শুক্রবার, ১৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

ছিনতাই মামলার আসামি বিবাহিত অছাত্রের ছড়াছড়ি

ছাত্রদলের কমিটি

শফিকুল ইসলাম সোহাগ

ছিনতাই মামলার আসামি বিবাহিত অছাত্রের ছড়াছড়ি

ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে অনেক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। আর্থিক লেনদেনসহ কমিটিতে যারা স্থান পেয়েছেন তাদের মধ্যে চাকরিজীবী, ব্যবসায়ী রয়েছেন অনেকেই। বিগত ১৪ বছর কোনো আন্দোলন-সংগ্রামে মাঠে ছিলেন না কিন্তু সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের আস্থাভাজন, আন্ডারমেট্রিক, বিবাহিত, অপহরণ ও মোটরসাইকেল ছিনতাই মামলার আসামি, ঢাকার বাইরের জেলা-উপজেলার লোকজনকেও ঢালাওভাবে কমিটিতে ঠাঁই দেওয়া হয়েছে। যোগ্যতা অনুযায়ী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে প্রত্যাশিত পদ না পাওয়া এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির ৩০২ জনের মধ্যে ৫০ জনের বেশি বিবাহিত। ছাত্রজীবন শেষ করে অনেকেই চাকরি করছেন। তিনি বলেন, অছাত্র, বিবাহিত, জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘনসহ অসংখ্য অসামঞ্জস্য দিয়েই গঠিত হয়েছে ছাত্রদলের পূর্ণাঙ্গ কমিটি। অভিযোগ রয়েছে, সবচেয়ে অবমূল্যায়িত হয়েছেন ২০১৩-১৪ সালের আন্দোলন থেকে ধারাবাহিক শ্রম দেওয়া নেতা-কর্মীরা। প্রাধান্য পেয়েছেন বরিশাল ও ময়মনসিংহ অঞ্চলের নেতা-কর্মীরা। রকি, সাইফ, লোকমান সারা বছর চাকরি করেও বাগিয়ে নিয়েছেন যুগ্ম-সম্পাদকের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদ। ২০১০, ’১১ ও ’১২ সালে এসএসসি পাস করেও সহ-সাধারণ সম্পাদক, সম্পাদক, সহ-সম্পাদক এসেছেন আবার ২০০৬-০৭ থেকেও একই পদে এসেছেন অনেকে। এমনকি কোনো ইউনিটে রাজনীতি করা ছাড়াই শুধু ফেসবুকে সাধারণ সম্পাদকের প্রচারণা চালিয়ে বরিশালের মাজরুক নামের একজন যুগ্ম-সম্পাদকের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদ পেয়েছেন। এ ছাড়া সাধারণ সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল প্রভাব খাটিয়ে বরিশাল জেলা ছাত্রদলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক শামিম আকনকে কেন্দ্রের সহ-পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক করেছেন, যিনি বানারীপাড়া থানা ছাত্রদলের আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম-আহ্বায়কও। ৭৪ নম্বর যুগ্ম-সম্পাদক শাখাওয়াত হোসেন সুহান সূর্যসেন হলে ছাত্রলীগ করতেন একসময়। তিনি ছাত্রলীগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাবেক সভাপতি আবিদ আল হাসানের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। আগে কোনো পদে ছিলেন না। তিনিও সাধারণ সম্পাদক জুয়েলের অনুসারী।

জানা যায়, সহ-সাধারণ সম্পাদক মিথুন মাদক ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। আরেক সহ-সাধারণ সম্পাদক জিয়ন বিবাহিত ও পুত্রসন্তানের জনক। সভাপতির ক্যাশিয়ার খ্যাত ছাত্রদলের বিগত কমিটির সহ-সভাপতি মোক্তাদির হোসেন তরুর মোটরসাইকেল চালিয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-সাধারণ সমúাদক থেকে কেন্দ্রের অর্থ সম্পাদক হয়েছেন রিয়াজ নামের একজন। বিগত পাঁচ বছর আন্দোলন-সংগ্রামে নিষ্ক্রিয় হয়ে সিলেট থেকেও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক যুগ্ম-সম্পাদক থেকে কেন্দ্রের বেসরকারি বিষয়ক সম্পাদক হয়েছেন মশিউর।

সহ-সাধারণ সম্পাদক আরিবা নীতীশ আন্ডারমেট্রিক হওয়ার পরও সাধারণ সম্পাদকের আস্থাভাজন হওয়ায় কেন্দ্রীয় সহ-সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন। এ ছাড়া সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক নিজস্ব বলয় বাড়াতে ক্রাইটেরিয়া ২০০৩-এর নিয়ম ভঙ্গ করে ১৯৯৮, ২০০২ সালে এসএসি পাস করা অনেককেই কমিটিতে স্থান দিয়েছেন। ঢাকা মহানগর থেকে কাজী ইলিয়াস, বাছিরুল রানা ও দেওয়ান পলাশ মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে কেন্দ্রের পদ বাগিয়ে নিয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, ৩ নম্বর সহ-সভাপতি তানজিল হাসান বিবাহিত। ৬ নম্বর সহ-সভাপতি শেখ আল ফয়সাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ড্রপ আউট। ৭ নম্বর সহ-সভাপতি মো. কামরুজ্জামান আসাদ বিবাহিত, রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয়। ৯ নম্বর সহ-সভাপতি ঝলক মিয়া দীর্ঘদিন দেশের বাইরে ছিলেন, তিনি রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় ড্রপ আউট। ১০ নম্বর সহ-সভাপতি রোকনুজ্জামান রোকন কোনো ইউনিটে কখনো কোনো পদে ছিলেন না। ১৬ নম্বর সহ-সভাপতি আশরাফুল ইসলাম আনিক দুই মেয়াদে পাঁচ বছর চীনে ছিলেন। ২১ নম্বর সহ-সভাপতি সাইফুল ইসলাম সিয়াম এক সন্তানের জনক। ২৭ নম্বর যুগ্ম-সম্পাদক মো. ইউনুছ আলী রাহুল কখনো কোনো পদে ছিলেন না। ৩১ নম্বর যুগ্ম-সম্পাদক মো. সালাউদ্দিন এসএসসি-২০০২। ৩৪ নম্বর যুগ্ম-সম্পাদক আকন মামুন বিবাহিত এবং এসএসসি-২০০২। ৩৯ নম্বর যুগ্ম-সম্পাদক খায়রুল আলম সুজন এসএসসি-২০০২, বিবাহিত, ছিনতাই ও অপহরণ মামলার আসামি। ৪০ নম্বর যুগ্ম-সম্পাদক মারজুক আহমেদ আল আমিনের কোনো সার্টিফিকেট নেই। ৪৬ নম্বর যুগ্ম-সম্পাদক জুয়েল মৃধা বিবাহিত, তার স্ত্রী সন্তানসম্ভবা এবং এসএসসি ২০০১। ৫৭ নম্বর যুগ্ম-সম্পাদক লিটন এ আর খান বিবাহিত। ৫৯ নম্বর যুগ্ম-সম্পাদক সালেহ মো. আদনান ঢাবির ‘ভুয়া’ ছাত্র বলে অভিযোগ রয়েছে। ১০৩ নম্বর যুগ্ম-সম্পাদক মো. সোহরাব হোসেন সুজন এসএসসি-২০০১। ১১৫ নম্বর সহ-সাধারণ সম্পাদক মাইনুল ইসলাম সোহান রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় এবং বিদেশে ব্যবসা-বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত। ১১৭ নম্বর সহ-সাধারণ সম্পাদক সাইদ আহমেদ অতীতে কোথাও কোনো পদে ছিলেন না এবং রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয়। ১১৮ নম্বর সহ-সাধারণ সম্পাদক আবদুল্লাহ হিল কাফির রাজনীতির বয়স দুই মাস। ১১৯ নম্বর সহ-সাধারণ সম্পাদক শাহরিয়ার ইমন রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয়। ১৩৩ নম্বর সহ-সাধারণ সম্পাদক মো. নুরে আলম বিবাহিত। ১৪০ নম্বর সহ-সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন এসএসসি-২০০১ এবং বিবাহিত। ছাত্রদল সভাপতির ঘনিষ্ঠ ১৪৩ নম্বর সহ-সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ মিথুন হোসাইন মোহাম্মদপুর থানায় ৭০ বোতল ফেনসিডিলসহ গ্রেফতার হয়েছিলেন। ১৪৪ নম্বর সহ-সাধারণ সম্পাদক আজিজুল হক জিয়ন দুই সন্তানের জনক। ১৬৬ নম্বর সহ-সাধারণ সম্পাদক মো. মিনহাজুল আবেদীন নান্নু এসএসসি-২০০৩ এবং বিবাহিত। ১৮৬ নম্বর সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ ফয়সাল হোসেন আগে কোনো পদে ছিলেন না, সম্পর্কে তিনি ছাত্রদল সভাপতির বেয়াই। ২১২ নম্বর প্রচার সম্পাদক মো. ওমর সানী আগে কোনো পদে ছিলেন না। ২১৫ নম্বর সহ-সাহিত্য সম্পাদক সাজিদ হাসান ঢাবির ‘ভুয়া’ ছাত্র। ২৯১ নম্বর সদস্য মাকসুদা মনির কোনো সার্টিফিকেট নেই। ২৩০ নম্বর সহ-আইন সম্পাদক ওয়ালিউল্লাহ এসএসসি-১৯৯৮। ১৫৯ নম্বর সহ-সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল ইসলাম বাবু এসএসি-২০০১।

ঢাবি ছাত্রদলের কমিটি : অযোগ্যদের দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বাদ পড়া নেতা-কর্মীরা। বিগত কমিটির সদস্যসচিব আমান উল্লাহ আমানসহ অনেককেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদ না দিয়ে কেন্দ্রীয় কমিটিতে দেওয়া হয়েছে। সভাপতি করা হয়েছে কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদকের অনুসারী খোরশেদ আলম সোহেল, যার কোনো কর্মী নেই। আর সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে কেন্দ্রীয় সভাপতির অনুসারী আরিফুল ইসলামকে। সার্বিক প্রসঙ্গে ছাত্রদল সভাপতি কাজী রওনাকুল ইসলাম শ্রাবণ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘সব পক্ষের সবাইকে নিয়ে কমিটি গঠনের চেষ্টা করেছি। যেসব অভিযোগ উঠেছে তা সত্য নয়। এই কমিটিকে বিতর্কিত করার জন্য এসব অভিযোগ তোলা হচ্ছে। কেউ যদি তথ্য গোগন করে থাকেন আমরা সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেব। আমরা কেউই জবাবদিহির বাইরে নই।’

সর্বশেষ খবর