মঙ্গলবার, ২৫ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা

ভিডিও কলে স্ক্রিন রেকর্ডের ফাঁদ, তরুণীরা টার্গেটে

আলী আজম

তথ্যপ্রযুক্তির এই যুগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করেন না এমন লোক খুব কমই আছেন। এ মাধ্যমে পরিচয়ের সূত্র ধরে প্রেম বা বিয়ের ঘটনাও ঘটছে অহরহ। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে ছুটে আসছেন কেউ কেউ। আবার দেশের বাইরেও পাড়ি জমান অনেকে। অন্তরঙ্গ বা আপত্তিকর মুহূর্তের ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়ে ব্ল্যাকমেইল করে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার ঘটনাও ঘটছে। এ সুযোগে প্রতারকরা সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রেমের সূত্র ধরে ভিডিও কলের কথোপকথন ও আপত্তিকর মুহূর্তের স্ক্রিন রেকর্ড করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়া শুরু করেছে।

এমন এক প্রতারককে গ্রেফতারের পর স্ক্রিন রেকর্ডারের মাধ্যমে শত শত তরুণীকে ফাঁদে ফেলার বিষয় জানতে পেরেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (উত্তর) বিভাগ। সূত্রটি জানায়, প্রেমের ফাঁদে ফেলে প্রতারণাকারী নাসিম আলমকে কুমিল্লার দেবিদ্বার এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। তিন দিনের রিমান্ড শেষে ২১ অক্টোবর তাকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। গ্রেফতারের সময় তার কাছ থেকে শতাধিক নারীর ভিডিও কলের স্ক্রিন রেকর্ড উদ্ধার করা হয়। ডিবি বলছে, ফ্রিল্যান্সিংয়ে কাজের কথা বলে মেয়েদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়া হতো। এরপর সেটি রূপ নিত প্রেমের সম্পর্কে। পরে ভিডিও কলে বিশেষ মুহূর্তের দৃশ্য রেকর্ড করে স্বজনদের কাছে পাঠানো এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে কিছুদিন পর পর হাতিয়ে নেওয়া হতো লাখ লাখ টাকা। নাসিম ডিবিকে জানিয়েছেন, প্রথমে বিভিন্ন মেয়েদের টার্গেট করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বন্ধুত্বের অনুরোধ পাঠাতেন তিনি। এরপর তাদের সঙ্গে কথা বলে ভালো সম্পর্ক তৈরি করে বিশ্বস্ততা অর্জন করতেন। কাউকে চাকরি পাইয়ে দেওয়া বা ফ্রিল্যান্সিংয়ের কাজ শিখিয়ে দেওয়ার প্রলোভন দিতেন। এভাবেই গড়ে উঠত প্রেমের সম্পর্ক। এরপর ওই নারীদের কথার জালে ফেলে আপত্তিকর অবস্থায় ভিডিও কলে কথা বলতেন। ওই ভিডিও স্ক্রিন রেকর্ড করে রাখতেন। এরপর বের হওয়া শুরু করত তার আসল চেহারা। তিনি ওই ভিডিও পাঠিয়ে শুরু করতেন ব্ল্যাকমেইল। স্বজনদের কাছে ভিডিও পাঠিয়ে এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে বিকাশের মাধ্যমে হাতিয়ে নিতেন টাকা। যারা টাকা দিতে পারত না তাদের স্বর্ণালংকার নিয়ে নিঃস্ব বানিয়ে ছাড়তেন। নাসিমের পাল্লায় পড়ে সর্বস্ব হারানো ভিকটিম নুসরাত (ছদ্মনাম) বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নাসিমের সঙ্গে পরিচয় হয়। ফ্রিল্যান্সিংয়ে কাজের কথা বলে কৌশলে মোবাইল নম্বর নেয়। এরপর ফেসবুক মেসেঞ্জার ও  হোয়াটসঅ্যাপে কথা বলে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে। এরই মধ্যে বিভিন্ন কৌশলে আপত্তিকর অবস্থায় কথা বলতে বাধ্য করে। পরে ওই ভিডিও রেকর্ড করে আমার কাছ থেকে সাড়ে ৫ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। এ অবস্থায় নুসরাত গত ২ অক্টোবর ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে ডিএমপির তেজগাঁও থানায় একটি মামলা করেন। ওই মামলায় নাসিম আলমকে গ্রেফতার করা হয়। আরেক প্রতারক মানিক হককে মানিকগঞ্জের শিবালয় এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (উত্তর) বিভাগ। আত্মীয়তার সুবাদে এক নিকটাত্মীয়র বাসায় নিয়মিত যাতায়াত ছিল তার। এরই মধ্যে তিনি ওই আত্মীয়র মেয়ের আপত্তিকর কিছু ছবি তোলেন। পরে  মেসেঞ্জারের মাধ্যমে ওই তরুণীকে ছবিগুলো পাঠিয়ে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনে চাপ দিতে থাকেন। রাজি না হলে ছবিগুলো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দিতে থাকেন। পরে ওই তরুণীর বাবা বাদী হয়ে গত ২২ সেপ্টেম্বর পল্লবী থানায় পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে মামলা করেন। ওই মামলায় মানিক হককে গ্রেফতার করা হয়। এসব বিষয়ে ডিবির সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (উত্তর) বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ তারেক বিন রশিদ বলেন, সাইবার প্রতারকরা প্রেমের ফাঁদে ফেলে ভিডিও কলে আপত্তিকর মুহূর্তের ভিডিও রেকর্ড করে শত শত নারীকে ফাঁদে ফেলছে। এ থেকে নিরাপদ থাকতে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে স্বল্প সময়ের পরিচয়ে কারও সঙ্গে গভীর সম্পর্ক স্থাপন থেকে বিরত থাকা, যার-তার ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট অ্যাকসেপ্ট না করা, অনলাইনে কাউকে নিজের ছবি বা ভিডিও না পাঠানো এবং আপত্তিকর অবস্থায় ভিডিও কলে কথা বলা থেকে বিরত থাকতে হবে। এরপরও যদি কেউ ব্ল্যাকমেইলের শিকার হয়, তাহলে পুলিশের সাইবার বিভাগে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন ডিবির এ কর্মকর্তা।

সর্বশেষ খবর