শিরোনাম
রবিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা
যমুনার ভাঙনে বসতভিটা

মানবেতর জীবন খোঁজ নেয় না কেউ

প্রতিদিন ডেস্ক

মানবেতর জীবন খোঁজ নেয় না কেউ

সিরাজগঞ্জে ভাঙনে প্রতিদিনই বিলীন হচ্ছে ঘরবাড়ি -বাংলাদেশ প্রতিদিন

সিরাজগঞ্জে বিলীন হচ্ছে জিওব্যাগসহ বসতভিটা। সবকিছু হারিয়ে নদী-তীরবর্তী মানুষ মানবেতর জীবনযাপন করছেন। খোলা আকাশের নিচে বাস করলেও তাদের কেউ খোঁজ নিচ্ছেন না।

ভাঙনকবলিতদের অভিযোগ, এনায়েতপুর থেকে পাচিল পর্যন্ত প্রায় ৬ কিলোমিটার এলাকা রক্ষায় সরকার সাড়ে ৬০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিলেও সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারের গাফিলতি ও পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্মকর্তাদের তদারকির অভাবে নদীতীর এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। অপরিকল্পিত জিওব্যাগ ফেলানোর কারণে জিওব্যাগসহ বসতভিটা বিলীন হয়ে যাচ্ছে। বিস্তীর্ণ এলাকা রক্ষায় জিওব্যাগ ডাম্পিংসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তারা।

জালালপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সুলতান মাহমুদ জানান, ভাঙন এলাকা রক্ষায় জরুরি ভিত্তিতে স্থায়ী বাঁধের কাজ দ্রুত করা প্রয়োজন। না হলে বেশ কয়েকটি গ্রাম বিলীন হয়ে যাবে।

সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. শফিকুল ইসলাম জানান, এনায়েতপুরের ছয় কিলোমিটার এলাকায় ভাঙন রোধে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণে ইতোমধ্যে ৬০০ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদনের পর টেন্ডার হয়েছে। কিন্তু পানি বৃদ্ধির কারণে কাজ শুরু করা যায়নি। তবে জরুরি ভিত্তিতে জিওব্যাগ ফেলানো হয়েছিল। কিন্তু তিন/চারটি পয়েন্টে প্রায় এক কিলোমিটার এলাকা জিওব্যাগসহ বিলীন হয়ে গেছে। তার পরও যেখানে ভাঙনের তীব্রতা রয়েছে সেখানে নতুন করে জিওব্যাগ ফেলানোর প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া পানি কমে গেলে জালালপুর এলাকায় নদী ড্রেজিং করে গতিপথ পরিবর্তন, একটি ক্রসবার এবং সিসি ব্লক দিয়ে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা হবে। জানা গেছে, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার এনায়েতপুরের দক্ষিণাঞ্চল জালালপুরে যমুনার ভাঙনে ঘরবাড়ি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন আশ্রয়ণ প্রকল্পের (গুচ্ছগ্রাম) বাসিন্দারা। তারা খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এ ছাড়া যমুনা নদীর পানি কমা-বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নদী-তীরবর্তী এলাকায় তীব্র ভাঙনে ব্যক্তি মালিকানাধীন অর্ধশতাধিক বসতভিটাসহ ফসলি জমি বিলীন হয়ে গেছে। শুক্রবার সকালে যমুনা নদীর জালালপুর ও পাকুড়তলা পয়েন্টে তীব্র ভাঙন শুরু হয়। অন্তত ৯টি বসতভিটা মুহূর্তে বিলীন হয়ে যায়। এর আগে বৃহস্পতিবার রাতে জালালপুর ও পাকুড়তলা এলাকায় আরও কয়েকটি বসতভিটা বিলীন হয়েছে। গত এক সপ্তাহে আশ্রয়ণ প্রকল্পের অন্তত ৩৪টি ঘর ও এলাকার  অর্ধশত বাড়িঘর, ফসলি জমি, শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান নদী গর্ভে চলে যায়। এ ছাড়া ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে এনায়েতপুরের চারটি গ্রামের কয়েক শ বাড়িঘর, এনায়েতপুর-সিরাজগঞ্জ আঞ্চলিক সড়কসহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও বহু স্থাপনা। শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ তরিকুল ইসলাম জানান, ২০০৫-০৬ অর্থবছরে আবাসন প্রকল্প ও গুচ্ছগ্রামের ২৩৮টি ঘর নির্মাণ করা হয়। যমুনার ভাঙনে এরই মধ্যে ৯০টি বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। ঘরবাড়ি হারানো মানুষগুলোর মধ্যে অনেকে অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন।

আত্রাই নদীর ভাঙনে হুমকিতে রাস্তা দেড় শতাধিক বাড়ি : আত্রাই নদীর ভাঙনে হুমকির মধ্যে পড়েছে দিনাজপুরের খানসামার চাকিনীয়া গ্রামের নদীর পাশের দেড় শতাধিক ঘরবাড়িসহ চলাচলের একমাত্র রাস্তাটি। খানসামার ভাবকি ইউনিয়নের পশ্চিম-দক্ষিণের চাকিনীয়া গ্রামে আত্রাই নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে গেছে। এই নদীর ভাঙনের কবলে পড়ে সাম্প্রতিক সময়ে প্রায় ২০০ একর আবাদি জমি নদীতে বিলীন হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, গত দুই বছর আগে বর্ষাকালে হঠাৎ আত্রাই নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে আবাদি জমির ওপর দিয়ে যায়। এতে প্রায় ২০ একর আবাদী জমি নদীতে পরিণত হয়। এরপর গত বছর বর্ষাকালে আবারও প্রায় ১০০ একর জমি নদীতে বিলীন হয়ে যায়। আর এ বছর ভাঙতে ভাঙতে একেবারে বাড়ির কাছে পৌঁছেছে। নদীর পাশ দিয়ে চলাচলের একমাত্র রাস্তা যে কোনো সময় ভেঙে যেতে পারে। বাড়িঘরগুলো নিয়ে হুমকির মধ্যে রয়েছে। স্থানীয় পশিরদ্দীনের ১৪ বিঘা জমি নদীতে চলে গেছে। আবদুল গনির তিন বিঘা জমিসহ গাছপালা বিলীন হয়ে গেছে। স্থানীয় ইউপি সদস্য মকবুল হোসেন জানান, আমারও ৫ বিঘা জমি নদীতে গেছে। চলাচলের একমাত্র রাস্তা যে কোনো সময় ভেঙে যেতে পারে। ভাবকি ইউপি চেয়ারম্যান রবিউল আলম তুহিন বলেন, বিষয়টি আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে নদীভাঙন রোধে একটা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

 

 

সর্বশেষ খবর