বুধবার, ১২ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা

জলাবদ্ধতা গণপরিবহন সড়ক বেহাল

বরিশাল নগরীতে ভোগান্তি

রাহাত খান, বরিশাল

জলাবদ্ধতা গণপরিবহন সড়ক বেহাল

বিশৃঙ্খল গণপরিবহন ব্যবস্থা, ফুটপাত দখল, যানজট, শাখাসড়ক, অলিগলি, রাস্তাঘাটের বেহাল দশা, জলাবদ্ধতা, চিকিৎসা খাতে নৈরাজ্য, রোগী ভর্তিতে দালালের দৌরাত্ম্য এবং প্রাথমিক-মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার অসম প্রতিযোগিতায় জীবন অতিষ্ঠ বরিশালের নাগরিকদের। নানা সীমাবদ্ধতার কারণে দীর্ঘদিনেও নাগরিকদের এসব সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান দিতে পারেনি নগর প্রশাসন। ফলে পদে পদে ভোগান্তি আর দুর্দশা নিয়েই বেঁচে আছেন নগরীর প্রায় ৭ লাখ বাসিন্দা। মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া বড় উন্নয়ন প্রকল্প ছাড় না পেলেও সিটি করপোরেশন নিজস্ব আয় দিয়ে সাধ্যমতো নগরবাসীর সেবা করে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন সিটি মেয়র। বিভাগীয় সদর বরিশাল নগরীতে প্রকৃত অর্থে গণপরিবহন ব্যবস্থা নেই। এক সময় সিটি করপোরেশনের ব্যবস্থাপনায় বাস চললেও এখন ২৪ হাজারের বেশি ব্যাটারিচালিত রিকশা, হলুদ অটোরিকশা, থ্রি-হুইলার এলজিপি ও মাহেন্দ্র আলফাই হচ্ছে নগরীবাসীর চলাচলের ভরসা। প্যাডেল রিকশা হাওয়া হয়ে গেছে। ট্রাফিক আইনের ন্যূনতম ধারণা না থাকা হাজার হাজার অদক্ষ চালক আর অননুমোদিত যানের নৈরাজ্যে নগরবাসীর জীবন বিপন্ন। তাদের যত্রতত্র পার্কিং আর অনিয়মতান্ত্রিক চলাচলে ঝুঁকিতে রয়েছেন রাস্তাঘাটে চলাচলকারী লাখো মানুষ। নগরীর প্রধান প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্র চকবাজার, দক্ষিণ চকবাজার রোড, বাজার রোড, নগর ভবন চত্বর, কাঠপট্টি, হেমায়েত উদ্দিন রোড, সদর রোড, বিবিরপুকুরের দক্ষিণ পাড়,  চৌমাথা, নথুল্লাবাদ, বাংলাবাজার, সাগরদী বাজার, রূপাতলী, লঞ্চঘাট, বান্দ রোডের মেডিকেলের সামনের ফুটপাত, এমনকি মূল সড়কে মাকড়সার জালের মতো বাড়ছে ভাসমান দোকান ও হকারের সংখ্যা। পথচারী ও যানবাহন চলাচলে সৃষ্টি হচ্ছে প্রতিবন্ধকতা। অবৈধ দখলদারে সড়ক সংকুচিত হওয়ায় অফিস সময়ে দুঃসহ যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে নগরীর ব্যস্ততম কেন্দ্রগুলো। প্রধান প্রধান কিছু সড়ক ছাড়া নগরীর শাখাসড়ক কিংবা অলিগলির রাস্তা সব ভাঙাচোরা। সিটি করপোরেশনের তথ্য অনুযায়ী, নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডে বিটুমিনাস কার্পেটিং এবং হেরিংবোনসহ মোট ৫৩৫ কিলোমিটার সড়ক রয়েছে। গত চার বছরে সিটি মেয়র নিজস্ব অর্থে ৪৩ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ ও পুনর্নির্মাণ এবং ৭৫ কিলোমিটার সড়ক মেরামত করেছেন। বাকি সড়কের চরম দুরবস্থা। সড়ক ও ড্রেনেজ উন্নয়নে চার বছর আগে মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া দুটি প্রকল্প পাস না হওয়ায় কাক্সিক্ষত উন্নয়ন করতে পারছেন না সিটি মেয়র। তবে ভাঙা সব সড়ক মেরামতে মেয়র টেন্ডার আহ্বানের নির্দেশ দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন সিটি করপোরেশনের নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল বাশার। একটু ভারী বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতায় নাকাল হন নগরবাসী। তলিয়ে যায় বিভিন্ন সড়ক ও এলাকা। বটতলা-চৌমাথা সড়ক, বগুড়া রোড, এমনকি সদর রোডও তলিয়ে যায় পানিতে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, চরের বাড়ির শোভারানীর খাল পুরোপুরি ভরাট করে বহু পাকা বাড়িঘর নির্মাণ করা হয়েছে। বটতলা খাল ও ভাটার খালের একাংশ হত্যা করে নির্মাণ করা হয়েছে ড্রেন। অন্য খালগুলোও মৃতপ্রায়। খালগুলো সংস্কার এবং ড্রেন নিয়মিত পরিষ্কার না করায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয় বলে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন। বরিশালে চিকিৎসাব্যবস্থায় নৈরাজ্য দীর্ঘদিনের। ভুঁইফোঁড় ও অননুমোদিত ডায়াগনস্টিক আর ক্লিনিকে প্রতিনিয়ত নিঃস্ব হচ্ছেন গ্রামাঞ্চলের সহজ-সরল মানুষ। দুই বাস টার্মিনাল, লঞ্চঘাট আর সদর রোডকেন্দ্রিক শ খানেক চিহ্নিত রোগীর দালালের দৌরাত্ম্য কোনোভাবেই রোধ করতে পারছে না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এদের খপ্পরে অর্থ হারিয়ে চিকিৎসা না নিয়ে বাড়ি ফিরে যেতে হচ্ছে রোগীদের। দালালের হামলায় সাবেক কাউন্সিলর নিহতের উদাহরণও আছে বরিশালে। এর পরও ভুঁইফোঁড় চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নেওয়া হয় না জোরালো কোনো পদক্ষেপ। নাগরিক দুর্ভোগের বিষয়ে জেলা আইনজীবী সমিতি, প্রেস ক্লাব ও সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট মানবেন্দ্র বটব্যাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের নিয়মিত অফিসে পায় না জনগণ। এত বেশি অটোরিকশা আর ব্যাটারিচালিত রিকশা শহরে চলছে যে, মানুষের চলাচল করাই কঠিন। এগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। নগরীর বর্ধিতাংশের মানুষ নাগরিক সেবা পাচ্ছেন না। বিশুদ্ধ পানির সংকট রয়েছে। বর্ষায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। শহরের অনেকগুলো খাল সরকারিভাবে এবং সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে ড্রেনে পরিণত করা হয়েছে। যে খালগুলো জীবিত আছে তা নিয়মিত সংস্কার ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রয়োজন। প্রধান সড়ক ছাড়া অন্য সব শাখাসড়ক ও অলিগলি দ্রুত সংস্কার করা জরুরি বলে মনে করেন বসুন্ধরা মিডিয়া অ্যাওয়ার্ডপ্রাপ্ত সাংবাদিক মানবেন্দ্র বটব্যাল।

সর্বশেষ খবর