শনিবার, ৫ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

কঠিনচীবর দানে মানুষের ঢল

ফাতেমা জান্নাত মুমু, রাঙামাটি

কঠিনচীবর দানে মানুষের ঢল

রাঙামাটিতে কঠিনচীবর দান উৎসবে ঢল নেমেছে লাখো মানুষের। পুণ্যার্থীর শ্রদ্ধায় সিক্ত রাঙামাটি রাজ বনবিহারের ভিক্ষু সংঘ। গতকাল উৎসবের প্রধান অনুষঙ্গ ভান্তেদের মহাদানযজ্ঞের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে পার্বত্যাঞ্চলের মাসব্যাপী কঠিনচীবর দান উৎসব। তাই শেষ মুহূর্তেও ছিল উৎসব মুখর রাঙামাটি। এ মহাপুণ্যানুষ্ঠানে সদ্ধর্মানুরাগী অগণিত পুণ্যার্থীর পাশাপাশি ঢল নামে হাজার হাজার দর্শনার্থীর। লোকারণ্যে পরিণত হয় পুরো রাঙামাটি শহর। সব ধর্ম, বর্ণ, সম্প্রদায়ের লাখো নারী-পুরুষের মহাসম্মিলনে পুরো বিহার এলাকা জনসমুদ্রে পরিণত হয়। হাজারো মানুষের পদভারে মুখর রাজপথ থেকে সমগ্র রাজবন বিহার এলাকা। তিল ধারণের জায়গাটুকু অবশিষ্ট ছিল না কোথাও। লাখো মানুষের কণ্ঠে সাধু, সাধু, সাধু ধ্বনিতে প্রকম্পিত হয় পুরো রাজবন বিহার। বেলা আড়াইটাই রাজবন বিহার মাঠে আয়োজিত ধর্মীয় অনুষ্ঠানে পুণ্যার্থীদের উদ্দেশে দেশনা দেন বিহারের আবাসিক প্রধান শ্রীমৎ প্রজ্ঞালংকার মহাস্থবিরসহ শীর্ষ বৌদ্ধ ভিক্ষুরা। এ সময় চাকমা রাজা ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়, রাঙামাটি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অং সুই প্রু চৌধুরী, রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মো. মিজানুর রহমান, চাকমা রানী ইয়েন ইয়েন, বিহারের উপাসক-উপাসিকা পরিষদের সভাপতি গৌতম দেওয়ান, সদস্য নিরূপা দেওয়ান ও অ্যাডভোকেট সুস্মিতা চাকমা উপস্থিত ছিলেন। এ সময় সমবেত পুণ্যার্থীদের উদ্দেশে মহাসাধক শ্রীমৎ সাধনানন্দ মহাস্থবির বনভান্তের হিতোপদেশ উদ্ধৃতি দিয়ে শ্রীমৎ প্রজ্ঞালংকার মানুষকে সব সময় সৎ ও ন্যায়নীতির পথ অবলম্বনের মাধ্যমে হিংসা-বিদ্বেষ, স্বার্থপরতা, লোভ-লালসা, ক্ষমতার গর্ব, বর্বরতা ও পাশবিকতার বিপরীতে বুদ্ধের প্রেম, সাম্য, মৈত্রী, ক্ষমা, ত্যাগ, অহিংসা, আত্মসংযম ও করুণার বশবর্তী হয়ে বিশ্বমানবের সুখ-শান্তি ও কল্যাণে ব্রত থাকার পরামর্শ দেন।

এছাড়া পুণ্যার্থীদের উদ্দেশে বৌদ্ধ আর্যপুরুষ মহাসাধক শ্রীমৎ সাধনানন্দ মহাস্থবির বনভান্তের সব প্রাণীর হিতার্থে দেশনা শুনানো হয়। উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার বিকালে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের প্রার্থনা শেষে চরকায় সুতা কেটে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয় কঠিনচীবর দান উৎসব। এ উৎসবে শুধু ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায় নয়, সব ধর্ম-বর্ণের মানুষের সমাগম ঘটে এখানে। কেউ আসেন উৎসবের সঙ্গী হতে। আবার কেউ আসেন পুণ্যতা লাভের বাসনায়।

রাতভর চলে কাপড় বুনন, সেলাই ও রং করার কাজ। সাধারণত ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর নারীরা অংশ নেয় এ বস্ত্র তৈরি উৎসবে। তাদের ধর্মীয় বিশ্বাস এ উৎসবে ২৪ ঘণ্টায় বস্ত্র তৈরি করে ভিক্ষুদের দান করতে পারলে মিলবে পুণ্যতা। ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর নারীদের কোমড় তাঁতে ২৪ ঘণ্টায় তৈরি বিশেষ চীবর বৌদ্ধ আর্যপুরুষ মহাসাধক শ্রীমৎ সাধনানন্দ মহাস্থবির বনভান্তের প্রধান শীর্ষ প্রজ্ঞালংকার মহাস্থবির হাতে এগুলো তুলে দেন রাঙামাটির চাকমা রাজা ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়। আর এরই মধ্য দিয়ে তিন পার্বত্য জেলা রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান এবং চট্টগ্রামে সম্পন্ন হয় মাসব্যাপী বৌদ্ধ ধর্মালম্বীদের কঠিনচীবর দান উৎসব।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর