বুধবার, ১৯ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা
সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী

পাঁচ বছর পর রিভিউ শুনানিতে উঠছে কাল

আরাফাত মুন্না

সুপ্রিম কোর্টের বিচারক অপসারণের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের হাতে পুনর্বহাল সংক্রান্ত সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় রিভিউ চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদন শুনানির জন্য উঠছে আপিল বিভাগে। প্রায় পাঁচ বছর পর আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চের কার্যতালিকায় বিষয়টি শুনানির জন্য থাকবে বলে জানা গেছে।

উচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের কাছে ফিরিয়ে নিতে ২০১৪ সালে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী আনা হয়। সেই সংশোধনীকে চ্যালেঞ্জ করে রিট করলে হাই কোর্ট রুল জারি করে। এরপর রুলের চূড়ান্ত শুনানি শেষে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেয় হাই কোর্ট। আপিল বিভাগেও বহাল থাকে হাই কোর্টের রায়। এরপর এই রায় রিভিউ চেয়ে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। দীর্ঘদিন পর মামলাটির শুনানির উদ্যোগ নেয় রাষ্ট্রপক্ষ। তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৮ আগস্ট চেম্বার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম বিষয়টি শুনানির জন্য দিন ঠিক করে দেয়। জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, করোনার কারণে দীর্ঘদিন সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায় রিভিউ চেয়ে করা আবেদনটি শুনানি করা যায়নি। ২০ অক্টোবর শুনানির জন্য ধার্য রয়েছে। তিনি বলেন, ষোড়শ সংশোধনী বাতিল চেয়ে আপিল বিভাগের রায়ে কিছু অপ্রাসঙ্গিক পর্যবেক্ষণ রয়েছে। বিচারিক এখতিয়ারের বাইরে গিয়ে কিছু পর্যবেক্ষণ এসেছে রায়ে। এসব বিষয় তুলে ধরে আমরা রায়টি রিভিউ চেয়েছি। শুনানিতেও সেইসব যুক্তি তুলে ধরব। এ মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী মনজিল মোরসেদ সাংবাদিকদের বলেন, আমরা শুনেছি, রিভিউ শুনানির জন্য তারিখ ঠিক করা হয়েছে। শুনানির জন্য আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে। বহুল আলোচিত সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে আপিল বিভাগের দেওয়া রায় রিভিউর জন্য সর্বোচ্চ আদালতে ২০১৭ সালের ২৪ ডিসেম্বর আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় আবেদনটি করে রাষ্ট্রপক্ষ। রায় পুনর্বিবেচনার জন্য রাষ্ট্রপক্ষের ৯৪টি সুনির্দিষ্ট যুক্তি তুলে ধরে ৯০৮ পৃষ্ঠার রিভিউ আবেদনে পুরো রায় বাতিল চাওয়া হয়। রিভিউয়ে যুক্তি তুলে ধরে প্রয়াত অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম সে সময় জানিয়েছিলেন, সংবিধানের তফসিলে সন্নিবেশিত ১৯৭১-এর ১০ এপ্রিল প্রণীত ‘স্বাধীনতার ঘোষণাপত্র’ উল্লেখ করে রিভিউ আবেদনে বলা হয়, ‘একমাত্র বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই বাংলাদেশের ফাউন্ডিং ফাদার রূপে স্বীকৃত। আপিল বিভাগ ‘ফাউন্ডিং ফাদার্স’ বহুবচন শব্দ ব্যবহার করে ভুল করেছেন। তাই এর পুনর্বিবেচনা প্রয়োজন। রায়ের একটি অংশে পর্যবেক্ষণে ‘আমিত্ব’ ধারণা থেকে মুক্তি পেতে হবে বলে যা উল্লেখ আছে, সে প্রসঙ্গে রাষ্ট্রপক্ষ রিভিউ আবেদনে যুক্তি দেখিয়ে বলছে, ‘আদালতের এই পর্যবেক্ষণ ভিত্তিহীন ও অপ্রত্যাশিত, যা আমাদের এই মামলার বিবেচ্য বিষয় নয়। এটি সংশোধনযোগ্য।’ ষোড়শ সংশোধনীর আপিলের রায়ের আরেকটি পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, ‘১. আমাদের নির্বাচন প্রক্রিয়া ও সংসদ এখনো শিশুসুলভ, ২. এখনো এই দুটি প্রতিষ্ঠান মানুষের আস্থা অর্জন করতে পারেনি।’ এ বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তি হচ্ছে, ‘এই পর্যবেক্ষণ আদালতের বিচার্য বিষয় নয়। বিচারিক শিষ্টাচারের বাইরে গিয়ে এই পর্যবেক্ষণ দেওয়া হয়েছে, যা সংশোধনযোগ্য।’ ষোড়শ সংশোধনীর আপিলের রায়ের আরেকটি পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, ‘সংসদীয় গণতন্ত্র অপরিপক্ব। যদি সংসদের হাতে বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা দেওয়া হয়, তবে তা হবে আত্মঘাতী।’ এর সুরাহা চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ বলছে, আদালতের এই পর্যবেক্ষণ শুধু অবমাননাকরই নয়, বরং ভিন্ন রাজনৈতিক প্রশ্ন। আদালতের বিচারিক এখতিয়ারের বাইরে গিয়ে এই মন্তব্য করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর