শনিবার, ১ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা

মুক্তিযোদ্ধা কোটায় সুবিধা পেতে স্ত্রীকে বোন পরিচয়

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি

মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হিসেবে সরকারি সুযোগ-সুবিধা পেতে শ্বশুর ও শাশুড়িকে মা-বাবার পরিচয় দিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করেছেন এক নারী। এ ছাড়া তিনি দাখিল মাদরাসায় অনিয়মিত শিক্ষার্থী হিসেবে ভর্তি হয়েছেন শ্বশুর ও শাশুড়িকে মা-বাবার পরিচয় দিয়ে। ওই নারীর স্বামীও জাল পরিচয়পত্র তৈরি করে সরকারি চাকরি নেওয়ার অভিযোগে উপজেলা নির্বাচন অফিস থেকে মামলা দেওয়া হয়েছে। জাতীয় পরিচয়পত্র অনুযায়ী ভাই- বোন পরিচয়ের এই স্বামী-স্ত্রীর নাম আনিছুর রহমান ও সোনালী খাতুন। আনিছুরের বাবার নাম বীর মুক্তিযোদ্ধা আইনুল হক। তার বাড়ি কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার সন্তোষপুর ইউনিয়নের কুটিনাওডাঙ্গা আমিরটারী তালেবেরহাট গ্রামে। জানা যায়, বীর মুক্তিযোদ্ধা আইনুল হকের আট সন্তানের মধ্যে বড় ছেলে আনিছুর রহমানের সঙ্গে সোনালী খাতুনের বিয়ে হয় ২০০৭ সালে। সোনালী একই জেলার উলিপুর উপজেলার গুনাইগাছ ইউনিয়নের নাগরাকুড়া গ্রামের মৃত রবিউল ইসলামের মেয়ে। তাদের সংসারে তিনটি সন্তান রয়েছে। বিয়ের পর সোনালী তথ্য গোপন করে নিজের শ্বশুর ও শাশুড়িকে বাবা-মা পরিচয় দিয়ে ভোটার হন। এই পরিচয়ে তিনি উপজেলার সাপখাওয়া দাখিল মাদরাসায় ২০১০-১১ সেশনে অনিয়মিত শিক্ষার্থী হিসেবে ভর্তিও হন। এই মাদরাসা থেকে সোনালী খাতুন ২০১৩ সালে জিপিএ ২.৯৪ পেয়ে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। অপরদিকে তার স্বামী আনিছুর রহমান ও তার ছোট ভাই আজিজুল হক আলাদা ব্যক্তি হলেও তারা দুজন ভোটার আইডি কার্ডে একই নাম ব্যবহার করেন। সেখানে আনিছুর রহমান ও আজিজুল হক দুজনে আনিছুর রহমান নাম ব্যবহার করেন। এনআইডিতে দুই ভাই একই নাম ব্যবহার করলেও তাদের ছবি ছিল আলাদা। একই এনআইডি কার্ড ও শিক্ষা সনদ জালিয়াতি করে আনিছুর রহমান রেলওয়েতে মুক্তিযোদ্ধার কোটায় চাকরি নেন। তার অশিক্ষিত ছোট ভাই আজিজুল হক বড় ভাইয়ের অষ্টম শ্রেণি পাস সার্টিফিকেট দেখিয়ে ২০১৪ সালে রেলওয়ে ওয়েম্যান পদে চাকরি নেন। এ নিয়ে ২০১৪ সালে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচারের পর নাগেশ্বরী উপজেলা নির্বাচন কমিশন তদন্তে সত্যতা পাওয়ায় ২০২১ সালের ৩১ জানুয়ারি উপজেলা নির্বাচন অফিসার আনোয়ার হোসেন বাদী হয়ে দুই ভাইয়ের নামে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইনে মামলা করেন। ১ নম্বর ওয়ার্ডের গ্রাম-পুলিশ জহুরুল হক জানান, আনিছুর রহমান আমার বাল্যবন্ধু। সোনালী খাতুন আনিছুরের স্ত্রী। সে উলিপুর উপজেলায় বিয়ে করেছে। সোনালীর বাবার বাড়ি সেখানেই। আনিছুর রহমানের ছোট ভাই খালেক ভোটার আইডি দেখে নিশ্চিত করেন সোনালী খাতুন তার ভাবি। আনিছুর রহমান বলেন, ভুলবশত তার স্ত্রী এমনটি করেছেন। ঠিক করে নেওয়া হবে। সন্তোষপুর ইউপি চেয়ারম্যান লিয়াকত আলী লাকু জানান, বীর মুক্তিযোদ্ধা আইনুল হকের আট ছেলেমেয়ের মধ্যে সোনালী খাতুন নামে কোনো সন্তান নেই। তবে এ নামে তার এক পুত্রবধূ রয়েছে। সে আনিছুর রহমানের স্ত্রী। নাগেশ্বরী উপজেলা নির্বাচন অফিসার আনোয়ার হোসেন জানান, সোনালী খাতুন ২০১৪ সালে ভোটার হালনাগাদকরণের সময় এসএসসি সনদ এবং জন্ম নিবন্ধন তথ্য দিয়ে ভোটার হয়েছেন। তথ্য গোপন করার বিষয়ে কেউ লিখিত বা মৌখিক অভিযোগ করেননি। এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ পেলে ভোটার তালিকা আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

 

সর্বশেষ খবর