শনিবার, ১ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা
অষ্টম কলাম

সীমান্তে হাতির তান্ডব এবার গুঁড়িয়ে দিল বসতঘর

সৈয়দ নোমান, ময়মনসিংহ

ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলার ভুবনকুড়া ইউনিয়নের কড়ইতলী গ্রাম। যে গ্রামে রাতের অন্ধকারে হানা দেয় হাতির দল। রাতভর গ্রামে দাপিয়ে বেড়ায় ৪০ থেকে ৫০টি বন্যহাতির দল। ভোর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তারা ফিরে যায় জঙ্গলে। তবে যাওয়ার সময় নষ্ট করে ফসলি জমি, গুঁড়িয়ে দিয়ে যায় বসতঘর। এসব রক্ষা করতে যারা প্রতিরোধ গড়তে চায় তাদের মরতে হয় হাতির পায়ের নিচে পিষ্ট হয়ে। সবশেষ গতকাল ভোরে হানা দিয়ে একই গ্রামের দুটি বসতবাড়ি গুঁড়িয়ে দেয়।

বাড়ির গৃহকর্ত্রী সাহেরা খাতুন জানান, হাতির চিৎকার শুনেই আমরা ঘরবাড়ি ছেড়ে দৌড়ে পালিয়েছি। এ সময় আমার থাকার ঘরটি হাতির দল ভেঙে ফেলেছে। পরিবার নিয়ে অন্যের বাড়িতে গিয়ে রাত কাটিয়েছি।

কৃষক আবু শাহ আলম বলেন, হাতির দল আগুন ও মানুষ দেখেও ভয় পায় না। হইহুল্লোড় করেও কাজ হয় না। আমরা এখন নিরুপায়। দিশাহারা।

জয়নাল মিয়া নামের অপর এক কৃষক জানান, এক সপ্তাহ ধরে আমরা আতঙ্কে আছি। সারা রাত জাইগা পাহারা দিয়েও ফসল রক্ষা করতে পারতেছি না। হাতি আতঙ্ক পিছু ছাড়ছেই না। সরকারের কাছে দ্রুত দাবি জানাই আমাদের সীমান্তবাসীকে হাতির তান্ডব থেকে রক্ষা করতে।

স্থানীয়রা জানান, গত ১৫ দিনে হাতি ও হাতি তাড়ানোর ফাঁদে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট উপজেলার ভুবনকুড়া ইউনিয়নের কড়ইতলী গ্রামে ভারতীয় বন্যহাতির তান্ডবে প্রাণ হারিয়েছেন দুজন। ঘটেছে আহত হওয়ার ঘটনাও। ১৫ সেপ্টেম্বর রাতে ভারতীয় বন্যহাতির আক্রমণ থেকে আবাদি জমির ফসল রক্ষা করতে গিয়ে হাতির পায়ে পিষ্ট হয়ে কড়ইতলী গ্রামের বৃদ্ধ নওশের আলীর মৃত্যু হয়। এই শোক না কাটতেই গত ২০ সেপ্টেম্বর বন্যহাতি তাড়ানোর জন্য জেনারেটরের মাধ্যমে বৈদ্যুতিক ফাঁদ তৈরির সময় নিহত হন ওই গ্রামেরই জাহাঙ্গীর আলম (৩৫)। স্থানীয়রা জানান, সীমান্তবর্তী পাহাড়ি এলাকায় খাদ্যের সন্ধানে অন্তত এক সপ্তাহ ধরে একটিলা থেকে অন্য টিলায় চষে বেড়াচ্ছে পাহাড়ি বন্যহাতির পাল। সন্ধ্যা হলেই নেমে এসে লোকালয়ে হানা দিয়ে ফসলি জমি নষ্ট করছে। ফসল রক্ষায় নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন কৃষকরা।

ময়মনসিংহ বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, পাহাড়ি বন্যহাতির দল উপজেলার সীমান্তবর্তী কড়ইতলী, বানাইপাড়া, মহিষলেটি, জামগড়া, ধোপাজুরী, কোচপাড়া, রঙ্গমপাড়াসহ পার্শ্ববর্তী নালিতাবাড়ী উপজেলার পাহাড়ি এলাকার প্রায় ৬০ কিলোমিটার সীমান্ত চষে বেড়ায় বন্যহাতির দল।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ এম সুরুজ মিয়া বলেন, হাতি তাড়াতে পরিষদ থেকে এলাকার কৃষকদের বিভিন্ন সময় ডিজেল, টর্চ লাইট দিয়ে সহযোগিতা করা হচ্ছে।

এ ব্যাপারে বন বিভাগের গোপালপুর শাখার বিট কর্মকর্তা মো. মাজহারুল হক বলেন, গত কয়েকদিন ধরে হালুয়াঘাটের সীমান্তে হাতির পাল লোকালয়ে ঢুকছে। এ ব্যাপারে সরকারের বেশ কিছু পরিকল্পনা রয়েছে। পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হবে।

উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. মাসুদুর রহমান বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের তালিকা করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর