বুধবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

সাড়ে ৪ বছরে ৪ কোটির বেশি কল ট্রিপল নাইনে

আলী আজম

সাড়ে ৪ বছরে ৪ কোটির বেশি কল ট্রিপল নাইনে

১৩ সেপ্টেম্বর লক্ষ্মীপুরের রামগতি থানার চর আলেকজান্ডারের কাছে মেঘনা নদী থেকে হৃদয় নামে এক জেলে ট্রিপল নাইনে ফোন দেন। তিনি জানান, একটি মাছ ধরার নৌকায় তিনি ওই এলাকা দিয়ে যাওয়ার সময় দেখতে পান চর আবদুল্লায় ঝড়ে স্রোতের কবলে পড়ে একটি নৌকা উল্টে গেছে এবং জেলেরা সাঁতরে তীরে উঠে চরে আশ্রয় নিয়েছেন। কিন্তু জোয়ারের পানিতে চরটি তলিয়ে যাওয়ার উপক্রম হওয়ায় জেলেরা সাহায্যের জন্য চিৎকার করছেন। জেলেদের উদ্ধারের জন্য ট্রিপল নাইনে (৯৯৯) ফোন দেন। বিষয়টি দ্রুত নৌ পুলিশকে জানানো হয়। পরে লক্ষ্মীপুরের রামগতির বড়খেরী নৌ পুলিশ ফাঁড়ির একটি উদ্ধারকারী দল দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মধ্যেও ঝুঁকি নিয়ে চর আবদুল্লা থেকে আট জেলেকে উদ্ধার করে। পাশাপাশি জেলেদের ব্যবহৃত জাল, নৌকা উদ্ধার করে নিরাপদে তীরে পৌঁছে দেওয়া হয়।

১৭ সেপ্টেম্বর ট্রিপল নাইনে ফোন পেয়ে অপহৃত এক কিশোরীকে উদ্ধার করেছে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থানা পুলিশ। কিশোরীকে পাঁচ দিন আটক করে রাখা হয়েছিল। মির্জাপুরের আজগানা ইউনিয়নের বেলতৈল উত্তরপাড়া থেকে ওই কিশোরীকে উদ্ধার এবং সাহিদা বেগম নামে এক অপহরণকারীকে আটক করা হয়। পরে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে কিশোরীকে আটক রাখার অপরাধে সাহিদা বেগমকে এক বছরের কারাদণ্ড এবং উদ্ধার হওয়া কিশোরীকে তার বাবার কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। ২৭ আগস্ট মাগুরা সদর বাসস্ট্যান্ড থেকে হামিদুর রহমান নামে একজন ট্রিপল নাইনে ফোন দিয়ে জানান, তার একটি টয়োটা ফিল্ডার সাদা রঙের প্রাইভেটকার গ্যারেজ থেকে চুরি হয়েছে। গাড়িতে সংযোজিত জিপিএস লোকেশন ট্র্যাকারের মাধ্যমে তিনি দেখতে পাচ্ছিলেন গাড়িটি বর্তমানে মাদারীপুর-শরীয়তপুর হাইওয়েতে রয়েছে। তিনি গাড়িটি উদ্ধারের জন্য ট্রিপল নাইনে অনুরোধ জানান। ট্রিপল নাইন থেকে বিষয়টি মাদারীপুর জেলা পুলিশকে অবহিত করে। পরে মাদারীপুর সদর থানার একটি দল আড়িয়াল খাঁ ফিলিং স্টেশনের পাশ থেকে গাড়িটি উদ্ধার করে। ২৪ আগস্ট ভোলার তজুমুদ্দিন উপজেলা থেকে একটি মাছ ধরার ট্রলার সাগরে রওনা দেয়। কিন্তু গভীর সাগরে গিয়ে ইঞ্জিন বিকল হলে সেটি নিয়ন্ত্রণহীন ভাসতে থাকে। ট্রলারটি তিন দিন ধরে কক্সবাজারের কুতুবদিয়া চ্যানেল সংলগ্ন গভীর সাগরে ভাসতে থাকে। ট্রলারটি ভাসতে ভাসতে একপর্যায়ে মোবাইল ফোন নেটওয়ার্কের আওতায় আসে এবং ট্রলারে থাকা জেলেরা ট্রিপল নাইনে ফোন দেয়। পরে ট্রিপল নাইন থেকে বিষয়টি কোস্ট গার্ডকে জানানো হয়। পরে জাহাজ কুতুবদিয়ার অধিনায়ক লে. কমান্ডার আমিনুল সাজ্জাদের নেতৃত্বে বঙ্গোপসাগরের কুতুবদিয়া চ্যানেলের গভীর সাগর থেকে ফিশিং ট্রলারসহ ১৭ জেলেকে উদ্ধার করে তাদের প্রাথমিক চিকিৎসা এবং খাবার দেওয়া হয়। এভাবেই জনগণের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলে ইতোমধ্যে আস্থা অর্জন করেছে ট্রিপল নাইন সেবাটি। গত সাড়ে ৪ বছরে সরাসরি সমাধান যোগ্য কলের মধ্যে পুলিশ সার্ভিসিং দেওয়া হয়েছে ৭ লাখ ৫৯ হাজার ৫১৩টি; ফায়ার সার্ভিসিং ৮৫ হাজার ৫০৮টি এবং অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসিং ১ লাখ ৯৯৭টি। ফলে সহায়তার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে জাতীয় জরুরি সেবা ট্রিপল নাইন (৯৯৯)। জরুরি অ্যাম্বুলেন্স, ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশি সেবা পাচ্ছে সাধারণ মানুষ। আস্থা বাড়ছে এই জরুরি সেবার ওপর। ঘটনা জানার সঙ্গে সঙ্গে দ্রুত সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। বিদ্যুৎ গতিতে কাজ করছে এ সেবাটি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০১৭ সালের ১২ ডিসেম্বর সেবাটি চালুর পর থেকে চলতি বছরের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত সাড়ে ৪ বছরে ৪ কোটি ৪ লাখ ২১ হাজার ৪৩৫টি কল এসেছে। এর মধ্যে ৯ লাখ ৪৬ হাজার ১৮টি কল সরাসরি সমাধানযোগ্য ছিল। তবে কর্তৃপক্ষ বলছে, মোট কলের ১ কোটি ৬৪ লাখ ৭২ হাজার ১৫১টি কলের বিপরীতে কোনো না কোনোভাবে সার্ভিস দেওয়া হয়েছে। যা মোট কলের ৪০.৭৫ শতাংশ। পাশাপাশি ট্রিপল নাইনে অপ্রয়োজনে অনেকে ফোন করছেন। দিচ্ছেন মিথ্যা তথ্যও। গেল সাড়ে ৪ বছরে ট্রিপল নাইনে ২ কোটি ৩৯ লাখ ৪৯ হাজার ২৮৪টি অপ্রয়োজনীয় কল এসেছে। যা মোট কলের ৫৯.২৫ শতাংশ। এর মধ্যে বিরক্তকর কলই ছিল ২২ লাখ ৫০ হাজার ৯১৭টি।

জাতীয় জরুরি সেবা ট্রিপল নাইনের (৯৯৯) প্রধান অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ তবারক উল্লাহ জানান, ট্রিপল নাইনে মানুষের আস্থা বাড়ছে। তাই চাহিদাও বাড়ছে। বাড়ছে সেবার মানও। ৯৯৯-এ কল করার সঙ্গে সঙ্গে মিলছে পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস ও অ্যাম্বুলেন্স সেবা। ট্রিপল নাইনে কল পাওয়ার পর সঙ্গে সঙ্গে আমরা সেবাটি নিশ্চিত করার চেষ্টা করি। গত সাড়ে ৪ বছরে জনগণকে সরাসরি সমাধানযোগ্য ৯ লাখ ৪৬ হাজার ১৮টি কলের বিপরীতে ৮০.২৯ শতাংশ পুলিশি সেবা, ৯.০৪ শতাংশ ফায়ার সার্ভিস সেবা এবং ১০.৬৮ শতাংশ অ্যাম্বুলেন্স সেবা দেওয়া হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, জনগণের আস্থা ও বিশ্বাসের ভিত্তিতে এগিয়ে যাচ্ছে ট্রিপল নাইনের সেবা। যতই দিন যাচ্ছে ততই ট্রিপল নাইনের প্রতি জনগণ তার আস্থা ও ভরসা রেখেই চলছে। জনগণ যখনই বিপদে পড়ে তখনই ট্রিপল নাইনে ফোন দিচ্ছে। আমাদের দক্ষ কর্মী বাহিনী নিরলস পরিশ্রম করে জনগণকে সেবাটি নিশ্চিত করার চেষ্টা করছে। তবে জনগণ কিছু কিছু বিষয় জরুরি মনে করে কল দিলেও সেগুলো আমাদের কাছে জরুরি নয়। কারণ ট্রিপল নাইনে সব বিষয়ে সমাধান দেওয়া সম্ভব নয়। কেবলমাত্র পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস এবং অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস দেওয়া সম্ভব। ট্রিপল নাইনের প্রধান তবারক উল্লাহ বলেন, ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে ট্রিপল নাইন চালুর পর থেকে অপ্রয়োজনীয় কলের সংখ্যা বেশি ছিল। এখন তা অনেক কমে আসছে। জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। ট্রিপল নাইনের কর্মী বাহিনী দিনরাত ২৪ ঘণ্টা জনগণকে নির্বিঘ্নে সার্ভিস দিয়ে যাচ্ছেন। দেশের সব মেট্রোপলিটন এলাকায় এমডিটি (মোবাইল ডাটা টার্মিনাল) ও টিডিএস (থানা ডেসপাস সিস্টেম) চালু করার ফলে সেবাটি আরও সহজ হয়েছে। ট্রিপল নাইন সেবাটি গ্রহণ করে জনগণ খুশি। বর্তমানে ট্রিপল নাইনে প্রতি মিনিটে ১২০টি কল রেসপন্স করতে পারে। প্রতিদিন ৩০ হাজার কল আসছে। এর মধ্যে সার্ভিসযোগ্য কল আসছে ৪০ শতাংশ। অপ্রয়োজনীয় কল এড়াতে জনগণকে আরও সচেতন হতে হবে। ট্রিপল নাইনকে অটোমেশন করতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কাজ করছে। অটোমেশন চালু হলে সময় কমে যাবে, দ্রুত সার্ভিস দেওয়া যাবে। রেন্সপন্স টাইম যত কম লাগবে, ততই দ্রুত জনগণকে সেবা দেওয়া যাবে। আমাদের মূল লক্ষ্য জনগণকে অল্প সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ সেবা দেওয়া।

 

 

সর্বশেষ খবর