বুধবার, ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

বাড়ছে চোখ ওঠা রোগ

একজন আক্রান্ত হলে ছড়িয়ে পড়ছে পুরো পরিবারে, ভীত না হওয়ার পরামর্শ চিকিৎসকদের

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর মগবাজারের বাসিন্দা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলী ইকরামুল ইসলাম। ১৬ সেপ্টেম্বর হঠাৎ চোখ ফুলে লাল হয়ে যায় তার। সঙ্গে তীব্র ব্যথা। বুঝতে পারেন চোখ ওঠা রোগে আক্রান্ত হয়েছেন তিনি। পরদিন একই পরিস্থিতি দেখা যায় তার বড় ভাই সাইফ ইমনের। এরপরে আক্রান্ত হয় তার বোন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নিশাত তাসনিম। তিন ভাই-বোনের পরে আক্রান্ত হন তাদের মা।

রাজধানীসহ সারা দেশে চোখ ওঠা অর্থাৎ কনজাংটিভাইটিস রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। ছোঁয়াচে এই রোগে একজন আক্রান্ত হলে ছড়িয়ে পড়ছে পুরো পরিবারে। চিকিৎসকরা বলছেন, আক্রান্ত হলে ভীত না হয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে। ফার্মেসি থেকে চিকিৎসকেরা পরামর্শ ছাড়া স্টেরয়েড ধরনের ড্রপ কিনে ব্যবহার না করতে নিষেধ করেছেন চিকিৎসকরা।

জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের ভিট্রো রেটিনা ফেলো ডা. আতিকুল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘দেশে দু-তিনটি মৌসুমে এই ভাইরাল কনজাংটিভাইটিস ইনফেকশন হয়। বৃষ্টি, গরম, শীতের সময় সংক্রমণ বেশি হয়। বেশির ভাগ রোগী সাত দিনের মধ্যে এমনিতেই সুস্থ হয়ে যায়। কিন্তু ফার্মেসি থেকে অনেকে উল্টোপাল্টা ড্রপ কিনে ব্যবহার করে বিপদ ডেকে আনে। রোগী কিছু না দিয়ে যদি কিছু নিয়ম মেনে চলে তাহলেও চলবে। চোখ, হাত পরিষ্কার রাখা, ব্যবহৃত টিস্যু ফেলে দেওয়া, ব্যক্তিগত সামগ্রী যেমন- সানগ্লাস কাউকে ব্যবহার করতে না দেওয়া। তাহলে রোগ ছড়াবে না। তিন দিনের মধ্যে চোখের অবস্থার উন্নতি না হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।’ চোখ ওঠা রোগের লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে- চোখ দিয়ে পানি পড়া, চোখ লাল হওয়া, অনেক সময় চোখের পাতা ফুলে যায়, চোখ জ্বলে যায়, অনেক সময় ব্যথা হয়।’ বাড্ডার একটি মাদরাসায় চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে তাওসিফ। ওই প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকসহ কয়েকজন শিক্ষার্থী চোখ ওঠা রোগে আক্রান্ত হয়েছে। সেখান থেকে আক্রান্ত হয় তাওসিফ। তিন দিন আগে চোখ লাল হয়ে ফুলে যায় তার। সঙ্গে চোখ থেকে পানি পড়ছে তার। তার পরিবার জানায়, চোখ লাল হয়ে ফুলে গেলে একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেয় তার পরিবার। চিকিৎসক জানান, চোখ ওঠা রোগে আক্রান্ত তাওসিফ। একটা ড্রপ ব্যবহারের পরামর্শ দেন তিনি। এতে দুই দিনেই চোখের অবস্থা অনেকটা ভালো হয়েছে তার।

ইস্পাহানি ইসলামিয়া চক্ষু ইনস্টিটিউটের রেটিনা ও ইউভিয়া বিভাগের কনসালটেন্ট এবং সহকারী অধ্যাপক ডা. মোমিনুল ইসলাম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ভাইরাস সংক্রমণের কারণে মানুষ কনজাংটিভাইটিস বা চোখ ওঠা রোগে মানুষ আক্রান্ত হয়। এটা বেশ ছোঁয়াচে। বাড়িতে একজনের হলে সেখান থেকে অন্য সদস্যরা আক্রান্ত হতে পারে। তাই চোখ দিয়ে পানি এলে টিস্যু পেপার দিয়ে মুছে ফেলে দিতে হবে, যেন কারও হাতে না লাগে। এক চোখ থেকে অনেক সময় আরেক চোখ আক্রান্ত হয়। তাই যে চোখ আক্রান্ত হবে সে দিকে কাত হয়ে ঘুমাতে হবে। যাতে ওই চোখের পানি অন্য চোখে না যায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘এক পরিবারে একজনের হলে আরও অনেকের হচ্ছে। এটা নিয়ে ভয়ের কিছু নাই। সাধারণত এমনিতেই সেরে যায়। প্রয়োজনে চক্ষু বিশেষজ্ঞকে দেখাতে পারেন রোগী। কিন্তু অনেক সময় রোগীরা চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই ফার্মেসি থেকে স্টেরয়েড ধরনের ড্রপ কিনে ব্যবহার করছেন। এতে চোখে ইনফেকশন বেড়ে যাচ্ছে, প্রেশার বাড়ছে। এসব ড্রপের কারণে ছানি পড়ার প্রবণতা বাড়ে। গ্রামেগঞ্জে অনেকে শামুকের পানি, গাছের রস ব্যবহার করছে, চোখে ফু দেওয়া হচ্ছে, পানি দেওয়া হচ্ছে। হাতুড়ে অপচিকিৎসার কারসাজিতে চোখে আলসার হচ্ছে। এতে চোখের আলো চিরতরে হারিয়ে যাচ্ছে, অন্ধ হচ্ছে মানুষ।’

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর