মঙ্গলবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা
আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সম্মেলন

খাদ্য নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য সুরক্ষায় পরমাণুর ব্যবহার চায় বাংলাদেশ

জিন্নাতুন নূর, ভিয়েনা (অস্ট্রিয়া) থেকে

খাদ্য নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য সুরক্ষায় পরমাণুর ব্যবহার চায় বাংলাদেশ

করোনাভাইরাস মহামারির অভিঘাত ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের জের ধরে বৈশ্বিক সংকটের এই সময়ে খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত ও স্বাস্থ্য সুরক্ষাসহ কৃষি খাতে ফলন বাড়াতে পরমাণু শক্তির ব্যবহার চায় বাংলাদেশ। পরমাণু শক্তির ব্যবহার বাড়ানোর ক্ষেত্র তৈরির প্রত্যাশা নিয়ে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিয়েছে। অস্ট্রিয়ার ভিয়েনায় ভিয়েনা ইন্টারন্যাশনাল সেন্টারে আইএইএ-এর ৬৬তম অধিবেশনটি স্থানীয় সময় গতকাল সোমবার সকালে শুরু হয়। সংস্থাটির ১৭৫টি সদস্যরাষ্ট্র এতে অংশ নিচ্ছে। আছে বিশ্ব পরমাণু ক্লাবের ৩৩তম সদস্যরাষ্ট্র বাংলাদেশ।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমানের নেতৃত্বে এই সম্মেলনে আরও যোগ দিয়েছেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জিয়াউল হাসান এবং নির্মাণাধীন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালক ড. শৌকত আকবর। অস্ট্রিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাস ও জাতিসংঘের স্থায়ী মিশনের প্রধান চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স রাহাত বিন জামান জানিয়েছেন, এ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে জাতিসংঘের এই আণবিক সংস্থাটির সঙ্গে আরও নিবিড় যোগাযোগ গড়ে তুলতে চায় বাংলাদেশ। আইএইএর কারিগরি সহযোগিতাবিষয়ক কর্মসূচির আওতায় চিকিৎসা ও স্বাস্থ্য সুরক্ষা, কৃষি উৎপাদন বাড়ানো ও খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং শিক্ষা নিয়ে কাজ করতে চায় বাংলাদেশ। রাহাত বিন জামান বলেন, ‘কৃষি, খাদ্য নিরাপত্তা, চিকিৎসা, ক্যানসারসহ নানা চিকিৎসাসেবার মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রজেক্টে আইএইএ আমাদের সঙ্গে কাজ করে। জনবলকে প্রশিক্ষণ দেয়, নানা ধরনের সাহায্য সহযোগিতা করে থাকে। আমরা সেই জায়গাটিকে আরও জোরদার করতে চাই।’ বিশ্বজুড়ে পরমাণুর শান্তিপূর্ণ ব্যবহার নিশ্চিত করতেও আইএইএর সঙ্গে বাংলাদেশ যৌথভাবে কাজ করছে বলে জানান ভিয়েনায় ভারপ্রাপ্ত এই রাষ্ট্রদূত। তিনি বলেন, ‘রূপপুরে আমরা নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট করছি, যেটির কাজ সফলতার সঙ্গে এগিয়ে যাচ্ছে। সেই প্রকল্পের সেফটি, সিকিউরিটি ইস্যুতে আইএইএর সঙ্গে আমাদের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। তারা আমাদের কারিগরি পরামর্শক হিসেবে সহযোগিতা করছে।’ এ ছাড়া প্রয়োজনীয় জনবলকে প্রশিক্ষণও দিচ্ছে বলে জানান ভিয়েনায় বাংলাদেশের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স। রাহাত বিন জামান বলেন, ‘এই সহযোগিতা আরও বাড়িয়ে নিতে চাই এবং প্ল্যান্টের কার্যক্রম সফলভাবে সম্পন্ন হওয়ার পর এই প্ল্যান্ট থেকে যখন বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে তখনো আমরা চাই এ সহযোগিতা অব্যাহত থাকুক।’ আন্তর্জাতিক এ সম্মেলন চলবে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। পাঁচ দিনের এই সম্মেলনে পরমাণুর শান্তিপূর্ণ ব্যবহার নিশ্চিত করার ওপরই জোর দিচ্ছে সব রাষ্ট্রের প্রতিনিধিরা। রাশিয়া-ইউক্রেনের চলমান যুদ্ধ বিষয়টিকে আরও বেশি ভাবিয়ে তুলছে। তাই বিশ্বজোড়া শান্তি প্রতিষ্ঠায় পরমাণুর শান্তিপূর্ণ ব্যবহারকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মানছেন সম্মেলনে যোগ দিতে আসা বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা। তবে ক্যানসারের মতো দুরারোগ্য রোগের চিকিৎসায় পরমাণুকে কীভাবে ব্যবহার করা যায় সে বিষয়টিও গুরুত্ব সহকারে উঠে এসেছে এ সম্মেলনে। পরমাণু ব্যবহারের মধ্য দিয়ে ক্যানসার চিকিৎসায় ‘আশার আলো’ বা ‘রেইস অব হোপ’ দেখতে চান পরমাণু বিজ্ঞানীরা। এবারের সাধারণ সভায় এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করবেন বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা।

ভিয়েনায় এক টুকরো রূপপুর : নিজ নিজ দেশে পরমাণুর ব্যবহার নিয়ে ভিয়েনা ইন্টারন্যাশনাল সেন্টারে প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছে পরমাণু শক্তিধর দেশগুলো। রাশিয়া, চীন, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্সের পাশাপাশি আছে বাংলাদেশও। বাংলাদেশের স্টলটিতে প্রতিনিধিত্ব করছেন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিভাগীয় প্রধান (অর্থ ও প্রশাসন) অলক চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ‘এর উদ্দেশ্য হলো বাংলাদেশকে তুলে ধরা, বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করা, বাংলাদেশের পতাকাকে তুলে ধরা।’ এই স্টলের মধ্য দিয়ে পরমাণুর শান্তিপূর্ণ ব্যবহারে বাংলাদেশের অবস্থানও তুলে ধরা হচ্ছে বলে জানান তিনি। অলক চক্রবর্তী বলেন, ‘অতি অল্প সময়ের মধ্যে তেল-গ্যাসসহ অন্যান্য জ্বালানি-নির্ভরতা কমিয়ে পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের টেকসই জ্বালানি ও ১৯৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশের যে স্বপ্ন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেখেছেন, এ বিষয়টা সারা পৃথিবীর কাছে তুলে ধরার প্রয়াস এই স্টল।’ দেখা গেছে বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা ভিড় করছেন এক টুকরো বাংলাদেশে। তারা জানতে চাইছেন বাংলাদেশের পরমাণুর ব্যবহার নিয়ে, কেউ আবার খোঁজ রাখছেন বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অগ্রগতি নিয়ে। আন্তরিকভাবেই দর্শনার্থীদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছেন স্টলে বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা। দর্শনার্থীদের জন্য শুভেচ্ছা উপহারও রেখেছে বাংলাদেশ। সোনালি আঁশ খ্যাত পাটের তৈরি ব্যাগ, কোটপিন, কলম, মাস্ক, চাবির রিং, চকলেটসহ নানা সামগ্রীও শোভা পাচ্ছে স্টলটিতে। এদিকে থ্রিডি অ্যানিমেশনে রাশিয়া তুলে ধরেছে তুর্কিয়েতে তাদের নতুন পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের আদ্যোপান্ত। সর্বাধুনিক প্রযুক্তিতে চারটি পারমাণবিক চুল্লি থাকবে নির্মিতব্য কেন্দ্রটিতে। প্রতিটি ইউনিট থেকে ১ হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হওয়ার কথা রয়েছে।

 

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর