শনিবার, ১২ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

‘নিখোঁজ’ একলিমা ৪১ বছর পর ফিরলেন পাকিস্তান থেকে

মনিরুল ইসলাম মনি, সাতক্ষীরা

১৯৮১ সালে তিন সন্তান রেখে নিখোঁজ হন সাতক্ষীরার একলিমা বেগম। স্বামীর মৃত্যুর পর মানসিক ভারসাম্য হারিয়েছিলেন তিনি। একদিন সে অবস্থাতেই হারিয়ে যান। পরিবারের সদস্যরা সে সময় অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তার সন্ধান পায়নি। ৪১ বছর পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের কল্যাণে সন্ধান পাওয়া সেই একলিমা বাড়ি ফিরেছেন। গত বৃহস্পতিবার সাতক্ষীরার তালা উপজেলার গঙ্গারামপুর গ্রামের বাড়িতে পাকিস্তানি সন্তানকে নিয়ে ফেরেন একলিমা। সেখানে সৃষ্টি হয় এক আবেগঘন পরিবেশের। একলিমা সাতক্ষীরার তালা উপজেলার গঙ্গারামপুর গ্রামের মৃত ইসমাইল শেখের মেয়ে। ৬৫ বছর বয়সী একলিমা বেগম বলেন, কীভাবে তিনি পাকিস্তান পৌঁছান তা তার মনে নেই। তবে পরিবারকে ফিরে পেয়ে খুশি তিনি। পরিবারের সূত্র মতে, পাঁচ মাস আগে পাকিস্তানের শিয়ালকোটের দিলওয়ালিতে খোঁজ মেলে তার। সেখানে রয়েছে তার আরেক পরিবার। দ্বিতীয় সংসারে তিনি আরও দুই ছেলে ও দুই মেয়ের জননী। সেখানেই পরিবারের কাছে একলিমা মৃত্যুর আগে অন্তত একবার মাতৃভূমিতে আসার ইচ্ছা পোষণ করেন। পরিবারের সদস্যরা তার সেই ভিডিওবার্তা ধারণ করে ফেসবুকে যশোরের একটি গ্রুপে পোস্ট করেন। তাদের পোস্ট করা ভিডিওটি চোখে পড়ে একলিমা বেগমের বড় ভাই মৃত মকবুল শেখের ছেলে মো. জাকির শেখের। ভিডিওতে একলিমার বলা নামগুলো নিজের দাদা-বাবা ও চাচাদের সঙ্গে মিলে যাওয়ায় তিনি বিষয়টি নিয়ে বাড়িতে আলোচনা করেন। নিশ্চিত হন যে ভিডিওর একলিমা বেগমই তার হারিয়ে যাওয়া ফুফু। এরপর তারা পারিবারিকভাবেই ভিডিও কলে যোগাযোগ করেন একলিমার সঙ্গে। একলিমা বেগমের বড় ভাই মৃত মকবুল শেখের ছেলে জাকির শেখ বলেন, ‘কিছুদিন আগে ফেসবুকের মাধ্যমে ফুফু একলিমার খোঁজ পাই। তারপর থেকে তার সঙ্গে বাড়ির সবার নিয়মিত কথা হচ্ছিল। পরে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান অ্যাম্বাসির সহযোগিতায় বাড়িতে ফেরানো সম্ভব হয়েছে। দুই দেশে একলিমার দুই পরিবার নিয়ে জাকির শেখ জানান, ‘ফুফুর সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছি তিনি শুরুতে পাকিস্তানের একটি সেল্টার হোমে ছিলেন। সেখানে মুহাম্মদ সিদ্দিক নামে একজনের সঙ্গে তার পরিচয় হয় এবং পরে তারা বিয়ে করেন। মুহাম্মদ সিদ্দিক কয়েক বছর আগে মারা গেছেন। বাংলাদেশে একলিমা বেগমের প্রথম ঘরের এক ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে। ছেলে হেকমত আলী কাজ করেন ঢাকার একটি কারখানায়। দুই মেয়ে রমেছা বেগম ও নাছিমা বেগম। বড় মেয়ে রমেছা বেগম এখন পার্শ্ববর্তী হরিঢালী ইউনিয়নের শলুয়া গ্রামে শ্বশুরবাড়িতে বসবাস করছেন। ছোট মেয়ে নাছিমা বেগমের শ্বশুরবাড়িও একই গ্রামে।

সর্বশেষ খবর