রবিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা
ডেল্টা গভর্ন্যান্স কাউন্সিল পুনর্গঠন

ফান্ড ব্যবহার তদারকিতে ১৪ মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী

উবায়দুল্লাহ বাদল

শত বছরের মহাপরিকল্পনা বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিতে প্রধানমন্ত্রীকে চেয়ারপারসন করে ‘ডেল্টা গভর্ন্যান্স কাউন্সিল’ পুনর্গঠন করেছে সরকার। ডেল্টা ফান্ড গঠন ও ব্যবহারে সার্বিক দিকনির্দেশনা দিতে এ কাউন্সিলে প্রধানমন্ত্রীসহ ১৪ জন মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীকে রাখা হয়েছে। গত ৫ সেপ্টেম্বর এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এর ফলে ২০২০ সালের ১ জুলাই জারি করা এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন বাতিল হয়েছে। পুনর্গঠিত ডেল্টা কাউন্সিলে আগের মতোই পরিকল্পনামন্ত্রীকে ভাইস-চেয়ারম্যান করা হয়েছে। সদস্য হিসেবে কৃষিমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী, স্থানীয় সরকারমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, খাদ্যমন্ত্রী, ভূমিমন্ত্রী, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রীকে রাখা হয়েছে। এ ছাড়া কাউন্সিলে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী, পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এবং পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রীকেও সদস্য করা হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্যকে এই কাউন্সিলের সদস্য সচিবের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এর আগে ২০২০ সালে প্রধানমন্ত্রীকে চেয়ারপারসন করে ১২ সদস্যের কাউন্সিল গঠিত হয়েছিল। কাউন্সিলের কার্যপরিধি প্রসঙ্গে নতুন প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, এই কাউন্সিল ডেল্টা প্ল্যান-২১০০ বাস্তবায়নে নীতিনির্ধারণ, সিদ্ধান্ত গ্রহণ, কৌশলগত পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা দেবে। পাশাপাশি ডেল্টা প্ল্যান হালনাগাদকরণেও দিকনির্দেশনা দেবে এই কাউন্সিল। এ ছাড়া এই প্ল্যানের বিনিয়োগ পরিকল্পনা প্রণয়নে কাউন্সিলকে নীতিনির্ধারণ ও নির্দেশনা দিতে বলা হয়েছে। সর্বোপরি ডেল্টা ফান্ড গঠন ও ব্যবহারে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেবে তারা। প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়েছে, কাউন্সিলকে বছরে ন্যূনতম একটি সভা করতে হবে। কাউন্সিল প্রয়োজনে নতুন সদস্য অন্তর্ভুক্ত করতে পারবে। ইউরোপের দেশ নেদারল্যান্ডসের আদলে গ্রহণ করা শতবর্ষী ডেল্টা প্ল্যান তথা ‘ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০’কে দেশের ভবিষ্যৎ উন্নয়নের চাবিকাঠি হিসেবে দেখছে সরকার। বন্যা, নদী ভাঙন, নদী ব্যবস্থাপনা, নগর ও গ্রামে পানি সরবরাহ, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এবং বন্যা নিয়ন্ত্রণ ও নিষ্কাশন ব্যবস্থাপনার দীর্ঘমেয়াদি কৌশল হিসেবে বহুল আলোচিত ‘ব-দ্বীপ পরিকল্পনা-২১০০’ ২০১৮ সালের ৪ সেপ্টেম্বর অনুমোদন দেয় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ (এনইসি)। ‘ডেল্টা প্ল্যান’ নামে বেশি পরিচিত এ মহাপরিকল্পনার অধীনে আপাতত ২০৩০ সালের মধ্যে বাস্তবায়নের জন্য ৮০টি প্রকল্প নেবে সরকার। জানা গেছে, সরকারের ডেল্টা প্ল্যানের প্রথম ধাপে আগামী ১০ বছরের মধ্যে বাস্তবায়নযোগ্য ৮০টি প্রকল্প ব্যয়ের অর্থের জোগান নিশ্চিত করতে প্রতিবছর জাতীয় আয়ের ২ দশমিক ৫ শতাংশের মধ্যে ২ শতাংশ রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে দেওয়া হবে। বাকি শূন্য দশমিক ৫ শতাংশ বেসরকারি খাত থেকে নেওয়ার কথা বলা হয়েছে। ডেল্টা প্ল্যান তৈরিতে নেদারল্যান্ডস সরকার এরই মধ্যে ৮৭ কোটি টাকা অনুদান দিয়েছে। বিশ্বব্যাংকও পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে। এই মহাপরিকল্পনায় বাংলাদেশ ডেল্টা তহবিল প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, তহবিলের সম্ভাব্য উৎস হিসেবে বাংলাদেশ সরকার, উন্নয়ন সহযোগী, পরিবেশ এবং জলবায়ু সম্পর্কিত তহবিল, বিশেষ করে গ্রিন ক্লাইমেট ফান্ড (জিসিএফ) এবং সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব পিপিপি পদ্ধতিকে বিবেচনা করা হয়েছে। অর্থায়নের ক্ষেত্রে ‘কস্ট রিকভারি’র জন্য ক্রমান্বয়ে বেনিফিশিয়ারি পে প্রিন্সিপাল নীতি অনুসরণ করার কথা বলা হয়েছে। প্রাথমিক পর্যায়ে বড় শহরগুলোতে পানিসম্পদ ব্যবস্থাপনা খাতে পরিচালন ও রক্ষণাবেক্ষণ (ওঅ্যান্ডএম) ব্যয় আদায়ের ক্ষেত্রে এ নীতিমালা কার্যকর করার প্রচেষ্টা নেওয়া হয়েছে এবং তা পর্যায়ক্রমে অন্যান্য ক্ষেত্রেও প্রয়োগ করার সুপারিশ করা হয়েছে। সরকারের শতবর্ষী ডেল্টা প্ল্যানে পরিকল্পনায় সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বন্যা ও জলবায়ু পরিবর্তনের বিপর্যয় থেকে রক্ষার কৌশল খুঁজে বের করাকে। এরপর রয়েছে পানির নিরাপত্তা। এ ছাড়া টেকসই নদী-অঞ্চল, জলাভূমি সংরক্ষণ, আন্তদেশীয় নদীর পানির সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার কথাও বলা হয়েছে ডেল্টা পরিকল্পনায়।

 

সর্বশেষ খবর