মঙ্গলবার, ৮ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

আমেরিকা থেকে ফিরতে চান ধামাকার মালিক

♦ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে দিলে পরিশোধ করবে গ্রাহকের টাকা ♦ দায়-দেনার তথ্য জানিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

প্রতারণার দায়ে বন্ধ হয়ে যাওয়া ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ধামাকা শপিংয়ের মালিক এস. এম. ডি. জসীম উদ্দিন চিশতী এখন গ্রাহকের পাওনা টাকা পরিশোধ করতে চাইছেন। এ লক্ষ্যে তার প্রতিষ্ঠানের জব্দ ব্যাংক অ্যাকাউন্টগুলো খুলে দেওয়ার জন্য সম্প্রতি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক চিঠিতে আবেদন জানিয়েছেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বলছে, চিঠিতে দায়-দেনার যে হিসাব রয়েছে- গ্রাহকের দাবিকৃত পাওনা টাকার পরিমাণ তার চেয়ে অনেক বেশি। এ কারণে ধামাকার অ্যাকাউন্টে কী পরিমাণ টাকা জমা আছে তার হিসাব চেয়ে চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ডব্লিউটিও সেলের মহাপরিচালক ও কেন্দ্রীয় ডিজিটাল কমার্স সেলের প্রধান মো. হাফিজুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, ধামাকা শপিং ডট কমের মালিক জব্দ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলে দেওয়ার শর্তে গ্রাহকের টাকা ফেরত দেওয়ার কথা বলছেন। যেহেতু প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে মামলা চলমান, তাই ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার জন্য তাকে আদালতে আবেদন জানাতে হবে। তবে ধামাকার জব্দকৃত অ্যাকাউন্টে কী পরিমাণ টাকা জমা আছে, ওই টাকায় গ্রাহকের অর্থ পরিশোধ সম্ভব কি-না সে বিষয়টি আমরা খতিয়ে দেখছি। জব্দকৃত অ্যাকাউন্টে জমাকৃত টাকার পরিমাণ জানতে প্রতিষ্ঠানটির কাছে চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে বলেও জানান কেন্দ্রীয় ডিজিটাল কমার্স সেলের প্রধান।

ধামাকা শপিং ডট কম প্রতিষ্ঠানটি আসলে আমেরিকা প্রবাসী জসীম উদ্দিন চিশতীর মালিকানাধীন ইনভ্যারিয়েন্ট টেলিকম লিমিটেডের একটি ছদ্ম প্রতিষ্ঠান। ই-কমার্স ব্যবসায় ধামাকা শপিং ডট কমের কোনো প্রকার অনুমোদন ও লাইসেন্স ছিল না। ছিল না প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবসায়িক কোনো অ্যাকাউন্ট। ব্যবসা পরিচালনায় ইনভ্যারিয়েন্ট টেলিকম লিমিটেড নামক প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টে ব্যবসায়িক লেনদেন করেছে ধামাকা।

ই-কমার্স ব্যবসার নামে গ্রাহককে পণ্য না দিয়ে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে প্রতিষ্ঠানটির নামে ৩টি মামলা হয়েছে, যার দুটি জি আর ও একটি মানি লন্ডারিং মামলা। গত বছরের সেপ্টেম্বরে প্রতারণার অভিযোগে ধামাকা শপিং ডটকমের চেয়ারম্যান ও পরিচালকসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে টঙ্গী পশ্চিম থানায় মামলা করেন এক ব্যবসায়ী।

জব্দ অ্যাকাউন্টে লেনদেন ৭৫০ কোটি টাকা, গ্রাহকের পাওনা ৩০০ কোটি টাকা : প্রতিষ্ঠানটিতে গ্রাহকের পাওনা সম্পর্কে ভিন্ন ভিন্ন তথ্য পাওয়া গেছে। এ বছরের মাঝামাঝি সময় জাতীয় প্রেস ক্লাবে অনুষ্ঠিত এক মানববন্ধনে ধামাকা কাস্টমার কমিউনিটির সভাপতি মো. মাহফুজুর রহমান বলেন, ধামাকা শপিংয়ের এম ডি জসীম উদ্দিন চিশতী সাধারণ ৩ লাখ গ্রাহকের ৩০৩ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছে। গত ১ বছরে সে বিভিন্নভাবে টাকা ফেরত দেওয়ার মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে গ্রাহকদের হয়রানি করে আসছে।

গত বছরের সেপ্টেম্বরে মামলার পর প্রতিষ্ঠানটির কয়েক কর্মকর্তাকে গ্রেফতার ও তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। এক সংবাদ সম্মেলনে জানায়, ২০১৮ সালে শুরু হওয়া ধামাকা ডিজিটাল ২০২০ থেকে ধামাকা শপিং ডট কম নামে কার্যক্রম শুরু করে। বিপুল পরিমাণ অর্থ লেনদেন হওয়া সত্ত্বেও বর্তমানে ওই অ্যাকাউন্টে রয়েছে লাখ খানেক টাকা। শুধু তাই নয়, বেতন-ভাতা বাকি রয়েছে ১৮০-১৯০ কোটি টাকা, গ্রাহকদের বকেয়া ১৫০ কোটি টাকা ও গ্রাহকদের রিফান্ড চেক বকেয়া ৩৫-৪০ কোটি টাকা। মামলার পর অ্যাকাউন্ট জব্দ হওয়া পর্যন্ত ওই অ্যাকাউন্টে ৭৫০ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে।

দায়-দেনা সম্পর্কে ধামাকার মালিক যা বলছেন : বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো চিঠিতে ধামাকা শপিংয়ের দায়-দেনা পরিশোধ করে গ্রাহকের পাওনা টাকা ফেরত দেওয়ার বিষয়ে একটি রোডম্যাপ দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটির মালিক জসীম উদ্দিন চিশতী। ওই রোডম্যাপে বলা হয়েছে, প্রতিষ্ঠানটির কাছে গ্রাহকের মোট পাওনা টাকার পরিমাণ ২৫ কোটি টাকা; সেলারদের পাওনা অর্থের পরিমাণ প্রায় ৬৫ কোটি টাকা; প্রতিষ্ঠানটির আন্ত কোম্পানি ঋণ আছে আরও ২৪ কোটি টাকা; নগদ অ্যাকাউন্টে আছে ৪৪ লাখ টাকা। এছাড়া পেমেন্ট গেটওয়েতে ৩ লাখ টাকা ও ক্লায়েন্টদের কাছে কয়েক কোটি টাকা পাওনা রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এসব দায়-দেনা পরিশোধের জন্য ১০ থেকে ১৫ কোটি টাকা অভ্যন্তরীণ ঋণ এবং ৮০ থেকে ১০০ কোটি টাকা বিদেশি বিনিয়োগ আনতে পারবেন বলে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

চিঠিতে জসীম উদ্দিন চিশতী উল্লেখ করেন, দায়-দেনা পরিশোধের সক্ষমতা থাকার পরও মানি লন্ডারিং মামলা থাকায় ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ থাকার কারণে অফিস ভাড়া, সার্ভিস চার্জ, কর্মচারীদের বেতন-ভাতাসহ গ্রাহকের পাওনা টাকা পরিশোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারছেন না। প্রয়োজনীয় ঋণের সংস্থান ও বিদেশি বিনিয়োগ আনতে পারলে এক বছরের মধ্যে গ্রাহক ও সেলারের পাওনা টাকা পরিশোধ করা সম্ভব হবে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। বিদেশি বিনিয়োগ ও ঋণের সংস্থান করে পুনরায় ব্যবসা কার্যক্রম শুরুর জন্য তিনি আমেরিকা থেকে দেশে ফিরতে চান বলেও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

ইনভ্যারিয়েন্ট টেলিকম বাংলাদেশ লিমিটেডের এম ডি আমেরিকা প্রবাসী জসীম উদ্দিন চিশতীর পক্ষে প্রতিষ্ঠানটির মানব সম্পদ বিভাগের ব্যবস্থাপক মুকিতুর রহমান এই চিঠিটি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠান। আবেদনে মুকিতুর রহমানের নামের নিচে যোগাযোগের জন্য যে মোবাইল ফোন নাম্বার দেওয়া ছিল, সে নাম্বারে বহুবার চেষ্টা করেও সংযোগ পাওয়া যায়নি। গতকাল সন্ধ্যায় ফোন দেওয়া হলে তার নাম্বারটিতে ওই মুহূর্তে সংযোগ দেওয়া সম্ভব নয় বলে জানানো হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর