রবিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

ধরা স্মার্ট প্রতারকরা

এটিএম কার্ড হ্যাক করে নিত অর্থ

নিজস্ব প্রতিবেদক

ধরা স্মার্ট প্রতারকরা

মাস্টার কার্ড ও ভিসা কার্ডধারীদের অ্যাকাউন্টের তথ্য নিয়ে অর্থ হাতিয়ে নেওয়া চক্রের চারজনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তারা হলেন- সোহেল মীর, নাজমুল হোসেন, পারুল ও তারা মিয়া। গতকাল ভোরে ঢাকা, ফরিদপুর ও সাভারে ধারাবাহিক অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করেছে ডিবির গুলশান বিভাগ।

গতকাল দুপুরে ডিবির কম্পাউন্ডে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এসব জানান ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।

তিনি জানান, ডিজিটাল প্রযুক্তির যুগে ভিসা ও মাস্টার কার্ড ব্যবহার করে পৃথিবীর যে কোনো দেশে ইলেকট্রনিক পেমেন্ট, কেনাকাটা, এটিএম বুথ থেকে টাকা উত্তোলন ও মোবাইল রিচার্জসহ বিভিন্ন কাজ করা যায়। এই কার্ড ব্যবহার করে বিকাশ অ্যাকাউন্টে টাকা লোডও করা যায়। আর এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে এসব কার্ড ব্যবহারকারীদের অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে অর্থ হাতিয়ে নিয়ে আসছিল একটি চক্র। এ ধরনের কয়েকটি ঘটনায় গুলশান, বনানী ও হাতিরঝিল থানায় একাধিক মামলা করা হয়। ডিবির গুলশান বিভাগও ছায়া-তদন্ত করে চক্রটিকে শনাক্ত করে।

মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ জানান, চক্রের এক সদস্য বিভিন্ন কার্ডধারীর মোবাইল নম্বর সংগ্রহের কাজ করতেন। পরে এসব নম্বর নাজমুল ও সোহেলের কাছে পাঠাতেন। সোহেল ও নাজমুল স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক ও ব্র্যাক ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংকের কার্ড ডিভিশনের কর্মকর্তা সেজে ভিসা ও মাস্টার কার্ড ব্যবহারকারীদের নম্বরে ফোন দিয়ে তথ্য হালনাগাদ, কার্ডের পাসওয়ার্ড চার ডিজিটের পরিবর্তে ছয় ডিজিট ও ই-মেইল আপডেট না করার কারণে কার্ডের কার্যক্রম বন্ধ হয়েছে- এমন বিষয়গুলো জানাতেন। অনেক কার্ডধারী তাদের অ্যাকাউন্টে বড় অঙ্কের ব্যালেন্স থাকায় আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে প্রতারকদের কথা অনুযায়ী কাজ করতেন। এভাবে সংগ্রহ করা তথ্য থেকে ১৬ ডিজিটের নম্বর, কার্ডের মেয়াদ উত্তীর্ণের তারিখ, কার্ডের বিপরীত পাশে উল্লিখিত তিন ডিজিটের সিকিউরিটি পিন নম্বর সংরক্ষণ করত প্রতারকরা। পরে গ্রাহকদের কাছে ওটিপি কোড পাঠাত। কৌশলে প্রেরিত ওটিপি কোড সংগ্রহ করে বিকাশ অ্যাপে ঢুকে ‘কার্ড টু বিকাশ অ্যাড মানি’ অপশনের মাধ্যমে টাকা আত্মসাৎ করত চক্রটি। গ্রেফতার হওয়া চক্রের সদস্যদের রিমান্ড আবেদনসহ আদালতে পাঠানো হয়েছে বলে জানান তিনি। এদিকে ডিবির গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মশিউর রহমান বলেন, ‘মাস্টার কার্ড ও ভিসা কার্ড ব্যবহারকারীদের সঙ্গে প্রতারণা করতে গেলে প্রতারকদের একাধিক ধাপে কয়েকটি তথ্যের প্রয়োজন হয়, যেমন- কার্ড নম্বর,  নিরাপত্তা পিন নম্বর, ওটিপি কোড ইত্যাদি। এগুলো কখনই কোনো ব্যক্তির সঙ্গে, এমনকি সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে শেয়ার না করার অনুরোধ করছি।’ ডিবি সূত্র বলছে, জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতার ব্যক্তিরা জানান, পলাতক শারফিন ঢাকা থেকে বিভিন্ন কার্ডধারীর মোবাইল নম্বর সংগ্রহ করে নাজমুল ও সোহেলকে পাঠাতেন। এদিকে মিয়া মুন্সি হাতিয়ে নেওয়া টাকা ঢাকার বিভিন্ন এলাকার বিকাশ এজেন্টের কাছ থেকে উত্তোলন করে সরাসরি প্রতারকদের কাছে পৌঁছে দিয়ে আসতেন। আর সোহেল মীর ও শারফিন নিজেদের অবস্থান গোপন করার জন্য কখনো ঢাকার, কখনো বরিশালসহ অন্যান্য এলাকার বিভিন্ন এজেন্টের মাধ্যমে অনেক হাত ঘুরিয়ে এরপর টাকা নিজেদের কাছে ক্যাশ অথবা সেন্ড মানি আকারে নিয়ে আসতেন। এ কাজে তারা বেশি অর্থ দিয়ে অন্যের নামে নিবন্ধন করা সিম কিনে নিয়ে একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে প্রতারণা করে সিমটি নষ্ট করে ফেলতেন।

 

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর