রবিবার, ২ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা
ক্ষুব্ধ চার ব্যাচ

প্রশাসনে পদোন্নতি ও পদায়নে স্থবিরতা

উবায়দুল্লাহ বাদল

যুগ্মসচিব পদে পদোন্নতি দিতে বিসিএস ২১ ব্যাচের কর্মকর্তাদের তথ্য-উপাত্ত বিচার-বিশ্লেষণের পর তালিকা চূড়ান্ত করেছে পদোন্নতির জন্য সুপারিশকারী কর্তৃপক্ষ সুপিরিয়র সিলেকশন বোর্ড (এসএসবি)। প্রায় তিন মাস আগে তাদের এসএসবি শেষ হলেও পদোন্নতি হচ্ছে না। একইভাবে উপসচিব পদে বিসিএস ২৮তম ব্যাচের প্রায় ২০০ কর্মকর্তার তথ্য-উপাত্ত বাছাই শেষ হলেও এখনো মিলছে না তাদের পদোন্নতি। অথচ এই ব্যাচের পুলিশ ক্যাডার কর্মকর্তাদের অনেকে ইতোমধ্যে পদোন্নতি পেয়ে এসপি (পুলিশ সুপার) হয়েছেন।

এ ছাড়া জেলা প্রশাসক (ডিসি) পদের জন্য ২৪ ও ২৫ ব্যাচের ৩০০ কর্মকর্তার সাক্ষাৎকার শেষ হওয়ার এক মাস পেরিয়ে গেলেও ফিটলিস্ট প্রকাশ করা হচ্ছে না। ফলে পদোন্নতি- পদায়ন নিয়ে প্রশাসনে এক ধরনের স্থবিরতা বিরাজ করছে। এতে উদ্বিগ্ন ও হতাশার সৃষ্টি হয়েছে বিসিএস ২১, ২৪, ২৫ ও ২৮ ব্যাচের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মধ্যে। অক্টোবরে অবসরে যাচ্ছেন এসএসবির সদস্য জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আখতার হোসেন। নভেম্বরে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব কে এম আলী আজম এবং ডিসেম্বরে চাকরির মেয়াদ শেষ হচ্ছে মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের। এ ছাড়া প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব পদেও আসতে পারে পরিবর্তন। ফলে এসএসবির সাত সদস্যের চারজনই পরিবর্তন হলে নতুন নিয়োগ পাওয়া কর্মকর্তাদের নিয়ে গঠিত হবে এসএসবির বোর্ড। সেক্ষেত্রে আগের বোর্ডের চূড়ান্ত করার তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে সুপারিশ অনুযায়ী পদোন্নতি-পদায়ন হবে, নাকি নতুন বোর্ড আবারও তথ্য-উপাত্ত বিচার-বিশ্লেষণ করে সুপারিশ করবে এ নিয়েও প্রশ্ন সংশ্লিষ্টদের।

তারা আরও বলছেন, একুশ ব্যাচের কর্মকর্তারা ২০১৬ সালের ২৬ অক্টোবর উপসচিব হয়েছেন। এ ব্যাচের এখনো ডিসি হিসাবে মাঠে আছেন ১৩ জন কর্মকর্তা। তাদের কারও কারও ডিসি পদে মেয়াদ তিন থেকে চার বছর পূর্ণ হয়েছে। বিসিএস ২৫তম ব্যাচের উপসচিব হওয়ার চার বছর পূর্ণ হয়েছে। সাধারণত ৫/৬ বছরের মধ্যে যুগ্মসচিব পদে পদোন্নতি হয়। তাহলে ২৫তম ব্যাচের কর্মকর্তারা ডিসি হলেও তারা খুবই অল্প সময়ে ডিসি পদে দায়িত্ব পালন করতে পারবেন। ২৪ ব্যাচের যারা ডিসির জন্য ভাইভা দিয়েছেন তাদের মধ্যেও এক ধরনের হতাশা রয়েছে। পদোন্নতি নিয়ে হতাশা রয়েছে ২১ ও ২৮ ব্যাচের কর্মকর্তাদের। তবে এসব বিষয় নিয়ে দায়িত্বশীল কোনো কর্মকর্তা নাম প্রকাশ করে কথা বলতে রাজি হননি। বিসিএস ২১ ব্যাচের ১৮১ জন কর্মকর্তার মধ্যে ১৫৩ জন পদোন্নতির যোগ্যতা অর্জন করেছেন। এ ছাড়া সদ্য বিলুপ্ত ইকোনমিক ক্যাডারের নয়জন কর্মকর্তাও পদোন্নতির যোগ্যতা অর্জন করেছেন। এর বাইরে বিভিন্ন সময়ে পদোন্নতিবঞ্চিত (লেফট আউট) ১০০-এর মতো কর্মকর্তা এবং অন্যান্য ক্যাডারের সমসংখ্যক কর্মকর্তাকেও বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। ফলে পদোন্নতির জন্য পদ না থাকলেও প্রশাসনের ৪০০-এর বেশি কর্মকর্তার তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করেছে এসএসবি।  তবে আগামী মাসের প্রথমদিকে ২১ ব্যাচের যুগ্মসচিব পদে পদোন্নতির জিও জারি হতে পারে বলে জানা গেছে। এর আগে যুগ্মসচিব পদে ৮৪ জনকে পদোন্নতি দেওয়া হয় গত ২৯ জুন। এত কম সময়ের ব্যবধানে আবারও এ পদে পদোন্নতি দেওয়া নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে যুক্তিও দিচ্ছেন কেউ কেউ।

ডিসি ফিটলিস্ট পরীক্ষায় ২৪তম ব্যাচের অবশিষ্ট তালিকা থেকে ডাকা হয়েছে ১৭০ জনকে এবং ২৫তম ব্যাচ থেকে অংশ নিচ্ছেন ১৩০ জন। এবারের ডিসি ফিটলিস্ট পরীক্ষা মার্চে শুরু হলেও করোনা পরিস্থিতিসহ নানা কারণে তা শেষ হতে বিলম্বিত হয়েছে। গত ২৮ আগস্ট ফিটলিস্ট পরীক্ষা শেষ হয়েছে। কিন্তু এখনো কোনো অগ্রগতি নেই। বর্তমানে কর্মরত ডিসিদের মধ্যে ২১ ব্যাচের ১৩ জন, ২২ ব্যাচের ২৯ জন ও ২৪ ব্যাচের রয়েছেন ২২ জন। নতুন ডিসি ফিটলিস্ট চূড়ান্ত হওয়ার পর পর্যায়ক্রমে ২১ ও ২২ ব্যাচ থেকে কয়েকজনকে প্রত্যাহার করে সেখানে ২৪ ও ২৫ ব্যাচ থেকে পদায়ন করা হবে। ২৫ ব্যাচের একাধিক কর্মকর্তা জানান, ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের সময় এ ব্যাচের কর্মকর্তাদের অনেকে মাঠপ্রশাসনে ইউএনও ছিলেন। ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের সময় ছিলেন এডিসি। ফলে ডিসি হিসেবে তাদের মধ্য থেকে ফিট কর্মকর্তাদের দ্রুত নিয়োগ দেওয়া হলে তারা মাঠপ্রশাসনে আরও ভালো ভূমিকা রাখতে পারবেন। ২০১০ সালের ১ ডিসেম্বর বিসিএসের মাধ্যমে সরকারি চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন ২৮তম ব্যাচের কর্মকর্তারা। আগামী ডিসেম্বরে তাদের চাকরির মেয়াদ একযুগ পূর্ণ হবে। এই ব্যাচের সদ্যবিলুপ্ত ইকোনমিক ক্যাডারসহ প্রশাসন ক্যাডারের ১৯৩ জন কর্মকর্তা পদোন্নতির যোগ্যতা অর্জন করলেও এখনো উপসচিব হতে পারেননি। এ নিয়ে তাদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে বলে জানা গেছে।

সর্বশেষ খবর