রিপে যাত্রীদের কাছ থেকে এ অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হয়। ভাড়া নৈরাজ্যের কারণে সামাজিক অস্থিরতা বেড়েছে, পণ্যমূল্য বেড়েছে, সামাজিক অপরাধ বাড়ছে। সভায় যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেন, গত এক বছরে দুই বার জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির পর অস্বাভাবিক হারে বাড়ানো হয় গণপরিবহন ভাড়া। এতে অস্থির হয়ে ওঠে গণপরিবহন খাত। বর্তমানে নগরীর কোনো পরিবহনে সরকার নির্ধারিত ভাড়া কার্যকর নেই। এই সময়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের প্রতিবাদ করায় তর্কের জেরে গণপরিবহগুলোতে যাত্রী লাঞ্ছনার ঘটনা ঘটে ২৫টি। বাস থেকে ফেলে ১৪ যাত্রীকে হত্যা করা হয়েছে। গুরুতর আহত হয়েছেন ১০ যাত্রী। ফলে গণপরিবহন ব্যবহারে যাত্রীদের মধ্যে ভীতি সঞ্চার হয়। বক্তারা জানান, এ ধরনের ঘটনা বাড়তে থাকায়, বিষয়টি খতিয়ে দেখতে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির গণপরিবহনে ভাড়া নৈরাজ্য পর্যবেক্ষণ উপ-কমিটির ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল গত ২০ আগস্ট থেকে ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন গণপরিবহনে ভাড়া নৈরাজ্য পর্যবেক্ষণ করে। পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, জাইকার সমীক্ষানুযায়ী রাজধানীতে বিভিন্ন শ্রেণির গণপরিবহনে প্রতিদিন গড়ে সাড়ে ৩ কোটি ট্রিপ যাত্রীর যাতায়াত হয়। কোনো কোনো পরিবহনে দ্বিগুণ-তিনগুণ বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। পর্যবেক্ষণকালে বিভিন্ন যানবাহনের চালক, সহকারী ও ভাড়া আদায়কারীর সঙ্গে কথা বলা হয়। যাত্রী কল্যাণ সমিতি জানায়, রাজধানীর ৫ হাজার বাস-মিনিবাসে প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৫০ লাখ ট্রিপ যাত্রীর যাতায়াত হয়। লক্কড়-ঝক্কড় এসব সিটি সার্ভিসে সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।

এসব বাস-মিনিবাসে যাতায়াতে যাত্রী প্রতি মাথাপিছু গড়ে ১৭ টাকা পর্যন্ত বাড়তি ভাড়া দিতে হয়। এতে ৫০ লাখ ট্রিপ যাত্রী দৈনিক গড়ে সাড়ে ৮ কোটি টাকা বাড়তি ভাড়া দিতে বাধ্য হচ্ছে। এ ছাড়াও ১৫ হাজার বৈধ অটোরিকশার পাশাপাশি আরও ১৫ হাজার ঢাকা ও আশপাশের জেলায় নিবন্ধিত অটোরিকশা অবৈধভাবে চলাচল করে। ৩০ হাজার অটোরিকশা দৈনিক গড়ে ১২ ট্রিপ হিসাবে ৩ লাখ ৬০ হাজার ট্রিপ যাত্রী বহন করে।

এসব অটোরিকশায় প্রতি ট্রিপে গড়ে ১৪৫ টাকা বাড়তি ভাড়া আদায় হয়। এতে দৈনিক ৩ লাখ ৬০ হাজার ট্রিপ যাত্রীকে অটোরিকশা খাতে কেবল বাড়তি ভাড়া দিতে হচ্ছে ৫ কোটি ২২ লাখ টাকা। হিউম্যান হলারের ভাড়া নির্ধারণের আইন থাকলেও সরকার ভাড়া নির্ধারণ না করায় বরাবরই দ্বিগুণ-তিনগুণ বাড়তি ভাড়ায় যাতায়াত করতে হচ্ছে নিম্নআয়ের যাত্রী সাধারণকে। ১২ হাজার বৈধ হিউম্যান হলারের পাশাপাশি মেয়াদোত্তীর্ণসহ ৪০ হাজার হিউম্যান হলার রাজধানীতে দৈনিক গড়ে ৮০ লাখ ট্রিপ যাত্রী বহন করে। প্রতিট্রিপে যাত্রীপ্রতি গড়ে ৮ টাকা পর্যন্ত বাড়তি ভাড়া দিতে বাধ্য হয়। এতে ৬ কোটি ৪০ লাখ টাকা কেবল হিউম্যান হলারের যাত্রীদের বাড়তি ভাড়া গুনতে হচ্ছে। এ ছাড়া ৫ লাখ রাইডশেয়ারিং মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকার, ট্যাক্সিক্যাবে দৈনিক গড়ে ২ কোটি ১৬ লাখ ৪০ হাজার ট্রিপ যাত্রী বহন করছে।

এসব যানবাহনে যাত্রীপ্রতি গড়ে ৭৫ টাকা পর্যন্ত বাড়তি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। এসব যানবাহনে প্রতিদিন গড়ে ১৬২ কোটি ৩০ লাখ টাকা অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। ভাড়া নৈরাজ্য রোধে ১০টি দাবির সুপারিশ করেছে যাত্রী কল্যাণ সমিতি। এর মধ্যে- পরিবহন খাত আমূল সংস্কার, ভাড়া নির্ধারণে মালিক সমিতি একচ্ছত্র আধিপত্য বন্ধে আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বজায় রেখে বাসভাড়া নির্ধারণ কমিটি পুনর্গঠন, বাসভাড়ার তালিকা সংস্কার, পজ মেশিনের মাধ্যমে ডিজিটাল পদ্ধতিতে টিকিটে ভাড়া আদায় উল্লেখযোগ্য।

আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির সহ-সভাপতি তাওহিদুল হক লিটন। এতে আরও বক্তব্য রাখেন, সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগের সভাপতি হানিফ খোকন, মানবাধিকার সংগঠক হানিফ ইসা, আতিকুর রহমান, যাত্রী অধিকার আন্দোলনের আহ্বায়ক কেফায়েত শাকিল প্রমুখ।

সর্বশেষ খবর