শনিবার, ১ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা

তিন রোগে নাকাল মানুষ

করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যু ঊর্ধ্বমুখী, ডেঙ্গুজ্বরে সেপ্টেম্বরেই মারা গেছেন ৩৪ জন, ঘরে ঘরে চোখ ওঠা রোগী

জয়শ্রী ভাদুড়ী

তিন রোগে নাকাল মানুষ

দেশে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। গড়ে প্রতিদিন ৬ শতাধিক মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে করোনায়। তার সঙ্গে বাড়ছে প্রাণহানি। সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত ভেঙেছে বছরের রেকর্ড। এ মাসে ডেঙ্গুতে মারা গেছেন ৩৪ জন। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে মৌসুমি সংক্রামক রোগ চোখ ওঠা। স্কুল, কলেজ, অফিস, কর্মক্ষেত্র থেকে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। তিন রোগে নাকাল জনজীবন।

ইমেরিটাস অধ্যাপক ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘জ্বর এলে করোনা এবং ডেঙ্গু টেস্ট করাতে হবে। টেস্ট করে ডেঙ্গু কিংবা করোনা পজিটিভ হলে চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ সেবন করতে হবে। চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া কেউ অ্যান্টিবায়োটিক কিনে সেবন করবেন না। চোখ উঠলে ভয়ের কিছু নেই। চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ ব্যবহার করলে সাধারণত সাত দিনের মধ্যে সেরে যায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘অনেকে চিকিৎসকের তোয়াক্কা না করে ফার্মেসি থেকে বিভিন্ন ড্রপ কিনে ব্যবহার করেন। এতে চোখের ক্ষতি হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়লে টিস্যু কিংবা রুমাল দিয়ে মুছে তা যেখানে-সেখানে রাখা যাবে না। অন্য কারও সংস্পর্শে এলে সেখানে লেগে থাকা জীবাণুতে তারাও সংক্রমিত হতে পারেন।’ রাজধানীর মগবাজারের বাসিন্দা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলী ইকরামুল ইসলাম। গত ১৬ সেপ্টেম্বর হঠাৎ চোখ ফুলে লাল হয়ে যায় তার। সঙ্গে তীব্র ব্যথা। বুঝতে পারেন চোখ ওঠা রোগে আক্রান্ত হয়েছেন তিনি। পরদিন একই পরিস্থিতি দেখা যায় তার বড় ভাই সাইফ ইমনের। এরপর আক্রান্ত হন তার বোন বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নিশাত তাসনিম। তিন ভাই-বোনের পর আক্রান্ত হন তাদের মা।

রাজধানীসহ সারা দেশে চোখ ওঠা অর্থাৎ কনজাংটিভাইটিস রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। ছোঁয়াচে এ রোগে একজন আক্রান্ত হলে ছড়িয়ে পড়ছে পুরো পরিবারে। চিকিৎসকরা বলছেন, আক্রান্ত হলে ভীত না হয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে। জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের ভিট্রো রেটিনা ফেলো ডা. আতিকুল হক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে              বলেন, ‘দেশে দু-তিনটি মৌসুমে এ ভাইরাল কনজাংটিভাইটিস ইনফেকশন হয়। বৃষ্টি, গরম, শীতের সময় সংক্রমণ বেশি হয়। বেশির ভাগ রোগী সাত দিনের মধ্যে এমনিতেই সুস্থ হয়ে যান। কিন্তু ফার্মেসি থেকে অনেকে উল্টাপাল্টা ড্রপ কিনে ব্যবহার করে বিপদ ডেকে আনেন। রোগীরা চোখে ওষুধ না দিয়ে যদি কিছু নিয়ম মেনে চলে তাহলেও চলবে। চোখ, হাত পরিষ্কার রাখা, ব্যবহৃত টিস্যু ফেলে দেওয়া, ব্যক্তিগত সামগ্রী যেমন- সানগ্লাস কাউকে ব্যবহার করতে না দেওয়া। তাহলে রোগ ছড়াবে না। তিন দিনের মধ্যে চোখের অবস্থার উন্নতি না হলে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।’ চোখ ওঠা রোগের লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে- চোখ দিয়ে পানি পড়া, চোখ লাল হওয়া, অনেক সময় চোখের পাতা ফুলে যায়, চোখ জ্বালাপোড়া করা, অনেক সময় ব্যথা হয়।’

এদিকে, দেশে করোনা সংক্রমণের হার আবার বাড়তে শুরু করেছে। শুক্রবারে টেস্ট কম হওয়ায় রোগী শনাক্তের হার কম থাকে। কিন্তু সপ্তাহের অন্যান্য দিনে ৬ শতাধিক মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। আক্রান্ত বাড়লেই মৃত্যুর ঘটনাও বেড়ে যায়। ২০২০ সালের ৮ মার্চ দেশে প্রথম রোগী শনাক্ত হয়। এরপর করোনার চার ঢেউ সামলেছে দেশ। বিভিন্ন ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণে বেড়েছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা। সেপ্টেম্বরের শুরু থেকে আবার বাড়তে শুরু করেছে করোনা সংক্রমণ। এখন ভরা মৌসুমে প্রতিদিন প্রায় ৫০০ জন ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ৫০৬ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এ বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ১৬ হাজার, মারা গেছেন ৫৫ জন। এর মধ্যে এ মাসেই মারা গেছেন ৩৪ জন। জ্বর এলে টেস্ট করালে অধিকাংশ রোগীরই ডেঙ্গু পজিটিভ রিপোর্ট আসছে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী সাইফুল ইসলামের গত ২২ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যা থেকে গলাব্যথা ও জ্বর জ্বর লাগে। তিনি বলেন, দুই দিন রোদে বেশি ঘোরাঘুরি করায় এরকম হয়েছে ভেবে ডেঙ্গু টেস্ট করাইনি। কিন্তু তিন দিন পর থেকে তীব্র জ্বর আসে এবং কিছুতেই কমে না। এতে ঘাবড়ে গিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শে ডেঙ্গু টেস্ট করাই। সন্ধ্যায় ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে জানায়, রিপোর্ট পজেটিভ। তারা ই-মেইলেও রিপোর্ট পাঠিয়ে দেয়। এখন চিকিৎসকের পরামর্শে পর্যাপ্ত তরল পানীয়, খাবার এবং কিছু ওষুধ খাচ্ছি। শুরু থেকে চিকিৎসা না নেওয়ায় সমস্যা দেখা দিয়েছে বলে জানান তিনি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর