রবিবার, ২ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা

ড্রাগনে ভাগ্য বদল নাছিমার

কুমিল্লা প্রতিনিধি

ড্রাগনে ভাগ্য বদল নাছিমার

নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবার। স্বামী মোহাম্মদ আলী প্রবাসে থাকতেন। তিনি টাকা পাঠাতেন বাড়ি করতে। কিন্তু জমানো ১০ লাখ টাকায় ড্রাগন ফলের বাগান করে বসেন। এ নিয়ে পাড়াপড়শি ও মা-চাচিরা হাসাহাসি করেন। কেউ বলেন, ‘গাছের ডাল লাগিয়ে কী হবে।’ কেউ বলেন, ‘এ টাকা লোকসান নিয়ে স্বামীর সঙ্গে মনোমালিন্য হবে। তোর সংসারটা ভাঙবে।’ ২০১৯ সালে বাগান করা নাছিমা বেগম এখন সেই ফলের ¯িœগ্ধ রঙে রাঙিয়েছেন তাঁর সংসার। সঙ্গে রাঙিয়েছেন অনেকের জীবন। তাঁর কাছ থেকে  চারা ও পরামর্শ নিয়ে অর্ধশতাধিক ব্যক্তি বাগান করেছেন। নাছিমার বাগানটি কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার চাঁদসার গ্রামে।

সরেজমিন দেখা যায়, বাড়ির লাগোয়া ড্রাগনবাগান। ফলের রঙে বাগান রঙিন হয়ে উঠেছে। নাছিমা, মোহাম্মদ আলী এবং তাঁদের আরও চারজন সহকারী ড্রাগন কাটছেন। ড্রাগনে বালতি ভর্তি হলে পাশের ঘরে এনে রাখছেন। ঘর থেকে তাজা ড্রাগন কিনে নিচ্ছেন পাইকাররা। কেউ চান্দিনা সদর, কেউ এসেছেন কুমিল্লা নগরী থেকে। স্থানীয়রা বাগান থেকে খুচরা কিনে কেটে খাওয়া শুরু করেন। নাছিমা বেগম বলেন, ‘স্বামী প্রবাসে ছিলেন। কত দিন আর কাজ করতে পারবেন। তাই ভাবলাম স্থায়ী একটা আয়ের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। স্বামীকে ফোনে জানালে তিনিও সায় দেন। নাটোর থেকে চারা সংগ্রহ করি। প্রথম ৮০ শতক জমিতে ড্রাগন চাষ করি। খরচ হয় ১০ লাখ টাকার মতো। প্রথম বছরে দেড় লাখ টাকার ফল পাই। দ্বিতীয় বছরে ৫ লাখ টাকার। তৃতীয় বছরে ৪০ শতকের আরও দুটি জমি কিনে বাগান বৃদ্ধি করি। এ বছর ১২ লাখ টাকার ফল বিক্রি করি। পরবর্তীতে বাগান করতে তেমন খরচ লাগেনি। শুধু পিলারে খরচ হয়েছে। এখন প্রতি কেজি পাইকারি ২৭০-৩০০ টাকায় বিক্রি করি। গতকালও ২০০ কেজি ফল বিক্রি করেছি।’ নাছিমার স্বামী মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘নাছিমা চান্দিনা, বরুড়া, বুড়িচং, কুমিল্লা সদর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও চট্টগ্রামে ড্রাগন বাগান করার পরামর্শ দিয়েছেন। ড্রাগনের আয়ে আমাদের পরিবারে সচ্ছলতা এসেছে।’ চান্দিনার কাদুটি ব্লকের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সুলতান আহমেদ বলেন, ‘নাছিমা বেগম দেখিয়ে দিয়েছেন ইচ্ছা করলে নারীরাও এগিয়ে যেতে পারেন। তিনি একজন সফল উদ্যোক্তা। তাঁর দেখাদেখি অনেকে ড্রাগন চাষে সফল হয়েছেন।’ চান্দিনা উপজেলা কৃষি অফিসার মনিরুল হক রোমেল বলেন, ‘নাছিমা বেগম চান্দিনার প্রথম ড্রাগন চাষি। তাঁর দেখাদেখি মাইজখার ও হারংয়ে আরও দুটি ড্রাগনবাগান হয়েছে। ড্রাগন চাষ বৃদ্ধি পাওয়ায় ভোক্তারা আগের চেয়ে কম দামে ফল কিনতে পারছেন। তাঁর মতো অন্য নারীরাও ড্রাগন চাষে এগিয়ে এসে সফল হতে পারেন।’

 

সর্বশেষ খবর