রবিবার, ৩০ অক্টোবর, ২০২২ ০০:০০ টা

রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পাচ্ছে সংবিধান দিবস

উঠছে মন্ত্রিসভায়

আরাফাত মুন্না

রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ দলিল সংবিধানের প্রণয়ন দিবসকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিতে যাচ্ছে সরকার। স্বাধীনতার ৫১ বছরে এসে এই স্বীকৃতি দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে আইন মন্ত্রণালয়। এত দিন রাষ্ট্রীয়ভাবে উদযাপন করা না হলেও বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে ৪ নভেম্বর সংবিধান দিবস হিসেবে পালন করা হচ্ছে। মন্ত্রিসভার আগামী বৈঠকেই ৪ নভেম্বরকে জাতীয় সংবিধান দিবস হিসেবে ঘোষণার প্রস্তাব উঠবে বলে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।

আইনমন্ত্রী বলেন, ‘অনেক দিন ধরেই ৪ নভেম্বরকে সংবিধান দিবস হিসেবে ঘোষণার দাবি আসছে। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি এ দিনটিকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেওয়ার। মন্ত্রিসভার আগামী বৈঠকেই সংবিধান দিবস ঘোষণার প্রস্তাব উপস্থাপন করা হবে। মন্ত্রিসভার বৈঠকে পাস হলেই দিনটি জাতীয় দিবস হিসেবে স্বীকৃতি পাবে।’ আইন মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, ৪ নভেম্বরকে সংবিধান দিবস জাতীয়ভাবে পালনের জন্য এরই মধ্যে একাধিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় জাতীয় সংবিধান দিবস ঘোষণার পাশাপাশি আগামী ৪ নভেম্বর দিবসটি উদযাপনের জন্য কর্মপন্থা নির্ধারণ করা হয়েছে। এদিকে এ বছর সুপ্রিম কোর্টের পক্ষ থেকেও প্রথমবারের মতো সংবিধান দিবস উদযাপনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সংবিধানের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে আগামী ৪ নভেম্বর বিশেষ আলোচনা সভার আয়োজন করেছে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন। তবে রাষ্ট্রীয় দিবসটি উদযাপনের ঘোষণা এলে সুুপ্রিম কোর্টও তা অনুসরণ করবে। জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের মুখপাত্র ও আপিল বিভাগের রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ সাইফুর রহমান বলেন, আগামী ৪ নভেম্বর বিকালে সুপ্রিম কোর্টে ‘সংবিধান গৃহীত হওয়ার দিবস’ শীর্ষক আলোচনা সভার আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রধান বিচারপতিসহ উচ্চ আদালতের বিচারপতিরা এতে থাকবেন। সুপ্রিম কোর্টের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সংবিধান দিবসে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হচ্ছে। যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ জাতির পিতার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে স্বাধীনতা অর্জন করার মাত্র ১০ মাসের মধ্যে সংবিধান প্রণয়ন করতে পেরেছিল। বাংলাদেশের সংবিধান কেবল দেশের সর্বোচ্চ আইনই নয়, সংবিধানে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের মূল চরিত্র বর্ণিত রয়েছে। গণপরিষদে সংবিধানের ওপর বক্তব্য রাখতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, ‘এ সংবিধান শহীদের রক্তে লিখিত, এ সংবিধান সমগ্র জনগণের আশা-আকাক্সক্ষার মূর্ত প্রতীক হয়ে বেঁচে থাকবে।’

সংবিধান প্রণয়নের উদ্দেশ্যে ১৯৭২ সালের ১১ এপ্রিল তৎকালীন আইনমন্ত্রী ড. কামাল হোসেনকে সভাপতি করে ৩৪ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। একই বছর ১২ অক্টোবর গণপরিষদের দ্বিতীয় অধিবেশনে ড. কামাল হোসেন খসড়া সংবিধান বিল আকারে উত্থাপন করেন। এই কমিটি ভারত ও যুক্তরাজ্যের সংবিধানের আলোকে বাংলাদেশের সংবিধান রচনা করে। মূল সংবিধান ইংরেজি ভাষায় রচিত হয় এবং একে বাংলায় অনুবাদ করা হয়। এরপর ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর গণপরিষদে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধান ‘সংবিধান বিল’ হিসেবে সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত ও অনুমোদিত হয়। ১৯৭২ সালে সংবিধান প্রণয়নের পর ৫০ বছরে ১৭ বার সংবিধান সংশোধন হয়েছে। এর মধ্যে পঞ্চম, সপ্তম, ত্রয়োদশ ও ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট। ৪ নভেম্বর গণপরিষদে সংবিধান বিল গৃহীত হওয়ার দিনটিকেই সংবিধান দিবস হিসেবে ঘোষণার দাবি দীর্ঘদিনের। জাতীয়ভাবে ৪ নভেম্বর সংবিধান দিবস পালন না হলেও বিগত বছরগুলোতে বেসরকারি সংগঠনের উদ্যোগে দিবসটি পালিত হয়েছে।

 

সর্বশেষ খবর