বুধবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

কাজই যেন শেষ হচ্ছে না

ডিপিএইচইর প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতি ১৬টির মেয়াদ বাড়লেও শেষ হয়নি কাজ

হাসান ইমন

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের (ডিপিএইচই) ১৬টি প্রকল্পের মেয়াদ কয়েক দফা বাড়লেও শেষ হয়নি কাজ। প্রকল্প বাস্তবায়নে চলছে ধীরগতি। ‘পানি সংরক্ষণ ও নিরাপদ পানি সরবরাহের লক্ষ্যে জেলা পরিষদের পুকুর, দিঘি ও জলাশয়গুলো পুনঃখনন সংস্কার’ শীর্ষক প্রকল্পটি ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে নেওয়া হয়েছে। ২০১৯ সালের জুনে মেয়াদ শেষ হলেও প্রকল্পটির মেয়াদ এক দফা বাড়িয়ে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। ইতোমধ্যে প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হলেও নতুন করে আরেক দফা বাড়ানোর জন্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছে সংশ্লিষ্টরা।

এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক শামছুল আলম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্রকল্পটির ৯৫ শতাংশ কাজ শেষ। এখন প্রজেক্ট কমপ্লিশন রিপোর্ট (পিসিআর) দেওয়ার বাকি। এ ছাড়া কিছু কাজ রয়েছে, যেগুলোর ফিনিশিং দেওয়ার বাকি। বর্ষা মৌসুম হওয়ায় কাজ একটু দেরি হচ্ছে। অল্প কিছু কাজ বাকি থাকায় মেয়াদ বাড়ানোর জন্য আবেদন করেছি। মন্ত্রণালয় যে সময়টুকু দেয়, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ হবে। তবে মেয়াদ বাড়লেও ব্যয় বাড়েনি। একই অবস্থা পানি সরবরাহে আর্সেনিক ঝুঁকি নিরসন প্রকল্পের। এ প্রকল্পের আওতায় ৩ হাজার ২০০ ইউনিয়নে আর্সেনিক শনাক্তকরণ, গবেষণা ও উন্নয়নমূলক কার্যক্রম, সেফ ওয়াটার ডিভাইস স্থাপন, ৯৯ হাজার ৮৯৮টি ডিপ টিউবওয়েল, ৫২ হাজার ৬৩৮টি তারা পাম্প, ১ হাজার ১৫৬টি পন্ডস্যান্ড ফিল্টার, ২ হাজার ৩৯০টি রিং ওয়েল, ৯৫৫টি রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং, ৬২টি গ্রামীণ পাইপড ওয়াটার সাপ্লাই স্কিম, ৩৫টি লবণাক্ত দূরীকরণ প্লান্ট, ৪ হাজার ৭২৩টি আর্সেনিক আয়রন রিমুভাল প্লান্টসহ পানির উৎস, ২ হাজার ৫৮০টি পরীক্ষামূলক নলকূপসহ আনুষঙ্গিক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করার কথা। প্রকল্পটি ২০১৮ সালের জানুয়ারি শুরু হয়ে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে শেষ হওয়ার কথা। ডিপিএইচইর ওয়েবসাইটের সবশেষ আগস্টের হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, প্রকল্পটি ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত রাখা আছে। কিন্তু প্রকল্প চলমান। প্রকল্পের সার্বিক বিষয়ে জানতে প্রকল্প পরিচালক বিধান চন্দ্র দে কে মোবাইলফোনে কল দিলে তিনি রিসিভ করেননি। জামালপুর জেলার তিনটি পৌরসভার পানি সরবরাহ ও এনভায়রনমেন্টাল স্যানিটেশন ব্যবস্থার উন্নতিকরণ প্রকল্পটি ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে নেওয়া হয়েছে। মেয়াদ ধরা হয়েছে ২০২২ সালের জুন। ৮৭ কোটি ৩২ লাখ টাকার প্রকল্পটির মেয়াদ আরেক দফা বাড়ানো হয়েছে। এ বিষয়ে প্রকল্প পরিচালক মো. আবদুল আউয়াল বলেন, প্রকল্পটি ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। তবে প্রকল্প ব্যয় বাড়ানো হয়নি। মেয়াদ কেন বাড়াতে হলো প্রশ্ন করতেই তিনি কল কেটে দেন। একই অবস্থা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের আরও ১৩ প্রকল্পের। ডিপিএইচই সূত্রে জানা গেছে, সংস্থাটির বর্তমানে মোট ৩৭টি প্রকল্প চলমান রয়েছে। এর মধ্যে ১৬টি প্রকল্পের মেয়াদ কয়েক দফা বাড়ানো হয়েছে। এর মধ্যে কিছু প্রকল্পের মেয়াদ নতুন করে বাড়ানো হয়েছে, আবার কিছু প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর কার্যক্রম চলমান রয়েছে। সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী মো. সাইফুর রহমান বলেন, দেশজুড়ে আমাদের ৩৭ প্রকল্প চলমান রয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটি প্রকল্প অর্থ সংকটে ধীরগতিতে এগোচ্ছে। অনেক প্রকল্প চলমান থাকায় মন্ত্রণালয় পর্যাপ্ত বরাদ্দ দিতে পারছে না। এ ছাড়া করোনাকালীন সময়ে কাজ ব্যাহত হওয়ায় প্রকল্পগুলো যথা সময়ে বাস্তবায়ন না হওয়াকে দূষছেন তিনি। ডিপিএইচইর ওয়েবসাইটের সবশেষ হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, মেয়াদ শেষ হওয়া ১৬ প্রকল্পের মধ্যে পরিবেশবান্ধব সোলার ওয়াটার ডিস্যালাইনেশন ইউনিট স্থাপনের মাধ্যমে নিরাপদ পানি সরবরাহকরণ প্রকল্পটি ২০১৯ সালের এপ্রিলে শুরু হয়ে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে শেষ হয়। সুনামগঞ্জ জেলার দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার পল্লী এলাকায় নিরাপদ পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন প্রকল্পটি ২০১৯ সালের এপ্রিলে শুরু হয়ে ২০২২ সালের জুনে শেষ হয়। একই অবস্থা সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর উপজেলার পল্লী এলাকায় নিরাপদ পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন প্রকল্পটির। খাগড়াছড়ি জেলার বিভিন্ন গ্রামে নিরাপদ পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন ব্যবস্থাপনা প্রকল্পটি ২০১৯ সালের এপ্রিলে শুরু হয়ে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে শেষ হয়। একই অবস্থা নোয়াখালী জেলাধীন চৌমুহনী পৌরসভায় পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন ব্যবস্থার সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন প্রকল্পটির।

পানির গুণগতমান পরীক্ষা ব্যবস্থাপনা শক্তিশালীকরণ প্রকল্পটি ২০১৯ সালের এপ্রিলে শুরু হয়ে ২০২২ সালের জুনে শেষ হয়। দেশের পৌরসভাগুলোর নলকূপগুলোর পুনরুজ্জীবিতকরণ প্রকল্পটি ২০২০ সালের জানুয়ারিতে শুরু হয়ে ২০২২ সালের জুনে শেষ হয়। হাওর অঞ্চলে টেকসই পানি সরবরাহ, স্যানিটেশন ও হাইজিন ব্যবস্থা উন্নয়ন প্রকল্পটি ২০২০ সালের জানুয়ারিতে শুরু হয়ে ২০২২ সালের জুনে শেষ হয়। বান্দরবান পৌরসভা এবং বান্দরবান জেলার তিনটি উপজেলা সদরসহ পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোতে নিরাপদ পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশন ব্যবস্থার সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন প্রকল্পটি ২০২০ সালের জানুয়ারিতে শুরু হয়ে ২০২২ সালের জুনে শেষ হয়। শহর অবকাঠামো উন্নয়ন (ডিপিএইচই অংশ) প্রকল্পটি ২০১৯ সালের জুলাইতে শুরু হয়ে ২০২২ সালের জুনে শেষ হয়। পানি সরবরাহ, স্যানিটেশন ও স্বাস্থ্য শিক্ষা প্রকল্পটি ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে শুরু হয়ে ডিসেম্বর ২০২১ শেষ হয়। স্যালাইন ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট প্রকল্পটি ২০১৩ সালের এপ্রিলে শুরু হয়ে ২০২১ সালের জুনে শেষ হয়। এ ছাড়া আরও তিনটি প্রকল্পের মেয়াদ ডিসেম্বরে শেষ হবে।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর