বৃহস্পতিবার, ৩ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

দেশের রপ্তানিতে যুদ্ধের প্রভাব

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশের রপ্তানিতে যুদ্ধের প্রভাব

রপ্তানি খাতে ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাব টের পাওয়া গিয়েছিল গত সেপ্টেম্বরেই। ওই মাসে আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৬ শতাংশ রপ্তানি কমেছিল। অক্টোবরে এসে নেতিবাচক প্রভাব আরও স্পষ্ট হয়েছে। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এ মাসে রপ্তানি আয় কমেছে ৭ দশমিক ৮৫ শতাংশ। গতকাল প্রকাশিত রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)’র তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের অক্টোবরে ৪৩৫ কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে, যা গত অর্থবছরের অক্টোবরের তুলনায় ৩৭ কোটি মার্কিন ডলার কম। ওই সময় রপ্তানির পরিমাণ ছিল ৪৭২ কোটি মার্কিন ডলার। দেশে যখন ডলারের দাম বাড়ছে, কমে যাচ্ছে বৈদেশিক মুদ্রার মজুদ- তখন রেমিট্যান্সের পর গত দুই মাসে পরপর রপ্তানি আয় কমে যাওয়াকে অর্থনীতির জন্য অশনি সংকেত বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

ইপিবির কর্মকর্তারা বলছেন, বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের প্রধান গন্তব্য হচ্ছে পশ্চিমা দেশগুলো। ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ওই অঞ্চলে মূল্যস্ফীতি বেড়ে গেছে। ইউরোপ ও আমেরিকায় চাহিদা কমায় রপ্তানি খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।

তারা বলছেন, অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে রপ্তানি আয়ে ইতিবাচক ধারা অব্যাহত ছিল। গত আগস্টেও টার্গেট ছাড়িয়ে গিয়েছিল আয়। আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রবৃদ্ধি ছিল প্রায় ৩৮ শতাংশ। তবে অর্থবছরের তৃতীয় মাস সেপ্টেম্বর থেকেই কমতে থাকে রপ্তানি আয়, যা অক্টোবরেও অব্যাহত রয়েছে। চলমান বৈশ্বিক পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে রপ্তানি খাতে নেতিবাচক প্রভাব আরও দীর্ঘায়িত হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন ইপিবির কর্মকর্তারা। তবে পশ্চিমা দেশগুলোর চাহিদা কমার কারণেই দেশের রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব- এমনটি মনে করছেন না বাংলাদেশের নিট পোশাক খাতের শীর্ষ সংগঠন বিকেএমইএ’র নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম। বাংলাদেশ প্রতিদিনকে তিনি বলেন, রপ্তানি খাতে নেতিবাচক প্রভাবের পেছনে মূল কারণ হচ্ছে দেশের গ্যাস সংকট। গ্যাসের অভাবে আমাদের কারখানাগুলোর উৎপাদন অর্ধেকে নেমে এসেছে। অনেক কারখানা যা রপ্তানি করছে, তা দিয়ে শ্রমিকের বেতনও ঠিকমতো পরিশোধ করতে পারছে না। তিনি বলেন, যেখানে উৎপাদনই হচ্ছে না, সেখানে পণ্য রপ্তানি বাড়ার কোনো কারণ  নেই। গ্যাস সংকট দূর না হলে রপ্তানি খাতে নেতিবাচক প্রভাব আরও বাড়বে বলেও আশঙ্কা করেন তৈরি পোশাক খাতের এই উদ্যোক্তা। ইপিবির তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, মাসের হিসাবে কমলেও অর্থবছরের হিসাবে এখনো রপ্তানি আয় ইতিবাচক ধারায় রয়েছে। চলতি অর্থবছরে পণ্য রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫ হাজার ৮০০ কোটি ডলার। এর মধ্যে জুলাই-অক্টোবর প্রান্তিকে ১ হাজার ৬৮৫ কোটি মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এটি বিগত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ৭ শতাংশ বেশি। আলোচ্য সময়ে রপ্তানি বেড়েছে তৈরি পোশাক, হোম টেক্সটাইল, প্লাস্টিক পণ্য, চামড়া, ক্যাপ, চামড়ার জুতা, কাগজ ও কাগজপণ্য, কাঁচাপাট, ইলেকট্রিক পণ্য, গুঁড়া মসলা, সিরামিক পণ্য ইত্যাদি। অপরদিকে রপ্তানি কমেছে এমন পণ্যগুলো হলো- শাকসবজি, ওষুধ, ফলমূল, হ্যান্ডিক্রাফটস, ফার্নিচার, কার্পেট, চিংড়ি, বাইসাইকেল, শুকনো খাবার, জুট ইয়ার্ন অ্যান্ড টোয়াইন, টেরি টাওয়েল ইত্যাদি।

সর্বশেষ খবর