শুক্রবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা

সংকটে ডুবে আছে ময়মনসিংহ

নগরীতে বাড়ছে মানুষের চাপ - যানজটে স্থবির সড়ক - বাড়েনি সুযোগ সুবিধা

সৈয়দ নোমান, ময়মনসিংহ

সংকটে ডুবে আছে ময়মনসিংহ

ময়মনসিংহ শহর গড়ে ওঠার পর ৮ এপ্রিল ১৮৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় নাসিরাবাদ মিউনিসিপ্যালিটি। এরপর নাম বদলে হয় ময়মনসিংহ পৌরসভা। ২০১৮ সালে রূপ নেয় ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনে (মসিক)। ইতিহাস-ঐতিহ্যের এই সিটি ২২ বর্গ কিলোমিটার থেকে এখন ৯১ দশমিক ৩১ বর্গ কিলোমিটার। ২১টি ওয়ার্ড থেকে ৩৩টি ওয়ার্ড। জনসংখ্যাও বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৮ লাখের কাছাকাছি। সিটি করপোরেশনে উন্নীত হওয়ার পর নগরে জনসমাগম বেড়েছে কয়েক গুণ। পুরনো এই নগরীর রাস্তাঘাট আগের মতোই আছে। ফলে নগরে মানুষের চাপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে যানের চাপ। নগরের মূল সড়কগুলোতে হেঁটে চলাও দায়। ফলে বিভাগীয় শহরটি যেন পরিণত হয়েছে জটের শহরে। এ ছাড়া শহরতলি থেকে সিটিতে যুক্ত হওয়া ১২টি ওয়ার্ডের প্রধান সমস্যা সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা। বিশেষ করে চর ঈশ্বরদিয়া, চর নীলক্ষিয়া, সিরতা ইত্যাদি এলাকা চরাঞ্চল হওয়ায় এখানকার অবকাঠামো আরও নাজুক। যানজটমুক্ত, পরিবেশবান্ধব ও পরিচ্ছন্ন নগরী গড়তে সিটি করপোরেশনের নাগরিকরা গুরুত্বারোপ করেছেন। তাছাড়া বলছেন, ২১টি ওয়ার্ডের সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হওয়া ১২টি ওয়ার্ডে পরিকল্পিত নগরায়ণের কথা। সর্বোত্তম গুণগতমানের সড়ক, কালভার্ট, নর্দমা ও পয়ঃনিষ্কাশন পদ্ধতি, পানি সরবরাহ লাইন ও অন্যান্য অবকাঠামো উন্নয়ন নিশ্চিত করে পরিচ্ছন্ন নগরী গড়ারও তাগিদ দেন বিশিষ্টজনরা। বিশিষ্টজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নগরীর গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলোতে গড়ে উঠেছে ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকের অঘোষিত স্ট্যান্ড। এসব স্ট্যান্ড ঘিরে একটি চক্র শুরু করেছে ‘টোকেন’ চাঁদাবাজি। এ ছাড়া হাজার হাজার ইজিবাইক প্রতিদিন লাখো ইউনিট বিদ্যুৎও চুষে নিচ্ছে। এই তিন চাকা যানটি প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনা ঘটিয়ে পথচারী এবং ওই বাহনের যাত্রীদেরও আহত করছে। অনেকে পঙ্গুত্বও বরণ করেছেন। এ নিয়ে ময়মনসিংহ নাগরিক আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার নুরুল আমিন কালাম বলেন, ‘ইজিবাইক নিয়ন্ত্রণ করতে না পারায় নগরীর মোড়ে মোড়ে যানজট এখন নিত্যদিনের ঘটনা। নগরে এ সমস্যা তীব্র হচ্ছে দিনকে দিন। তাই এখনই লাগাম টেনে ধরা উচিত।’

সিনিয়র সিটিজেনরা যানজটের আরও একটি কারণ হিসেবে সিটি এলাকার ২২টি রেলক্রসিংকে দায়ী করছেন। তাদের মতে, প্রতিবার ট্রেন চলাচলের সময় এসব রেলক্রসিংয়ে ৫-১৫ মিনিট আটকা পড়তে হয় সড়ক ব্যবহারকারীদের।

ময়মনসিংহ রেলওয়ে স্টেশন সূত্রে জানা যায়, নগরীর সানকিপাড়া, সি কে ঘোষ রোড, সাহেব আলী রোড, পাটগুদাম, ফুলবাড়িয়া বাসস্ট্যান্ডসহ বিভিন্ন স্থানে ২২টি রেলক্রসিং রয়েছে। এসব রেলক্রসিং দিয়ে বিভিন্ন রুটে ৫৮ বার ২৯ জোড়া ট্রেনের যাওয়া আসার সময় থামাতে হয় যানবাহন। যেখানে প্রতিবার সময় ব্যয় হয় ৭ থেকে ১০ মিনিট। সে হিসাবে প্রতিদিন ২২ স্থানে অন্তত ৭-৮ ঘণ্টা সময় নষ্ট হচ্ছে এসব রেলক্রসিংয়ে। ময়মনসিংহ ট্রাফিক বিভাগের পরিদর্শক (প্রশাসন) সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, নগরের ভিতর থাকায় রেল ক্রসিংগুলো যানজটের অন্যতম প্রধান কারণ। নগরের ভিতর থেকে রেলস্টেশন সরিয়ে নেওয়া হলে যানজট কমে যাবে বলে মনে করেন তিনি।

 

অপরদিকে মসিক সূত্র জানায়, সিটি করপোরেশনে উন্নীত হলে পুরাতন ২১টি ওয়ার্ডের সঙ্গে যুক্ত হয় আরও ১২টি ওয়ার্ড। এ ওয়ার্ডগুলো এসেছে সদর উপজেলার আকুয়া ও বয়ড়া ইউনিয়নের সম্পূর্ণ অংশ এবং চর ঈশ্বরদিয়া, খাগডহর, সিরতা, ভাবখালী, দাপুনিয়া ও চর নীলক্ষিয়া ইউনিয়নের আংশিক অংশ থেকে। যার আয়তন প্রায় ৬৯ বর্গ কিলোমিটার। ফলে ২১ বর্গকিলোমিটারের শহর অংশের সঙ্গে যুক্ত হয় ৬৯ বর্গকিলোমিটার। সেসব এলাকায় সড়ক, ড্রেন, সড়কবাতিসহ অন্যান্য নাগরিক অবকাঠামো নেই বললেই চলে। বিশেষ করে চর ঈশ্বরদিয়া, চর নীলক্ষিয়া, সিরতাসহ কয়েকটি এলাকা চরাঞ্চল হওয়ায় অবকাঠামো আরও নাজুক। জনউদ্যোগের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট নজরুল ইসলাম চুন্নু বলেন, ‘ইউনিয়ন পরিষদ থেকে আসা এসব এলাকা সিটির আওতায় আসায় সাধারণ মানুষের মনে নতুন করে আশার সঞ্চার হয়। তাই তাদের আশার প্রতিফলন ঘটাতে মসিকের সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়া উচিত।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর