রবিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

পেট্রাপোলে যত ভোগান্তি

বেনাপোলে ১৫ মিনিট ওপারে ৫-৬ ঘণ্টা

বেনাপোল প্রতিনিধি

দেশের বৃহত্তম স্থলবন্দর বেনাপোলের উল্টো দিক ভারতের পেট্রাপোল। এই জায়গাটা দিয়ে ভারতে ঢুকতে গেলে বাংলাদেশি যাত্রীদের ভয়ানক যন্ত্রণা সইতে হচ্ছে।

বেনাপোল ইমিগ্রেশনে একজন যাত্রীর ইমিগ্রেশনের কাজ সারতে সময় লাগে মাত্র ১৫ মিনিট। অন্যদিকে ভারতের পেট্রাপোলে ইমিগ্রেশনে কাজ সারতে লেগে যাচ্ছে ৫ থেকে ৬ ঘণ্টা। এ জন্য খোলা আকাশের নিচে রোদ-বৃষ্টিতে ভিজে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন অনেকেই। রোগী হোক কিংবা কোনো অন্তঃসত্ত্বা মহিলা বা বয়স্ক মানুষ, রেহাই মিলছে না কারোই। নেই মাথার ওপর ছাউনি, বসার জায়গা, টয়লেটের ব্যবস্থা। আশপাশে বিভিন্ন পরিবহন কোম্পানির কাউন্টারে টয়লেট থাকলেও যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কারণ, লাইন হাতছাড়া হওয়ার আশঙ্কা। সব মিলিয়ে এক দুর্বিষহ যন্ত্রণা ভোগ করতে হচ্ছে ভারত যাতায়াতকারী বাংলাদেশের পাসপোর্টধারী যাত্রীদের। তবে ভারতীয় পাসপোর্ট যাত্রীদের ক্ষেত্রে ভিন্ন চিত্র। এটা কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, প্রতিদিনের চিত্র। ফলে বিষয়টি নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ভারত-বাংলাদেশের যাতায়াতকারী যাত্রীরা।

যাত্রীরা বলেন, পেট্রাপোল ইমিগ্রেশনে দীর্ঘ সময় নষ্ট হওয়ায় গন্তব্যে পৌঁছতে গিয়ে চরম নাকাল হতে হচ্ছে তাদের। সময়মতো ট্রেন-বাস  পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে চিকিৎসকের অ্যাপয়েনমেন্ট বাতিল হয়ে যাচ্ছে। বাতিল হয়ে যাচ্ছে বিমানের টিকিটও। সঙ্গে রয়েছে অফিসারদের উৎপাত। টিনের বাক্সে টাকা না দিলে পার হওয়া কষ্টকর। ব্যাগের ওজন বেশি হলে ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা না দেওয়া পর্যন্ত পারাপারের কোনো সুযোগ নেই। ভারতের ইমিগ্রেশনে ধীরগতিতে কাজ চলায় যাত্রীরা নানা ধরনের ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। ইমিগ্রেশনে ডেস্কের সংখ্যা ১৪টির বেশি থাকলেও খোলা থাকে মাত্র দু-চারটে। জানতে চাইলে বলা হয়, কর্মীর সংখ্যা কম। ফলে সব ডেস্ক খোলা সম্ভব হচ্ছে না। সেখানে দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তারা খোশগল্পে মেতে থাকেন। পাসপোর্ট নিয়ে মোবাইলে কথা বলেন ঘণ্টার পর ঘণ্টা। ফলে যাত্রীদের চাপ সামাল দিতে হিমশিম খেতে হয় ইমিগ্রেশন কর্মীদের।

গোটা বিষয়টি নিয়ে পেট্রাপোল এক্সপোর্টার ইমপোর্টার অ্যাসোসিয়েশন থেকে  বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়কারী কেন্দ্রগুলোর কর্মীরাও যারপরনাই ক্ষুব্ধ। তাদের বক্তব্য, এভাবে চলতে থাকলে যাত্রীর সংখ্যা কমতে থাকবে। এতে পেট্রাপোল সীমান্তের গুরুত্ব কমবে। যাত্রী সংখ্যা কমে গেলে এই সীমান্তের ওপর যেসব ব্যবসায়ী নির্ভরশীল, তারাও পথে বসতে বাধ্য হবেন। বিষয়টি নিয়ে বারবার ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি।

পেট্রাপোল এক্সপোর্টার অ্যান্ড ইমপোর্টার ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক প্রদীপ দে বলেন, পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে পাসপোর্টে যাতায়াত করা যাত্রীদের যে কী ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে, তা ভাষায় বর্ণনার নয়। পেট্রাপোল ইমিগ্রেশনে লোকবল কম। ফলে কম কর্মী, অফিসার দিয়ে বিপুলসংখ্যক যাত্রীকে পরিষেবা দিতে গিয়ে কার্যত নাকানি-চুবানি খেতে হচ্ছে। শুধু পাসপোর্ট চেক করতে ৫-৬ ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে, এটা ভাবা যায়? তিনি বলেন, একে তো লোকবল কম, তার ওপর প্রায়শই সার্ভারের সমস্যা। ফলে কাজ বন্ধ। বিষয়টি নিয়ে ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষকে বহুবার জানানো হয়েছে। কিন্তু কোনো প্রতিকার হয়নি।

এ ব্যাপারে বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, পেট্রাপোল বন্দরে যাত্রীদের ভোগান্তির বিষয়টি সম্পূর্ণ ওপাশের ব্যাপার। তবে আমাদের বেনাপোল বন্দরে যাত্রীরা স্বাচ্ছন্দ্যে চলাচল করছেন। আমাদের এখানে ১০ থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যে যাত্রীদের পাসপোর্টের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে ভারতে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর