বৃহস্পতিবার, ৬ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা

মাতম নিহত শান্তিরক্ষীদের বাড়িতে

সিরাজগঞ্জ, নীলফামারী ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি

মাতম নিহত শান্তিরক্ষীদের বাড়িতে

নীলফামারী ও সিরাজগঞ্জে স্বজনদের আহাজারি-আর্তনাদ -বাংলাদেশ প্রতিদিন

জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশন মধ্য আফ্রিকা প্রজাতন্ত্রে সন্ত্রাসীদের পুঁতে রাখা আইইডি বিস্ফোরণে নিহত তিন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীর বাড়িতে শোকের মাতম চলছে। প্রিয়জনকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন নিহত সৈনিকদের স্বজনরা। পরিবারের উপার্জনক্ষম আপনজনকে হারিয়ে ভবিষ্যৎ অন্ধকার দেখছেন তারা। তরুণ সৈনিকদের অকালমৃত্যুকে রাষ্ট্রীয় শহীদ ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন স্বজনরা। উল্লেখ্য, গত ৩ অক্টোবর সেন্ট্রাল আফ্রিকায় অপারেশন কার্যক্রম পরিচালনাকালে বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীদের একটি গাড়িতে ইমপ্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) বিস্ফোরণ ঘটে। এতে তিনজন শান্তিরক্ষী নিহত এবং একজন আহত হয়েছেন। নিহত শান্তিরক্ষীরা হলেন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জসিম উদ্দিন, নীলফামারীর জাহাংগীর আলম এবং সিরাজগঞ্জের শরিফ হোসেন।

সিরাজগঞ্জ : নিহত সেনা সদস্য শরিফ হোসেনের সিরাজগঞ্জের বেলকুচির বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। একমাত্র উপার্জনক্ষম সন্তানকে হারিয়ে পাগল প্রায় মা-বাবা, ভাইবোন। বিয়ের মাত্র কয়েকদিন পরই মিশনে গিয়ে মারা যাওয়ায় স্বামীর শোকে পাগলপ্রায় স্ত্রী সালমা খাতুন। তরুণ সৈনিকের অকাল মৃত্যুতে রাষ্ট্রীয়ভাবে তাদের শহীদ ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

শরিফ হোসেন ২০১৭ সালে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন। গতকাল সকালে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে সেনা কর্মকর্তারা শরিফের বাড়িতে গিয়ে সমবেদনা জানান এবং তার পরিবারের কাছে ১ লাখ টাকা দেন। সৈনিক শরিফ মিশনে যাওয়ার কয়েকদিন আগেই সালমা খাতুন নামে এক মেয়েকে বিয়ে করেন। দুজনে দাম্পত্যজীবন বুঝে ওঠার আগেই স্বামীকে হারান স্ত্রী সালমা খাতুন। স্বামীকে হারিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন সালমা। তিনি বলেন, আমার সবকিছু শেষ হয়ে গেল। আমি কী নিয়ে বাঁচব।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া : বড় ছেলে ইকরাম (৩) আর ছোট ছেলে এমরান (২)। তারা দুজনে বাড়ির উঠানে খেলছে। তারা জানে না তাদের বাবা মো. জসিম উদ্দিন মারা গেছেন শান্তি মিশনে। ঘরের ভিতরে বার বার মূর্ছা যাচ্ছেন তাদের মা শারমীন আক্তার। গতকালের এই দৃশ্য ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগর উপজেলার পাহাড়পুর ইউনিয়নের খাটিঙ্গা বড়বাড়ির বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আবদুন নূর কমান্ডারের বাড়ির। এই বাড়িতে মঙ্গলবার দুপুর থেকেই চলছে শোকের মাতম। শোকে মুহ্যমান হয়ে আছেন ইউনিয়নের সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার নূর। তাদের পরিবার ও স্বজনদের আহাজারিতে বাতাস ভারী হয়ে ওঠে। মধ্য আফ্রিকায় শান্তিরক্ষী হয়ে গিয়েছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আবদুন নূরের ছেলে মো. জসিম উদ্দিন।

নিহতের বড় ভাই মোহাম্মদ জুলহাস বলেন, সে ১০ বছরের চাকরি জীবনে এই প্রথম নয় মাস আগে শান্তিরক্ষা মিশনে আফ্রিকায় ছিল। তার মৃত্যু আমাদের পরিবারের অপূরণীয় ক্ষতি। আমার ভাইয়ের লাশ দ্রুত দেশে আনা হোক। জসিমের মৃত্যু সংবাদ পাওয়ার পর থেকেই পুরো বাড়িতে খাওয়া-দাওয়া বন্ধ।

নীলফামারী :  মধ্য আফ্রিকায় নিহত সৈনিক জাহাংগীর আলমের বাড়ি নীলফামারী জেলার ডিমলা উপজেলার সদর ইউনিয়নের দক্ষিণ তিতপাড়া গ্রামে। তিনি লতিফুর রহমানের পাঁচ ছেলের মধ্যে চতুর্থ। নিহত জাহাংগীরের বড় ভাই সেনা সদস্য করপোরাল আবুজার রহমান জানান, ২০১৫ সালে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগ দেন জাহাংগীর। ১০ মাস আগে মধ্য আফ্রিকায় ব্যানব্যাট-৮ এ উইক্যাম্পে শান্তিরক্ষী মিশনে যান তিনি। মঙ্গলবার সকালে সেনাবাহিনীর এক কর্মকর্তা মোবাইলে জাহাংগীরের মৃত্যুর খবর জানান। এরপর থেকে জাহাংগীরের পরিবারে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন বাবা লতিফুর রহমান। মা গোলেনুর বেগম বিছানায় কাতর হয়ে পড়ে আছেন। সদ্য বিবাহিত স্ত্রী শিমু আক্তার স্বামীর ছবি বুকে ধরে স্তব্ধ হয়ে পড়েছেন। মাঝে মাঝে গগনবিদারী চিৎকারে  কেঁদে উঠছেন।

সর্বশেষ খবর