সোমবার, ১৭ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা

ভালো নেই খুলনা সিটি

সামছুজ্জামান শাহীন, খুলনা

ভালো নেই খুলনা সিটি

বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতায় তৈরি হয় ভোগান্তি। ধীরগতির ড্রেনেজ সংস্কারে পানি নিষ্কাশন না হওয়ায় হাঁটুসমান পানি জমে থাকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। উন্নয়ন সংস্থাগুলোর সমন্বয়হীনতায় সারা বছর ধরেই চলে খোঁড়াখুঁড়ি। সংস্কারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি সড়কে খোঁড়াখুঁড়ি করে ইটের খোয়া ও বালু ফেলা হয়েছে। এরপর বন্ধ হয়ে গেছে কাজ। ধীরগতির ড্রেনেজ নির্মাণকাজেও ভোগান্তি বাড়ছে। একইভাবে  ফুটপাত বেদখল, অতিরিক্ত ইজিবাইকের চাপে যানজট, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার অভাব, নিরাপদ পানি সংকট ও বস্তি এলাকায় কাক্সিক্ষত স্বাস্থ্যসেবার অভাবে খুলনায় প্রতিনিয়ত ব্যাহত হচ্ছে নাগরিক সেবা। জানা যায়, হাজি ইসমাইল রোডে খলিল চেম্বার মোড় থেকে বসুপাড়া কবরস্থান মোড় পর্যন্ত ড্রেনেজ সংস্কার কাজ চলছে প্রায় চার মাস ধরে। কিছুদিন পরপর বন্ধ থাকে নির্মাণাধীন ড্রেনের কাজ। ফলে এ ড্রেন দিয়ে স্বাভাবিকভাবে পানি নিষ্কাশন হতে পারে না। গোবরচাকা পল্লীমঙ্গল গার্লস স্কুল ও কবি জসীমউদ্দীন কিন্ডারগার্টেনের সামনে ড্রেন বন্ধ করে অপরিকল্পিতভাবে ঢালাই দিয়ে সড়ক উঁচু করা হয়েছে। ফলে গোবরচাকা, নবীনগর এলাকার পানি হাজি ইসমাইল রোডের ড্রেনে মিশতে পারে না। বৃষ্টি হলে গোবরচাকা, নবীনগর, সোনাডাঙ্গা আবাসিক, তালিমুল মিল্লাত মাদরাসা এলাকায় জলাবদ্ধতা তৈরি হয়। শেখপাড়া বাজার-সংলগ্ন হাজি ইসমাইল লিঙ্ক রোডে ড্রেনেজের কাজ শেষ হওয়ার পর এখন নতুন করে ওয়াসার পয়োনিষ্কাশন প্রকল্পে পাইপ বসানোর কাজ শুরু হয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রায় ১ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে দুই মেগা প্রকল্পের সড়ক ও ড্রেনেজ উন্নয়ন কাজ ২০২২-২৩ অর্থবছরে শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু অধিকাংশ স্থানে ধীরগতিতে সময়মতো কাজ শেষ না হওয়ার আশঙ্কা লক্ষ করা যাচ্ছে। এ ছাড়া ২০২১-২২ অর্থবছরে ৩৯৩ কোটি টাকা ব্যয়ের আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কাজ শুরু হলেও সুফল মেলেনি। কেডিএ এভিনিউ (হাতিলের সামনে), পিটিআই মোড়সহ বিভিন্ন স্থানে বেলা ১১টা-১২টা পর্যন্ত সড়কের ওপর ময়লা-আবর্জনা পড়ে থাকে। দুর্গন্ধে এ পথ দিয়ে চলাচলে ভোগান্তি পোহাতে হয় পথচারীদের। সিটি করপোরেশনের তথ্যানুযায়ী, খুলনা নগরীতে ৮ হাজারের মতো ইজিবাইক চলাচল করে। তবে ট্রাফিক বিভাগ বলছে, এ সংখ্যা ১৫-২০ হাজার। সিটি করপোরেশনের দেওয়া লাইসেন্স নকল করে অবৈধ ইজিবাইক চলছে। শহর দাপিয়ে বিকট শব্দে চলছে ইট-বালুবাহী ট্রলিসহ অবৈধ যানবাহন। সবচেয়ে ভয়াবহ যানজট তৈরি হয় সোনাডাঙ্গা বাসস্ট্যান্ড, মজিদ সরণি, এম এ বারী রোড, গল্লামারী, শেরেবাংলা রোড, সাতরাস্তা মোড়, খানজাহান আলী রোড এলাকায়। নাগরিক নেতারা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে নগরবাসী যানজটের দুর্ভোগে অতিষ্ঠ হলেও স্থায়ী সমাধান হয়নি।

ফুটপাত দখল করেই অস্থায়ী দোকান, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। কোথাও হাসপাতাল বা মার্কেটের নিজস্ব পার্কিং না থাকায় সড়কের ওপরই অবস্থান করে ব্যক্তিগত গাড়ি, অ্যাম্বুলেন্স। সড়কে প্রশস্ততা কমে যাওয়ায় যানজটে ঘটছে দুর্ঘটনা। অপরিকল্পিত ড্রেনেজব্যবস্থার কারণে দ্রুত পানি নিষ্কাশন হয় না। পানি নিষ্কাশনে খাল দখল, ড্রেনে পেড়িমাটি, ময়লা-আবর্জনা প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে। ১৫ সেপ্টেম্বর রাত ৩টায় বৃষ্টি শুরু হলে এক ঘণ্টার মধ্যে গোবরচাকা, নবীনগর, সোনাডাঙ্গা আবাসিক প্রথম ফেজ, নিরালা প্রান্তিকা ও মুজগুন্নি আবাসিকে অধিকাংশ বাড়িঘরে পানি উঠতে থাকে। পরদিন বিকাল ৪টা পর্যন্ত ১৫ ঘণ্টার ব্যবধানেও মুজগুন্নি, গোবরচাকা, নবীনগর, নবপল্লী, তালিমুল মিল্লাত মাদরাসা এলাকার বাড়িঘর, মসজিদ, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পানিতে তলিয়ে ছিল। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয় বাসিন্দাদের।

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর