শনিবার, ১২ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

তেল চিনি আটা কোথাও আছে কোথাও নেই

রাশেদ হোসাইন

তেল চিনি আটা কোথাও আছে কোথাও নেই

বাজার দর

বাজারে দ্রব্যমূল্য লাগামহীন। গত এক মাসের ব্যবধানে দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় সব জিনিসের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। কাঁচা তরকারির বাজার থেকে শুরু করে ভোগ্যপণ্যের দাম সব কিছুই বাড়তির দিকে। এর মধ্যে তেল, চিনি, আটা কোথাও আছে, কোথাও নেই। ব্যবসায়ীরা অবশ্য দাম বৃদ্ধির জন্য ডলারের ঊর্ধ্বগতি, ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনকে দায়ী করলেও ভোক্তারা যথাযথভাবে বাজার মনিটরিং না করাকে দায়ী করছেন।

গতকাল রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, বাজারে প্রায় সব ধরনের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বেড়েছে। এর মধ্যে আবার বাড়তি দামেও মিলছে না কোনো কোনো পণ্য। সেগুলো কোথাও আছে, কোথাও নেই। এ তালিকায় রয়েছে চিনি, সয়াবিন তেল, আটা ও ময়দা। প্রায় দোকানগুলোতেও  একই চিত্র দেখা গেছে।

দেখা যায়, ক্রেতারা কোনো একটি দোকানে আটা-ময়দা পেলেও হয়তো চিনি পাচ্ছেন না। আবার কোথাও গিয়ে চিনি মিললেও সেখানে নেই সয়াবিন তেল কিংবা আটা। আবার কোথাও এসব পণ্যের মোড়কজাত দু-একটি প্যাকেট থাকলেও নেই খোলা পণ্য। এ সব পণ্য পেতে এক দোকান থেকে অন্য দোকানে ছুটতে হচ্ছে ক্রেতাদের। কেউ আবার বাধ্য হয়ে বেশি দামে পণ্য কিনছেন।

শনির আখড়া বাজারের মধ্যে দেখা যায়, হাতে গোনা দু-একটি দোকান বাদে অধিকাংশ দোকানেই কোনো না কোনো পণ্য নেই। বিশেষ করে সবচেয়ে বেশি সংকট সয়াবিন তেলের। কয়েকটি দোকানে ভোজ্যতেল পাওয়া গেলেও সেখানে বোতলজাত সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে। নেই খোলা কোনো সয়াবিন বা পাম তেল। বিক্রেতারা বলছেন, গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে তিন দফা তেলের দাম বেড়েছে। ভিন্ন ভিন্ন সময়ের তেলগুলো ভিন্ন ভিন্ন রেটের। একেক দোকান একেক দামে এসব তেল কেনায় বিক্রিও করতে হচ্ছে ভিন্ন ভিন্ন দামে। এটিই দামে তারতম্যের কারণ। এদিকে খুচরা বাজারে চিনি বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১১০ থেকে ১২০ টাকায়। তিন দিন আগেও এ চিনির দাম কেজিপ্রতি ৫ টাকা কম ছিল। আর প্রতি কেজি খোলা আটা ৬৫ টাকার নিচে মিলছে না। যা গত সাপ্তাহে ৫৮ টাকা ছিল। সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) এর তথ্য মতে, আটার দাম মাসের ব্যবধানে বেড়েছে ১২ দশমিক ১৫ শতাংশ। খোলা ময়দার দামও কেজি প্রতি ৭ টাকা বেড়েছে। গত সপ্তাহে যেখানে ৬৮ টাকা ছিল এ সপ্তাহে তা ৭৫ টাকা হয়েছে। টিসিবি বলছে, মাসের ব্যবধানে ময়দার দাম বেড়েছে ১৬ শতাংশ। বাজারের দোকানিরা বলছেন, প্যাকেটজাত আটার সরবরাহ কিছুটা কম। এক সপ্তাহ আগে খুচরা ব্যবসায়ীরা ডিলারদের কাছ থেকে যেসব আটা ও ময়দা সংগ্রহ করেছেন, সেগুলোই বিক্রি করছেন দোকানিরা। অনেক দোকানে তাও পাওয়া যাচ্ছে না। অন্যদিকে পাইকারি বাজারে খোলা আটা-ময়দার চড়া দামের কারণে অনেকে রাখছেন না। রাজধানীর কয়েকটি তরকারির বাজার ঘুরে দেখা গেছে, আলু, মুলা ও বেগুন বাদে বেশিরভাগ সবজিই এখন কিনতে হচ্ছে প্রতিকেজি ৫০ টাকার ওপরে। এর মধ্যে কয়েকটি সবজির দাম ১২০ থেকে ১৫০ টাকায়। কয়েকদিনের ব্যবধানে বেশকিছু সবজি কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে। প্রকারভেদে পাতাকপি ও ফুলকপিও বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। শসা বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকায়। লম্বা বেগুন প্রতি কেজি ৬০ টাকা, গোল বেগুন ১০০ টাকা, টমেটো ১৪০ টাকায়, প্রতিকেজি শিম ৮০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। চাল কুমড়া ও লাউ আকারভেদে প্রতিটি ৬০-৭০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া কেজিতে ৩০-৪০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০, পটোল ৬০, পেঁপে ৪০ থেকে ৫০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, ঢেঁড়স ৬০-৭০ টাকা, কচুর লতি ৮০ ও ধুন্দুল ৭০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। বাজারে প্রতিকেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকায়। দেশি পিঁয়াজের দাম বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা প্রতিকেজি। কয়েকটি বাজারে দেখা গেছে, ব্রয়লার মুরগি এখন প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকায়। সোনালি মুরগি ৩০০ টাকা আর দেশি মুরগি ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গরুর মাংস কেজিতে ৭০০ থেকে সাড়ে ৭০০ টাকা এবং খাসির মাংস ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বাজারগুলোতে প্রতিকেজি কাঁকরোল ৬০ থেকে ৭০ টাকা, চিচিঙ্গা, ঝিঙে, ঢেঁড়স ও পটোলের কেজি ৬০ থেকে ৮০ টাকা। কাঁচা মরিচ দাম কিছুটা কমে ৮০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। কাঁচা কলার হালি ৪০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে শীতের আবহ থাকায় লেবুর দাম নাগালের মধ্যে রয়েছে।

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে ক্রেতারা বিরক্ত। যাত্রাবাড়ী বাজারে কথা হয় ক্রেতা হালিম রহমানের সঙ্গে। তিনি বলেন, আজ যে দামে কিছু কিনছি, কোনো কারণ ছাড়াই কাল সেটা বেড়ে যাচ্ছে। এভাবে প্রতিনিয়ত সবকিছুর দাম বাড়ছে, কিন্তু আয় তো বাড়ছে না। বাজার মনিটরিং না থাকায় ক্রেতাসাধারণ বিপাকে পড়েছেন।

সর্বশেষ খবর