মঙ্গলবার, ১১ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা

পড়ালেখা ও জীবিকা দুই-ই চলছে জার্মানিতে

জিন্নাতুন নূর, জার্মানির বন থেকে ফিরে

খ্যাতনামা জার্মান সুরকার ও পিয়ানোবাদক লুডভিগ ফান বেটোফেনের জন্ম জার্মানির বন শহরে। বিখ্যাত রাইন নদী বয়ে চলেছে এই শহরের ওপর দিয়ে। নানা ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাক্ষী এই বন। আর এখানে বাস করছেন বহু প্রবাসী বাংলাদেশি। যে প্রবাসী বাংলাদেশিরা জড়িত বিভিন্ন পেশায়। এর মধ্যে কিছু আছেন শিক্ষার্থী। তারা বিজ্ঞানবিষয়ক শিক্ষা নিয়ে লেখাপড়া করছেন। তবে বাংলাদেশ থেকে সরাসরি চাকরির জন্য যে এখানে মানুষ আসবে, সে সুযোগ এখনও তৈরি হয়নি। সে ক্ষেত্রে লেখাপড়ার জন্য যারা জার্মানিতে এসেছেন তারা পাশাপাশি চাকরি করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। জানা যায়, বন শহর নর্থ রাইন-ওয়েস্টফালিয়া (এনআরডব্লিউ) রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত। এর ফলে এখানে বাংলাদেশিরা বিশেষ সুবিধা পান। এখানকার যে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আছে সেখানে তাদের টিউশন ফি লাগে না। এতে বাংলাদেশি তরুণ প্রজন্মের জন্য এখানে লেখাপড়া করে সামান্য কিছু আয়-রোজগার করা কঠিন কিছু নয়। এ জন্য বন শহরে বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের সংখ্যা ভালোই। এর বাইরে এই শহরে ৩০ থেকে ৪০ বছর আগে যে বাংলাদেশিরা এসেছিলেন তাদের ছেলেমেয়েরাও এখানেই বড় হচ্ছেন। অনেকের নাতি-নাতনিও এখানে বড় হচ্ছে। এখানে কিছু বাংলাদেশি আইটি এবং কিছু ইঞ্জিনিয়ারিং পেশায় আছেন। কিছু আছেন যারা বনের রেস্টুরেন্টগুলোতে কাজ করেন। কেউ আবার দোকানে কাজ করছেন। জার্মানভিত্তিক অনলাইন মিডিয়া ‘আওয়ার ভয়েস’-এর এডিটর ইন চিফ এ এইচ এম আবদুল হাই এক যুগেরও বেশি সময় ধরে জার্মানিতে আছেন। তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ইউরোপের সবগুলো দেশেই মোটামুটি একই রকম পরিবেশ। এখানে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডল থেকে অনেক বেশি প্রবাসী মানুষদের স্বাগত জানানো হয়েছে। জার্মানদের মূল জনসংখ্যার অনুপাতে নাগরিক সেবা পাওয়ার জন্য এই প্রবাসীদের প্রয়োজন হয়। বলা যায়, ভালো-মন্দ মিলিয়েই এখানে জীবন পার করছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। বন শহরে থাকার জন্য সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে, এখানে মানুষ সাধারণত ইংরেজি ভাষায় কথা বলে না। এ জন্য প্রথম দিকে এখানে আসা বাংলা ও ইংরেজি জানা মানুষ হোঁচট খান। তখন এখানকার মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করা কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়। বাংলাদেশ থেকে জার্মানিতে আসা মানুষদের কিছুটা বর্ণবৈষম্যেরও শিকার হতে হয়। তবে জার্মান ভাষা রপ্ত করে নিলে খুব একটা সমস্যা হয় না বলে জার্মান প্রবাসীরা জানিয়েছেন।

এখানে দীর্ঘ সময় থাকার কারণে প্রবাসী বাংলাদেশিদের উদ্যোগে বেশ কিছু সংগঠন গড়ে উঠেছে। বন শহরেই বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র বলে একটি সংগঠন আছে। এটি বেশ পুরনো একটি সংগঠন। এ ছাড়া আছে জার্মান-বাংলাদেশ একাডেমি নামের সংগঠন। আছে জার্মান-বাংলাদেশ সমিতি। আছে সিরাজী ফাউন্ডেশন নামের সমাজসেবী প্রতিষ্ঠান। এ ছাড়া ‘সেতু’ নামের একটি প্রতিষ্ঠান আছে, যারা বাংলা নববর্ষ, পিঠা উৎসব, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসসহ নানা দিবসভিত্তিক অনুষ্ঠান পালনের উদ্যোগ গ্রহণ করে। এসব অনুষ্ঠানে বাংলা ভাষায় গান, আবৃত্তি ও আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এখানে হাউস অব ইন্টিগ্রেশন নামের একটি প্রতিষ্ঠান আছে। বাংলাদেশিরাই এর উদ্যোক্তা। এর অন্যতম কাজের একটি হচ্ছে, প্রতিষ্ঠানটি বন শহরে পুরুষ ও মহিলাদের জন্য পৃথকভাবে নামাজ আদায় করার জন্য একটি মসজিদ তৈরি করেছে। এখানে প্রবাসী বাংলাদেশিদের পাশাপাশি অন্যান্য দেশের মুসলমানরাও নামাজ আদায় করতে আসেন। এ ছাড়া সিরাজী ফাউন্ডেশন থেকে জার্মান প্রবাসীরা বছরে দুবার ‘সীমান্ত’ নামের একটি ম্যাগাজিন প্রকাশ করেন। এটি বাংলা ও জার্মান দুই ভাষায় প্রকাশিত হয়। ‘আওয়ার ভয়েস’ নামেও প্রবাসীরা একটি নিউজ পোর্টাল বের করেছেন। এসব প্রকাশনায় প্রবাসী উদ্যোক্তারা প্রবাসীদের নিয়ে সংবাদ প্রচার করেন। এর মাধ্যমে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশিদের কাজগুলো তুলে ধরা হয়।

বন শহরে থাকা প্রবাসী বাংলাদেশিরা কমিউনিটি ক্লিনিংয়েরও কাজ করেন। বিষয়টি এরই মধ্যে জার্মান নাগরিকদের প্রশংসা কুড়িয়েছে। রাস্তায় পড়ে থাকা মাস্ক, প্লাস্টিকের বোতলসহ ছোট ময়লা-আবর্জনাগুলো প্রবাসীরা স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে পরিষ্কার করেন। প্রবাসীদের কয়েকটি সংগঠন এ কমিউনিটি ক্লিনিংয়ের কাজ করে থাকে। অনেক সময় জার্মান নাগরিকরাও এই প্রবাসীদের সঙ্গে যোগ দিয়ে পরিচ্ছন্নতার কাজ করেন। এ ছাড়া বর্ণবাদ ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রবাসীরা শিল্প-সাহিত্য ও সমাবেশের আয়োজন করেন। এর মাধ্যমে তারা নির্দিষ্ট এক দিন এ-সংশ্লিষ্ট লেখালেখি করেন। এতে চিত্র প্রদর্শনীর ব্যবস্থা থাকে। এর মূল উদ্দেশ্যই হলো বর্ণবাদ ও বৈষম্যের বিরুদ্ধে কথা বলা।

সর্বশেষ খবর