বুধবার, ১২ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা

হাসপাতাল ভরে গেছে ডেঙ্গু রোগীতে

এক দিনে চার জনের মৃত্যু - করোনায় মৃত্যু দুজনের

শামীম আহমেদ

অন্যান্য বছর অক্টোবরে এসে ডেঙ্গুর দাপট কমে এলেও এ বছর উল্টো বাড়ছে। মশারিতে ঘেরা ডেঙ্গু রোগীতে ভরে উঠছে হাসপাতালগুলো। তবে করোনাভাইরাস সংক্রমণ হার তিন দিন ধরে নিম্নমুখী রয়েছে। গতকাল সারা দেশে ২৭৮ জন করোনা রোগী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। সেখানে গত এক দিনেই ৬৭৭ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। প্রাণ গেছে চারজনের। আর মোট ভর্তি ছিলেন ২ হাজার ৪৯৩ জন, যা হাসপাতালে ভর্তি থাকা করোনা রোগীর প্রায় ৯ গুণ।

এ ব্যাপারে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও কীটতত্ত্ববিদ কবিরুল বাশার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সাধারণত সেপ্টেম্বরের পর ডেঙ্গু মশার উপদ্রব কমে আসে। এ জন্য আমরা আগস্ট-সেপ্টেম্বরে মশা নিধনে ক্রাশ প্রোগ্রাম চালানোর পরামর্শ দিয়ে থাকি। এবার দেরিতে বৃষ্টি হওয়ায় অক্টোবরেও ডেঙ্গুর দাপট বাড়ছে। এটা পুরো মাসই বাড়বে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে হটস্পট ম্যানেজমেন্ট করতে হবে। আমরা রাজধানীর হাসপাতালে আসা ডেঙ্গু রোগীদের তথ্য বিশ্লেষণ করে বিভিন্ন হটস্পট চিহ্নিত করেছি। এর মধ্যে ১ নম্বরে আছে মিরপুর, ২ নম্বরে উত্তরা, ৩ নম্বরে মুগদা ও ৪ নম্বরে আছে ধানমন্ডি। এ ছাড়া কেরানীগঞ্জ, যাত্রাবাড়ী, খিলগাঁও, বাড্ডা ও মোহাম্মদপুর এলাকায়ও ডেঙ্গু রোগী বাড়ছে। এসব স্থান থেকে সর্বাধিক রোগী হাসপাতালে আসছেন। হটস্পটগুলোতে ক্রাশ প্রোগ্রাম চালিয়ে উড়ন্ত এডিস মশা মেরে ফেলতে হবে। সেই সঙ্গে জনগণকেও সচেতন ও ডেঙ্গুবিরোধী কর্মসূচিতে সম্পৃক্ত করতে হবে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, চলতি বছরের শুরু থেকেই দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ ছিল। বছরের প্রথম দিনে ৪ জন আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। জানুয়ারিতে ভর্তি হন মোট ১২৬ জন। তবে ১২৫ জন সুস্থ হওয়ায় ১ ফেব্রুয়ারি ভর্তি ছিলেন ১ জন। এপ্রিল পর্যন্ত পরিস্থিতি কিছুটা নিয়ন্ত্রণে ছিল। এই তিন মাসে হাসপাতালে মোট ভর্তি হন ৬৩ জন ডেঙ্গু রোগী। তবে মে মাস থেকে পরিস্থিতি খারাপের দিকে যেতে থাকে। মে মাসে ১৭২ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। জুনে ৭৫০ জন, জুলাইয়ে ১ হাজার ৬৩৬ জন, আগস্টে ৩ হাজার ৬১০ জন, সেপ্টেম্বরে ১০ হাজার ৩৭০ জন ও অক্টোবরের প্রথম ১০ দিনেই ৫ হাজার ১৪৩ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে চলতি বছর প্রথম মৃত্যুর খবর আসে ২১ জুন। গতকাল পর্যন্ত মোট প্রাণ হারিয়েছেন ৭৪ জন। চলতি মাসে প্রতিদিন গড়ে ৫১৪ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন, যা আগের মাসে ছিল ৩৪৫ জন। এর মধ্যে গত ৮ অক্টোবর একদিনেই সর্বোচ্চ ৭১২ জন হাসপাতালে ভর্তির খবর দেয় স্বাস্থ্য অধিদফতর। মোট ডেঙ্গু আক্রান্তের ৭৫ শতাংশই ঢাকা শহরের বাসিন্দা। চলতি বছরে মোট ২১ হাজার ৮৭০ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ঢাকা মহানগরীতেই ভর্তি হয়েছেন ১৬ হাজার ৩৪৭ জন। ঢাকার বাইরে ভর্তি হয়েছেন ৫ হাজার ৫২৩ জন। মোট সুস্থ হয়ে ফিরেছেন ১৯ হাজার ৩০৩ জন।  এদিকে আগস্টের শেষে দেশে শুরু হওয়া করোনার পঞ্চম ঢেউয়ের প্রভাব তিন দিন ধরে কমছে। ১ অক্টোবর স্বাস্থ্য অধিদফতরের দেওয়া তথ্যানুযায়ী, ২৪ ঘণ্টার নমুনা পরীক্ষায় সংক্রমণ শনাক্তের হার ছিল ১৫.২৮ শতাংশ। এর পর কখনো কমেছে, ফের বেড়েছে। ৯ অক্টোবর থেকে টানা কমেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় শনাক্তের হার ছিল ৮.৮৬ শতাংশ, যা ১৪ সেপ্টেম্বরের পর সর্বনিম্ন। অধিদফতরের তথ্যানুযায়ী, গতকাল সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৫ হাজার ১৯৩ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৪৬০ জনের দেহে সংক্রমণ ধরা পড়েছে। এ সময় মারা গেছেন ২ জন। সুস্থ ও মৃত বাদে ১ অক্টোবর দেশে শনাক্ত হওয়া সক্রিয় করোনা রোগী ছিল ৩০ হাজার ৬৭৮ জন। হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন ৩৬৩ জন। গতকাল সক্রিয় রোগী ছিল ২৯ হাজার ৯৬১ জন। হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন ২৭৮ জন। ১০ দিনের ব্যবধানে সক্রিয় রোগী, শনাক্তের হার ও হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা কমেছে।

সর্বশেষ খবর