শুক্রবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা
ফুটবলারের বাবাকে হুমকি

দুই পুলিশ সদস্য ক্লোজড, মিষ্টি নিয়ে এলেন ওসি

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি

সরকার থেকে পাওয়া জমি নিয়ে আদালতের সমন বুঝে নিতে চ্যাম্পিয়ন দলের নারী ফুটবলার আঁখি খাতুনের বাবাকে শাসিয়েছিল সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর থানা পুলিশ। আদালতের কাগজে সই করতে রাজি না হওয়ায় আঁখির বাবাকে থানায় উঠিয়ে নিয়ে যাওয়ারও হুমকি দিয়েছিলেন শাহজাদপুর থানার এএসআই মামুন।

জানা গেছে, নারী ফুটবল দলের ডিফেন্সের খেলোয়াড় আঁখি খাতুনের বাবাকে হুমকি দেওয়ার অভিযোগে শাহজাদপুর থানার সহকারী উপ-পরিদশক (এএসআই) মামুনুর রশিদ ও কনস্টেবল আবু মুসাকে ক্লোজড করা হয়েছে। এ বিষয়ে গতকাল দুপুরে সিরাজগঞ্জ পুলিশ সুপার আরিফুর রহমান মণ্ডল (বিপিএম-বার) বলেন, ‘ফুটবলার আঁখির বাবাকে হুমকি দেওয়ার ঘটনায় ওই দুই পুলিশ সদস্যকে ক্লোজড করা হয়েছে। একই সঙ্গে সহকারী পুলিশ সুপার (শাহজাদপুর সার্কেল)-কে তদন্তের জন্য বলা হয়েছে।’ প্রসঙ্গত, সাফ উইমেন্স চ্যাম্পিয়নশিপ জিতে নতুন ইতিহাস গড়েছে বাংলাদেশ। শিরোপা জয়ে দেশজুড়ে বইছে আনন্দের বন্যা। ওই ঘটনার বিষয়ে ডিফেন্ডার আঁখি বলেন, ‘গত বুধবার সন্ধ্যায় শাহজাদপুর থানা থেকে এসআই মামুন আমাদের বাড়িতে এসে আমার বাবাকে আদালতের একটি কাগজে সই করতে বলেন। আমার বাবা সেই কাগজে সই করতে রাজি হননি। তাই আমার বাবাকে এএসআই মামুন থানায় নিয়ে যাবেন বলে হুমকি দেন এবং গালমন্দ করেন। পরে বাবা আমাকে ফোনে বিষয়টি জানান। মামুন তাকে বলেছেন, আমি বাড়ি যাওয়ার পর থানায় যেতে হবে আমাকে। আসলে এদিন এমন এক আনন্দঘন মুহূর্তে এমন সংবাদে আমার মনটা অনেক খারাপ হয়ে গিয়েছিল।’

আঁখির বাবা আক্তার হোসেন বলেন, ‘বুধবার সন্ধ্যায় থানা থেকে এএসআই মামুন সাহেব এসে আমাকে একটা কাগজ দিয়ে বলেন- আঁখি তো বাড়িতে নেই, তার পরিবর্তে আপনি এই কাগজে সই দেন। আমি বলি কেন সই  দেব? আমি তো বাদী বা আসামি কোনোটাই না। আমি পুলিশকে বলেছি, আপনারা ইউএনও বা ডিসি স্যারের সঙ্গে কথা বলেন। তখন কটূক্তি করে আরেক পুলিশ সদস্য আমাকে ধরে নিয়ে যাবে বলেছে। আসলে জায়গা তো আমাদের সরকার দিয়েছে। কোনো মামলা বা অভিযোগ হলে সরকারের নামে হবে। আমাদের নামে কেন আদালত সমন পাঠাবে?’ এ বিষয়ে শাহজাদপুর থানার এএসআই মামুন বলেন, ‘আসলে যে ঘটনাটা, তা সত্য না। আঁখির নামে শাহজাদপুরের দাবারিয়াতে একটি জায়গা আছে, সেই জায়গা নিয়ে মোকারম হোসেন নামে এক ব্যক্তি সিরাজগঞ্জ অতিরিক্ত জেলা জজ আদালতে অভিযোগ দায়ের করেন। সেই অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত শান্তির লক্ষ্যে ১৪৪ ধারা জারি করে একটি নোটিস  প্রেরণ করেন। আমি আদালতের সেই কাজটি বুঝে নিতে স্বাক্ষর দিতে বলি। কিন্তু আঁখির বাবা স্বাক্ষর দিতে রাজি না হলে আমি থানায় চলে আসি। আমি তাকে কোনো প্রকার হুমকি-ধমকি দিইনি বা থানায়ও নিয়ে আসতে চাইনি।’ শাহজাদপুর থানার অফিসার ইনচার্জ নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আসলে ঘটনাটায় একটু ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে। পরে রাতেই আমি ও আমার এএসআইকে সঙ্গে করে মিষ্টি নিয়ে আঁখিদের বাড়িতে যাই এবং এই ভুল বোঝাবুঝির ঘটনাটা মিউচুয়াল করে দিই। আসলে আদালতের সমন এলে আমাদের সেই কাজ করতে হয়। বিষয়টি তেমন কিছু না।’ শাহজাদপুর উপজেলার নির্বাহী অফিসার তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘আঁখিকে যে জায়গা দেওয়া হয়েছে সেটা সরকারের একটা নিষ্কণ্টক জায়গা। এখানে কোনো সমস্যা নেই। তবে এক ব্যক্তি যে অভিযোগ দিয়েছে তা আমরা তদন্ত করে দেখব। আদালতে প্রতিবেদন জমা দেব। আঁখির এই জায়গা নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না।’

 

সর্বশেষ খবর