রবিবার, ৩০ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা

নিষেধাজ্ঞা শেষে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল

নিষেধাজ্ঞা শেষে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ

নিষেধাজ্ঞা শেষে ইলিশে সয়লাব বরিশালের মোকাম। হাসি ফুটেছে জেলেদের মুখে -বাংলাদেশ প্রতিদিন

টানা ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার ৯ ঘণ্টার ব্যবধানে বিপুল পরিমাণ ইলিশ এসেছে বরিশালের মোকামে। সেই সঙ্গে নদীর পাঙ্গাশও এসেছে কয়েক শ মণ। এতে ইলিশসহ অন্য মাছ সাধারণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে এসেছে। তবে তা গত বছরের তুলনায় বেশি বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। নিষেধাজ্ঞা শেষে এখন চাপলি (পোনা ইলিশ) শিকারে প্রশাসন কঠোর হলেও নদ-নদী ইলিশে সয়লাব হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এদিকে, ১ নভেম্বর থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত টানা আট মাস জাটকা শিকারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে বলে জানা গেছে।

সরেজমিন দেখা গেছে, গতকাল সকাল থেকে বরিশাল মোকামে আসতে থাকে শত শত মণ ইলিশ। বেলা ১১টার মধ্যে অন্তত দেড় হাজার মণ ইলিশ সরবরাহ হয় পোর্ট রোড মোকামে। বেশির ভাগ ইলিশের আকার বড়। কিছু জাটকাও দেখা গেছে। এ ছাড়া অন্তত ২০০ মণ নদীর পাঙ্গাশ এসেছে আড়তে। দীর্ঘদিন পর মোকামে বিপুল পরিমাণ ইলিশ, পাঙ্গাশ আসায় তুলনামূলক কম দামে বিক্রি হচ্ছে। এতে খুশি সাধারণ ক্রেতারা। এদিকে ব্যবসায়ীদের দাবি, ইলিশের দাম কিছুটা কম হলেও গত বছরের এই সময়ের তুলনায় সরবরাহ ও দাম দুটিই বেশি। ইলিশের দাম কিছুটা কম থাকায় অন্য মাছের মূল্যও কমেছে। এ ছাড়া নিষেধাজ্ঞার ধারাবাহিকতায় পোনা ইলিশ অর্থাৎ চাপলি শিকারে প্রশাসন কঠোর হলে নদ-নদীতে ইলিশের উৎপাদন বাড়বে আশা আড়তদার ও ব্যবসায়ীদের।

জেলা মৎস্য আড়তদার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি জাহাঙ্গীর সিকদার জানান, নিষেধাজ্ঞার পর গতকাল প্রথম দিন অন্তত দেড় হাজার মণ ইলিশ এসেছে মোকামে। বড় আকারের পাঙ্গাশও এসেছে ২০০ মণের ওপর। আগামী আরও এক-দুই দিন নদীতে প্রচুর ইলিশ আহরিত হবে বলে ধারণা তাঁদের।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান জানান, চাপলিসহ জাটকা সংরক্ষণে মৎস্য বিভাগের নানা পরিকল্পনা রয়েছে। এ কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে পারলে আগামীতে দেশে ইলিশ উৎপাদন বাড়বে।

চাঁদপুর প্রতিনিধি জানান, শুক্রবার মধ্যরাতে নদীতে নেমেছেন চাঁদপুরের জেলেরা। তবে আশানুরূপ মাছ পাননি বলে জানিয়েছেন তাঁরা। সারা রাত নদীতে কাটিয়ে তেল খরচের টাকাও জোগাড় হয়নি বলে মন্তব্য জেলেদের। তার পরও কর্মচাঞ্চল্য ফিরেছে চাঁদপুর বড় স্টেশন মাছঘাটে। সকাল থেকেই ব্যস্ত সময় পার করছেন শ্রমিকরা। ক্রেতা-বিক্রেতার হাঁকডাকে প্রাণ ফিরে পেয়েছে মাছঘাট। আড়তদাররা বলছেন, দু-তিন দিন পর ইলিশের সরবরাহ আরও বাড়বে। সরেজমিন দেখা গেছে, ঘাটে আসা বেশির ভাগ ইলিশই বড় আকারের। এর মধ্যে ৭০০ থেকে ৮০০ গ্রামের ইলিশ বিক্রি হয়েছে ৯০০ থেকে ৯৫০; ১ কেজি ওজনের ইলিশ ১ হাজার ১০০; ১ কেজি ২০০ গ্রামের ইলিশ ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৪০০, দেড় কেজি ওজনের ইলিশ ১ হাজার ৬০০ থেকে ১হাজার ৭০০ টাকা।

ভোলা প্রতিনিধি জেলেদের বরাত দিয়ে জানান, মেঘনায় প্রচুর মাছের দেখা মিলছে। জাল ফেললেই উঠে আসছে কাক্সিক্ষত ইলিশ, পাঙ্গাশসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ। জালেও ধরা পড়ছে। এ রকম আরও কয়েকদিন মাছ পেলে সবার ক্ষতি পুষিয়ে লাভের মুখ দেখবেন।

পাথরঘাটা (বরগুনা) প্রতিনিধি জানান, প্রথম দিনের মতো বিষখালী ও বলেশ্বর নদে জাল ফেলে প্রত্যাশার বেশি মাছ পেয়েছেন জেলেরা। বড় ইলিশ ছাড়াও সম্প্রতি বড় বিষখালী নদীতে ৫ থেকে ২০ কেজি ওজনের কোরাল, বোয়াল, পাঙ্গাশ, বাঘাইড়সহ বিভিন্ন ধরনের মাছ পাওয়া যাচ্ছে। জেলেরা নদী থেকে বাজারে মাছ আনতে শুরু করছেন দুপুর ১২টায়। বাজারে চাহিদার তুলনায় জোগান কম থাকায় চড?া দামে বিক্রি হচ্ছে ইলিশ। বাজারে পর্যাপ্ত মাছ সরবরাহ হলে দামও কমে যাবে।

সর্বশেষ খবর