সোমবার, ৩ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা

অজ্ঞান করে ১৫ বছরে তিন শতাধিক প্রবাসীর সর্বস্ব লুট

নিজস্ব প্রতিবেদক

ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে আসা ৩ শতাধিক প্রবাসীর সর্বস্ব লুট করেছে অজ্ঞান পার্টি। গত ১৫ বছরে তারা এসব প্রবাসীকে অজ্ঞান করে সর্বস্ব লুটে নেয়। এই চক্রের ‘মূলহোতা’ মো. আমির হোসেন ও তার তিন সহযোগীকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। গ্রেফতার অন্যরা হলেন-

লিটন মিয়া ওরফে মিল্টন, আবু বক্কর সিদ্দিক ওরফে পারভেজ ও জাকির হোসেন। তাদের কাছ থেকে মোবাইল ফোন, অজ্ঞান করার কাজে ব্যবহৃত সরঞ্জাম, যাত্রীর ছদ্মবেশ ধারণে ব্যবহৃত লাগেজ ও চোরাই সোনা উদ্ধার করা হয়। শনিবার রাতে রাজধানীর বিমানবন্দর ও কদমতলী এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজারে র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। তিনি বলেন, বিমানবন্দর এলাকার একটি ফাস্টফুডের দোকানে চাকরি করতেন আমির। শিক্ষাগত যোগ্যতা মাধ্যমিক পাস। বিদেশফেরত যাত্রীর ছদ্মবেশে ১৫ বছর ধরে অজ্ঞান পার্টির একটি চক্র পরিচালনা করে আসছেন। বেশ কয়েকবার গ্রেফতার হলেও জামিনে বের হয়ে আবারও অপকর্মে জড়িয়ে পড়েন আমির। চক্রটি এ পর্যন্ত প্রায় ৩০০ ভুক্তভোগীকে অজ্ঞান করে তাদের কাছ থেকে মূল্যবান মালামাল লুট করেছে।

আমিরের বিরুদ্ধে অজ্ঞান ও মলম পার্টি সংক্রান্ত ১৫টিরও বেশি মামলা রয়েছে। অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা বিমানবন্দর, রেলস্টেশন, বাসস্ট্যান্ড, ব্যাংকপাড়ায় সাধারণ যাত্রীদের, ব্যাংকে আসা গ্রাহকদের টার্গেট করে থাকে। গত ২ সেপ্টেম্বর এক প্রবাসী কুয়েত থেকে শাহজালাল বিমানবন্দরে আসেন। এ সময় আগে থেকে ওতপেতে থাকা অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা তাকে টার্গেট করে। ঢাকা থেকে বগুড়া যাওয়ার পথে ওই প্রবাসীকে অজ্ঞান করে তার সর্বস্ব লুট করে নিয়ে যায় চক্রটি। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী প্রবাসী বাদী হয়ে ৬ সেপ্টেম্বর উত্তরা পশ্চিম থানায় মামলা করেন।

ওই মামলার পরিপ্রেক্ষিতে র‌্যাব গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ায়। বিমানবন্দরসহ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ ও প্রত্যক্ষদর্শীদের কাছ থেকে তথ্য নিয়ে শনিবার রাতে র‌্যাব-১ এর একটি দল আমির ও তার সহযোগীদের গ্রেফতার করে। তারা সংঘবদ্ধ অজ্ঞান পার্টি চক্রের সদস্য। এ চক্রের সদস্য সংখ্যা ৮-১০ জন। তারা বিভিন্ন পেশার আড়ালে ১৫ বছর ধরে বিদেশ থেকে আসা ব্যক্তিদের টার্গেট করার লক্ষ্যে বিমানবন্দরের টার্মিনালে হাতে পাসপোর্ট ও লাগেজ নিয়ে প্রবাস ফেরত যাত্রীর ছদ্মবেশ ধারণ করত। এটি মূলত তাদের একটি কৌশল।

বিমানবন্দরে অপেক্ষমাণ কোনো স্বজন বা গাড়ি নেই এমন বিদেশফেরতদের টার্গেট করত চক্রটি। তারা কৌশলে বিদেশফেরত ব্যক্তির সঙ্গে কুশল বিনিময় করত। পরে একই এলাকার বাসিন্দা হিসেবে পরিচিত হয়ে তাদের সঙ্গে যাওয়ার জন্য রাজি করাত। তারা একসঙ্গে বাসের টিকিট কেটে যাত্রা শুরু করত। ভ্রমণের সময় চক্রের সদস্যরা কৌশলে চেতনানাশক ওষুধ মিশ্রিত কিছু খাইয়ে ভুক্তভোগীদের অচেতন করত। অজ্ঞান হওয়ার পর প্রবাসীর সঙ্গে থাকা লাগেজের টোকেন সংগ্রহ করে এবং বাস থেকে মালামাল নিয়ে নেমে যেত। ফাস্টফুডের দোকানে চাকরির আড়ালে মানুষকে অজ্ঞান করে লুট করাই ছিল আমিরের কাজ।

সর্বশেষ খবর