শুক্রবার, ১৮ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

গ্রিসে দুশ্চিন্তায় পাসপোর্টহীন বাংলাদেশিরা

মতিউর রহমান মুন্না, গ্রিস

গ্রিসে দুশ্চিন্তায় পাসপোর্টহীন বাংলাদেশিরা

গ্রিসপ্রবাসী আবদুল কালাম চলতি বছরের ২ মার্চ মেশিন রিডেবল পাসপোর্টের (এমআরপি) জন্য আবেদন করেছিলেন। গ্রিসের এথেন্সে বাংলাদেশ দূতাবাস তার আবেদন গ্রহণ করে ২৫ এপ্রিল পাসপোর্টটি সংগ্রহ করার জন্য একটি রসিদ দিয়েছিল। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ ভেরিফিকেশনও হয় তার। কিন্তু আট মাস পার হলেও এখনো পাসপোর্টটি ছাপা হয়নি।

দূতাবাসে গেলে কর্মকর্তারা বলেন, ‘পাসপোর্ট অধিদফতরের সার্ভারে দেখাচ্ছে ভেরিফিকেশন রিপোর্ট আসেনি’। তাদের সার্ভারে পুলিশ ভেরিফিকেশন পেন্ডিং দেখাচ্ছে। অথচ আবেদনকারী হিসেবে আবেদনের অবস্থা সার্ভারে যাচাই করতে গেলে সেখানে লেখা দেখাচ্ছে, পুলিশ ভেরিফিকেশন অ্যাপ্রুভড্। অন্যদিকে পুলিশও বলছে তাদের তদন্ত প্রতিবেদনটি তাৎক্ষণিক পাঠিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে। হাতে লেখা পাসপোর্ট নিয়ে ১২ বছর আগে গ্রিসে পাড়ি দেওয়া আবদুল কালাম বলেন, ‘এক যুগ ধরে অবৈধভাবে থাকায় দেশেও যেতে পারছি না। এবার গ্রিসে বৈধ হওয়ার সুযোগ এসেছে। কিন্তু পাসপোর্ট না পেলে আমরা এ সুযোগটি হারাব। দূতাবাসে গেলে কর্মকর্তারা বলেন পাসপোর্ট ঢাকা অফিসে আটকে আছে। জেলা পুলিশ কার্যালয়ে যোগাযোগ করলে বলেন গত এপ্রিলেই তদন্ত করে পক্ষে রিপোর্ট পাঠিয়েছেন। আমাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা-মোকদ্দমা নেই। দূতাবাসের কর্মকর্তারা অনলাইনে দেখে বলছেন পুলিশ রিপোর্টের জন্য আটক আছে। তারা কিছু জানেন না।’ ভবিষ্যৎ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন এই প্রবাসী রেমিট্যান্স যোদ্ধা। শুধু আবদুল কালামই নন, গ্রিসে পাসপোর্ট জটিলতায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে প্রায় ২ হাজার বাংলাদেশির ভবিষ্যৎ। রেমিট্যান্স যোদ্ধারা ইউরোপে বৈধ হতে পাসপোর্টের ভুল তথ্যের কারণে পড়ছেন নানা বিড়ম্বনায়। এমনকি অনেকেই অবৈধ পথে অ্যানালগ পাসপোর্ট নিয়ে গ্রিসে প্রবেশ করেছেন কিন্তু তাদের কাছে বর্তমানে কোনো পাসপোর্ট নেই। নতুন করে পাসপোর্ট করার সুযোগও পাচ্ছেন না। এমন সমস্যা সমাধানের আশায় দৌড়ঝাঁপ করে সদুত্তর না পেয়ে হতাশায় ভুগছেন তারা। গ্রিসে বর্তমানে ৩০ হাজারের বেশি বাংলাদেশির বাস। তাদের অধিকাংশই অনিয়মিত। নেই কোনো বৈধ কাগজপত্র। দূতাবাসের তথ্যমতে, গ্রিসে পাসপোর্ট নেই এমন দেড় থেকে ২ হাজার বাংলাদেশি আছেন। যাদের অনেকেই এমআরপির জন্য আবেদন করেছেন। প্রায় ৫০০ আবেদন আছে যারা বিভিন্ন তথ্য পরিবর্তন করতে চান। কিন্তু সব আবেদনই আটকে আছে ঢাকায়। পাসপোর্টের জন্য গ্রিসে বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে বাংলাদেশ পাসপোর্ট অধিদফতরে বারবার তাগিদ দেওয়া হলেও আটকে থাকা পাসপোর্টগুলো ছাপা হচ্ছে না। এদিকে নানা জল্পনা-কল্পনার পর বাংলাদেশ ও গ্রিসের সমঝোতা চুক্তিটি গ্রিক সংসদে অনুমোদন পেয়েছে। এর ফলে প্রতি বছর ৪ হাজার কর্মী মৌসুমি কর্মভিসায় নেওয়ার পাশাপাশি গ্রিসে থাকা অবৈধ ১৫ হাজার অভিবাসীকেও বৈধতা দেওয়া হবে। এ ব্যাপারে এথেন্সে বাংলাদেশ দূতাবাসের মিনিস্টার মোহাম্মদ খালেদ বলেন, ‘২০২১ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও পাসপোর্ট অধিদফতরের অনুমোদন এবং নির্দেশনা অনুযায়ী ৫ শতাধিক বাংলাদেশি তাদের পাসপোর্টে নাম, ঠিকানা, জন্ম সালসহ এক বা একাধিক তথ্য সংশোধনের আবেদন করেন এবং এ আবেদনের সপক্ষে প্রয়োজনীয় দলিলপত্র পেশ করেন। এসব পাসপোর্ট আবেদন পাসপোর্ট অধিদফতরে দীর্ঘদিন ধরে অনিষ্পন্ন অবস্থায় রয়েছে। প্রবাসীদের অবস্থা বিবেচনা করে এবং তাদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে রাষ্ট্রদূত ইতোমধ্যে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এ অনিষ্পন্ন পাসপোর্টের আবেদনগুলো দ্রুত নিষ্পন্ন করে প্রবাসীদের নিয়মিত হওয়ার সুযোগদানের জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন। আশা করা যাচ্ছে, এসব অনিষ্পন্ন পাসপোর্টের আবেদনগুলো ভবিষ্যতে নিষ্পন্ন হবে।’

সর্বশেষ খবর