শনিবার, ১২ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

তদন্ত নিয়ে ধোঁয়াশা প্রশ্ন বুশরাকে নিয়ে

নিজস্ব প্রতিবেদক

তদন্ত নিয়ে ধোঁয়াশা প্রশ্ন বুশরাকে নিয়ে

ফারদিন হত্যা

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র ফারদিন নূর পরশ হত্যার তদন্ত নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে। উঠেছে অনেক প্রশ্ন। কেউ কেউ বলছেন, বুয়েটের এই মেধাবী ছাত্র রাত ২টা ৩৫ মিনিটে আদৌ কি চনপাড়া এলাকায় গিয়েছিলেন? তাদের মন্তব্য, চনপাড়ার মাদক স্পট দিনের বেলায়ই ভয়ঙ্কর। সেখানে মাদক কিনতে গিয়ে ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছেন কেউ কেউ। আবার অনেকে খুইয়েছেন গুরুত্বপূর্ণ সামগ্রী। আর রাতের বেলার দৃশ্য তো সহজেই অনুমেয়! কেউ কেউ বলছেন, ফারদিন যদি চনপাড়ায় গিয়েও থাকেন তাহলে তার সঙ্গে কেউ না কেউ ছিলেন। আবার কারও মন্তব্য, অপহরণের পর ফারদিনকে চনপাড়া এলাকায় হত্যা করে ফেলা হয়েছে কি না? বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা উচিত মনে করছেন তারা।

তদন্ত-সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, গত এক মাস ধরে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের একটি সার্ভের কাজ করছিলেন ফারদিন ও তার কয়েকজন সহপাঠী। এ জন্য গত ১ এবং ২ নভেম্বর দিনের বেলায় রূপগঞ্জ এলাকায় গিয়েছিলেন। প্রযুক্তিগত বিশ্লেষণেও, ফারদিনের মোবাইল ফোন লোকেশন চনপাড়া-সংলগ্ন কায়েতপাড়ায় দেখা গেছে। গত ৪ নভেম্বর নিখোঁজ হওয়ার রাতে ঢাকার জনসন রোডে ফারদিনের সেলফোন

থেকে ১১টা ৭ মিনিটে কল যায়। রাত ২টা ৩৫ মিনিটে তার সেল ফোন একেবারে বন্ধ হয়ে যায়। এর আগে রাত ১টা ৫৯ মিনিট পর্যন্ত বান্ধবী আমাতুল্লাহ বুশরার সঙ্গে মেসেঞ্জারে চ্যাট করেছেন।

এদিকে গত রাতে ফারদিনের বাবা ও মামলার বাদী কাজী নূর উদ্দিন রানা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমার ছেলের চরিত্র নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়ানো হচ্ছে। যা সত্যিই খুব কষ্টকর। আমার ছেলে বলে বলছি না, এমন মেধাবী ছাত্রের এ রকম নির্মম মৃত্যু কি প্রত্যাশিত? আমার ছেলেকে কখনো একটি সিগারেট ফুঁকতে দেখিনি। সেখানে বলা হচ্ছে, সে চনপাড়া মাদকের স্পটে গিয়েছিল। সে তো সব সময় টিউশনি-পড়াশোনা নিয়েই ব্যস্ত থাকত। ফারদিন কখনো মাদকসেবী ছিলেন না বলে দাবি করেছে বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের তার সহপাঠীরা। তারা কেউই তাকে কখনো মাদক গ্রহণ করতে দেখেনি। এমনকি ফারদিন সিগারেটের ধোঁয়াতেও বিরক্ত হতো বলে জানিয়েছে তারা। গতকাল ‘বুয়েট সাংবাদিক সমিতি’ নামে একটি ফেসবুক পেজ থেকে শিক্ষার্থীদের বক্তব্য প্রকাশ করা হয়েছে। আবরার হত্যাকান্ডসহ বুয়েটের বিভিন্ন ঘটনায় এই পেজটি থেকে ইতিপূর্বে শিক্ষার্থীদের বক্তব্য প্রচার করা হয়। একটি পোস্টে দাবি করে বলা হয়, ‘ফারদিনের সহপাঠী এবং বন্ধুদের ভাষ্যমতে তাকে তারা কেউই কখনো মাদক নিতে দেখেনি’। ঘটনার রাতে আমাতুল্লাহ বুশরা নামের একজনের সঙ্গে ফারদিনের কথোপকথন বিষয়টি উল্লেখ করে বলা হয়, ফারদিনের ছোট ভাইয়ের ভাষ্যমতে, বুশরা ফারদিনের বান্ধবী, কিন্তু প্রেমিকা নয়। বুশরার সঙ্গে ফারদিনের মেসেঞ্জারে আলাপ থেকে পুলিশও ইতিপূর্বে এমনটা জানায়। আরিশা নামে ফারদিনের এক বান্ধবীর ছবি বিভিন্ন মাধ্যমে বুশরা বলে চালিয়ে দেওয়া হয়েছে বলেও এতে অভিযোগ করা হয়। এতে বলা হয়, কিছু গণমাধ্যম রামপুরা টেলিভিশনের সামনের একটি সিসিটিভি ফুটেজে রাস্তায় হেঁটে যাওয়া একটি ছেলেকে ফারদিন বলে চিহ্নিত করেছে। কিন্তু নিখোঁজ হওয়ার দিন ফারদিনের পরনের কাপড় এবং জুতার সঙ্গে এর মিল নেই। বরং রিকশায় চড়া অবস্থায় যে ফুটেজে ফারদিনকে চিহ্নিত করা হয়েছে সেটিই ফারদিন। এতে ফারদিনের বন্ধু এবং আপনজনদের বরাতে আরও উল্লেখ করা হয়, ফারদিন চিন্তা-চেতনায় একজন যুক্তিবাদী মানুষ এবং কোনো প্রকার উগ্রবাদী কোনো গ্রুপের সঙ্গে তার কোনো সংশ্লিষ্টতা ছিল না।

এ বিষয়ে গতকাল ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার (মিডিয়া) মো. ফারুক হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, এ বিষয়গুলো গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। তদন্তের অগ্রগতি হলে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হবে। প্রসঙ্গত, গত ৪ নভেম্বর ডেমরার শান্তিবাগ এলাকার বাসা থেকে বুয়েটের উদ্দেশে বের হন ফারদিন। ওই দিন তিনি বাসায় না ফেরায় পরিবারের সদস্যরা খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, ফারদিন বিশ্ববিদ্যালয়ে যাননি। এমনকি পরদিনের পরীক্ষায়ও অংশ নেননি। এ ব্যাপারে ৫ নভেম্বর রামপুরা থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন ফারদিনের বাবা কাজী নূর উদ্দিন রানা। গত ৭ নভেম্বর নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে শীতলক্ষ্যা নদী থেকে নৌ পুলিশ সদস্যরা ফারদিনের লাশ উদ্ধার করেন। পরবর্তীতে এ ঘটনায় দায়ের করা মামলার এজাহারে ফারদিনের বান্ধবী বুশরার নাম উল্লেখ করায় পুলিশ তাকে গ্রেফতার দেখায়। পরে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতের নির্দেশে পাঁচ দিনের রিমান্ডে নেয়। অবশ্য এর দুই দিন আগে ইস্টওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে পরীক্ষার পর বুশরাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়।

সর্বশেষ খবর