শুক্রবার, ১১ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

এককেন্দ্রিক সেবা নগর পরিবহনের

হাসান ইমন

এককেন্দ্রিক সেবা নগর পরিবহনের

বাস রুট রেশনালাইজেশনের আওতায় এখন পর্যন্ত তিন রুটে ‘ঢাকা নগর পরিবহন’র পাইলট প্রকল্প চালু হয়েছে। এর মধ্যে ২১ নম্বর রুট ঘাটারচর থেকে কাঁচপুর, ২২ নম্বর রুট ঘাটারচর থেকে স্টাফ কোয়ার্টার ও ২৬ নম্বর রুট ঘাটারচর থেকে কদমতলী সড়কে এ প্রকল্পের বাস চলাচল করছে। এতে ঘাটারচর, মোহাম্মদপুর, শ্যামলী, শাহবাগ, প্রেস ক্লাব, মতিঝিল এলাকার নাগরিকরা নগর পরিবহনের সেবা পাচ্ছে। উত্তরা, বনানী, তেজগাঁও, মিরপুর, গাবতলীর দিকে নগর পরিবহনের কোনো বাস সেবা চালু করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট কমিটি। এই পরিবহন সেবা এককেন্দ্রিক হওয়ায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন এসব এলাকার নাগরিকরা। নতুন রুটে এ পরিবহন সেবা চালুর উদ্যোগেও কচ্ছপগতি। একটি রুটের উদ্বোধনের পর পরবর্তী রুট চালু করতে প্রায় বছর চলে যায়।

কমিটি সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঢাকায় এর আগে পরিবহন পরিকল্পনা কখনো হয়নি। শুধু আবাসন নিয়ে পরিকল্পনা হয়েছে। ওইসব আবাসনে থাকা মানুষ কীভাবে বের হবে এর কোনো পরিকল্পনা নেওয়া হয়নি। এখন আমরা পরিকল্পনা করছি। বাস টার্মিনাল, ডিপো ও বাস স্টপেজ নির্ধারণ করছি। যে কাজগুলো এত বছরে হয়নি তা বাস্তবায়ন হতে একটু সময় লাগবেই।

জানা যায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় ২০১৫ সালের শেষের দিকে তৎকালীন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র আনিসুল হক গণপরিবহনে শৃঙ্খলা ফেরাতে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছিলেন। সে সময় সংশ্লিষ্টরা আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট বিশ্লেষণ করে ১৬টি সুপারিশ করেন। সেসব সুপারিশ গ্রহণ করে পরিবহন মালিকরা সরকারের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হন। বিশ্বের উন্নত দেশের পরিবহন ব্যবস্থাপনার আদলে রাজধানী ঢাকায়ও  ‘বাস রুট রেশনালাইজেশন ও কোম্পানিভিত্তিক পরিবহন ব্যবস্থাপনা’ কর্মপরিকল্পনা নেওয়া হয়। এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে রাজধানীর ৩৮৬টি রুট নেমে আসবে ৪২টি রুটে। আর ৩০০ বাস কোম্পানিকে নামিয়ে আনা হবে ২২টিতে। আনিসুল হকের মৃত্যুর পর কিছুদিন এই উদ্যোগ থমকে ছিল। ২০১৮ সালের জুলাই-আগস্টে নিরাপদ সড়ক দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) তৎকালীন মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকনকে আহ্বায়ক করে ১০ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটি কয়েকটি সভা করে ক্ষান্ত হয়। পরে ওই কমিটিতে ডিএসসিসি মেয়র তাপসকে আহ্বায়ক ও ডিএনসিসি মেয়র আতিকুল ইসলামকে যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়। তাদের চেষ্টায় তিনটি রুটে পাইলট প্রকল্প হিসেবে নগর পরিবহন চালু হয়েছে। এদিকে ঢাকা নগর পরিবহনের এককেন্দ্রিক সেবায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন উত্তরা, বনানী, মিরপুর, গাবতলী এলাকার নাগরিকরা। তারা বলেন, এ পর্যন্ত যতগুলো রুটে নগর পরিবহন চালু হয়েছে সবগুলো মতিঝিলকেন্দ্রিক। শুধু তারাই ঢাকার নাগরিক, আমরা বনানী এলাকার বাসিন্দারা নই? বিষয়টি তো এমন নয়! তাহলে আমরা কেন এ সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি? দ্রুত এই রুটগুলোতে নগর পরিবহন সেবা চালু দেখতে চান তারা। এ বিষয়ে বাস রুট রেশনালাইজেশন কমিটির উপদেষ্টা এস এম সালেহ উদ্দিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ঢাকা নগর পরিবহন ইতোমধ্যে তিনটি (২১, ২২, ২৬) রুটে পাইলট প্রকল্প হিসেবে চালু হয়েছে। চলতি মাসের শেষের দিকে ২৩ নম্বর রুটটিও চালু হবে। এরপর আর পাইলট প্রকল্পের দিকে যাব না। প্রধানমন্ত্রীর কাছে দেওয়া প্ল্যান অনুযায়ী বাস রুট রেশনালাইজেশন কার্যক্রম শুরু করব। আগামী সভায় আমি কমিটির প্রধানসহ অন্যদের প্রধানমন্ত্রীর কাছে দেওয়া পরিকল্পনা অনুযায়ী কার্যক্রম চালুর কথা বলব। পাইলট প্রকল্প চালুর কারণ মূলত এই চার রুটে নাগরিক সেবা কতটুকু পাচ্ছে তার ফিডব্যাক জানা। এখন পর্যন্ত চালু হওয়া তিনটি রুটের কার্যক্রম মোটামুটি ভালো। তিনি বলেন, এই কার্যক্রম হাতে নেওয়ার সময় আমাদের হাতে কোনো পরিবহন পরিকল্পনা ছিল না। আমরা নতুন করে পরিবহন পরিকল্পনা, ভূমি ব্যবহার, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা করছি। নতুন করে বাস টার্মিনাল ও বাস ডিপোর স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে। এর জমি অধিগ্রহণের কাজ চলছে। চালু হওয়া রুটে বাস স্টপেজ ও যাত্রী ছাউনি করা হয়েছে। নতুন রুট চালুর উদ্যোগ নিলে এসব কার্যক্রম বাস্তবায়ন হয়ে যাবে। কমিটির এ উপদেষ্টা বলেন, শুধু এককেন্দ্রিক নয়, এই প্রকল্প অনুযায়ী ধীরে ধীরে সব রুটে বাস্তবায়ন হবে। মেয়ররা চেষ্টা করছেন। একটু সময় তো লাগবেই। এ বিষয়ে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় সংস্থার (ডিটিসিএ) ডেপুটি ট্রান্সপোর্ট প্ল্যানার ধ্রুব আলম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, নতুন রুট চালু করতে একটু সময় প্রয়োজন। কারণ একটা নতুন রুট মানে বাস, যাত্রী ছাউনি, চালক, টিকিট বিক্রির স্থানসহ অনেকগুলো বিষয় জড়িত। চাইলেই এগুলো খুব দ্রুত বাস্তবায়ন সম্ভব নয়। এরপর নতুন কোন রুট চালু হবে সভায় সিদ্ধান্ত হবে। এর আগে বলা যাচ্ছে না।

সর্বশেষ খবর