শনিবার, ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

বিপাকে ভিন্ন পথে ইউরোপ যাওয়া বাংলাদেশিরা

আইনি জটিলতায় উপরোপ প্রবাসীদের পাসপোর্ট

আলী আজম

বিপাকে ভিন্ন পথে ইউরোপ যাওয়া বাংলাদেশিরা

ইউরোপের বিভিন্ন দেশে অবস্থান করা প্রায় ৫০ হাজার প্রবাসী বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে আইনি জটিলতায় বিপাকে পড়েছেন। এদের অনেকেই নিয়মবহির্ভূতভাবে ১০ থেকে ১৫ বছর বয়স কমানোর দাবি তুলেছেন। কিন্তু বিদ্যমান আইনে এর সুযোগ না থাকায় সরকারও কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। ফলে তৈরি হয়েছে অচলাবস্থা।

একদিকে পাসপোর্টের দাবিতে ইউরোপের দেশগুলোতে বাংলাদেশিদের এই অংশ আন্দোলন করছেন, অন্যদিকে সরকারও নতুন কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। দূতাবাসগুলো পড়েছে অসহায় অবস্থায়। ইতালি, স্পেন, ইংল্যান্ড, গ্রিস, সুইডেন, জার্মানিসহ ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশে অবৈধ বসবাস করা বাংলাদেশিদের জীবনে হতাশা নেমে এসেছে বলে জানিয়েছেন এসব প্রবাসীরা। কারণ যেভাবেই হোক তারা কাজের জন্য ইউরোপের বিভিন্ন দেশে ঢুকে পড়েছেন। এখন নতুন পাসপোর্ট ছাড়া কাজের অনুমতি মিলছে না। এমনকি ওইসব দেশে থাকতে গেলে বাংলাদেশের পাসপোর্ট দেখাতে হবে।

জানা গেছে, ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে বা স্থলপথে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ইউরোপে প্রবেশ করার পর ১৮ বছরের নিচে অভিবাসীদের বৈধ হওয়ার প্রক্রিয়া সহজ বলে, অনেকে বয়স কমিয়ে এখানে থাকার আবেদন করেন। এখন থাকার অনুমতি পেলেও বাংলাদেশি পাসপোর্টের অভাবে তারা বৈধ হতে পারছেন না। প্রায় এক বছর ধরে এ সমস্যা নিয়ে বিভিন্ন সময়ে সমাবেশ ও মানববন্ধন করলেও সমাধানের পথ মেলেনি। তবে এ বিষয়ে দূতাবাসগুলো বলছে, বাংলাদেশ সরকারের কাছ থেকে নির্দেশনা না পাওয়া পর্যন্ত কোনো ধরনের বয়স সংশোধন আবেদন তারা গ্রহণ করবেন না। এদিকে পাসপোর্টের দাবিতে ইউরোপ প্রবাসীরা বাংলাদেশ দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভ, মানববন্ধন করছেন। এমনকি সংক্ষুদ্ধ হয়ে প্রবাসী বাংলাদেশ দূতাবাসগুলোতে হামলা ও ভাঙচুর করছেন। দ্রুত পাসপোর্ট পেতে এবং ভোগান্তি কমাতে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপিও দিচ্ছেন।

ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদফতর (ডিআইপি) সূত্র জানায়, আগের পাসপোর্টের তথ্যের সঙ্গে বর্তমান এনআইডি ও বিআরসির (জন্ম নিবন্ধন সনদ) তথ্যে গরমিল থাকায় নতুন করে পাসপোর্ট করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছেন ইউরোপ প্রবাসীরা। অথচ দেশের অভ্যন্তরে এনআইডি, বিআরসি ও যৌক্তিক প্রমাণাদি দিয়ে সহজেই তথ্য পরিবর্তন-সংশোধন করে এমআরপি রি-ইস্যু করতে পারছেন সবাই। যাদের এমআরপির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে, তারা ই-পাসপোর্ট নিতে পারছেন। ইউরোপের বিভিন্ন দেশের দূতাবাস সূত্রে জানা গেছে, বয়সসহ পাসপোর্টের তথ্য সংশোধনে দীর্ঘদিন ধরে হাজার হাজার প্রবাসী বাংলাদেশি দূতাবাসের সামনে বিক্ষোভ করে আসছেন। তাদের অন্তত ৭০ শতাংশের বয়স ৬-১২ বছর কমানোর আবেদন রয়েছে। যা সরকারের বিদ্যমান নীতিমালা এবং সিস্টেমে কভার করে না। জানা গেছে, ২০২১ সালের এপ্রিলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জারি হওয়া পরিপত্রে উল্লেখ করা হয়, তথ্য সংশোধনপূর্বক দেশে ও বিদেশে পাসপোর্ট রি-ইস্যুর আবেদনে নাম (নিজ, বাবা, মা) পরিবর্তনের ক্ষেত্রে এনআইডি, বিআরসি কিংবা শিক্ষা সনদপত্র বিবেচনা করতে হবে এবং বয়স পরিবর্তনের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৫ বছরের ব্যবধান পর্যন্ত বিবেচনা করা যাবে। এরপরে একই বছরের ৯ ডিসেম্বর একই বিভাগ থেকে জারি করা আরেকটি পরিপত্রে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে পাসপোর্টের জন্য আবেদনকারীরা এনআইডি ও পাসপোর্টের মধ্যে তথ্যের গরমিল হলে যথাযথ প্রমাণের ভিত্তিতে প্রদত্ত তথ্য (নাম, বাবা ও মায়ের নাম, বয়স ইত্যাদি) অনুযায়ী পাসপোর্ট দেওয়া যাবে। পরের পরিপত্রে প্রবাসীদের কথা উল্লেখ না থাকায় বিপাকে পড়ছেন প্রবাসীরা। তারা এই পরিপত্র সংশোধন করার জোর দাবি তুুলছেন। তারা বলছেন, যারা বিদেশে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে অর্থ উপার্জন করে দেশে রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছেন, তাদের জন্য আইনটি অবশ্যই সহজ হওয়া উচিত। তারা অচিরেই এ সমস্যার সমাধান চান। তারা এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করেছেন।

ভুক্তভোগীরা বলছেন, পরিবারের সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে মৃত্যুভয় উপেক্ষা করে ইউরোপে পাড়ি জমিয়েছেন। সেসব দেশে তারা বসবাসের সুযোগ পেলেও বাংলাদেশি হিসেবে পরিচয় দিতে পারছেন না। ইউরোপে এ রকম ৫০ হাজার প্রবাসী বাংলাদেশি রয়েছেন পাসপোর্ট জটিলতায়। পাসপোর্ট না পেয়ে চরম দুর্ভোগ এবং হতাশায় নিমজ্জিত রেমিট্যান্স যোদ্ধারা। দেশে অনেকের পরিবার ঋণগ্রস্ত। অনেকের বাবা-মা গুরুতর অসুস্থ। কারও কারও মা-বাবার মৃত্যু ঘটেছে দেখারও সুযোগ পাননি। পাসপোর্ট না থাকায় বৈধ পথে তারা রেমিট্যান্স পাঠাতে পারছেন না। অনেকে কাজ হারিয়ে বেকার হয়ে পড়েছেন। এর প্রভাব পড়ছে দেশে থাকা পরিবারের ওপর। ভুক্তভোগী প্রবাসীরা তাদের দুঃখ-কষ্টের কথা এবং নানা জটিলতায় পাসপোর্ট অধিদফতরে আটকে থাকা হাজারও প্রবাসীর আবেদনের কথা জানিয়েছেন। তারা জানান, কেউ নতুন পাসপোর্টের আবেদন করেছেন। জটিলতা নিরসনের কোনো দৃশ্যমান উদ্যোগও নেই বলে জানান প্রবাসীরা। প্রবাসীদের এ সমস্যা সমাধানের বিষয়ে জানতে চাইলে ডিআইপির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেছেন, যারা যে তথ্যে পাসপোর্ট নিয়ে প্রবাসে অবস্থান করছেন, তারা শুধু তাদের তথ্য সংশোধন করতে পারবেন কিন্তু পরিবর্তন নয়। আমরা দেখেছি অনেকে বিদেশে গিয়ে রাতারাতি তথ্য পরিবর্তন করে আবেদন করছেন। তাদের পাসপোর্ট পাওয়ার ক্ষেত্রে জটিলতা দেখা দেওয়াটা স্বাভাবিক।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর