রবিবার, ২৭ নভেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

সুলতানি আমলের মসজিদ

সোনারগাঁ প্রতিনিধি

সুলতানি আমলের মসজিদ

বাংলার প্রাচীন রাজধানী সোনারগাঁয়ের পুরাকীর্তির মধ্যে অন্যতম ৫০০ বছরের পুরনো গোয়ালদী মসজিদ। উপজেলার গোয়ালদী গ্রামে স্বাধীন সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহের আমলে নির্মিত মসজিদটি পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। সুলতানি আমলের গৌরবোজ্জ্বল মুসলিম ঐতিহ্যের অন্যতম সাক্ষী এ মসজিদ। সোনারগাঁয়ে যে সব মুসলিম স্থাপত্য রয়েছে, তার মধ্যে এটি সবচেয়ে আকর্ষণীয়। জানা যায়, সোনারগাঁয়ে হোসেন শাহের রাজত্বকালের যে সব শিলালিপি পাওয়া যায়, তার মধ্যে এ মসজিদসংলগ্ন শিলালিপি অন্যতম। ১৫১৯ সালে মোল্লা হিজাবর আকবর খান এই মসজিদটি নির্মাণ করেন। এটি আলাউদ্দিন হোসেন শাহের (১৪৯৪-১৫১৯) রাজত্বকালে নির্মিত। ভারতের গৌড়, পান্ডুয়া ও বাংলাদেশের অন্যান্য স্থানের ইমারতের মতো এ মসজিদের ভেতরে-বাইরের দেয়ালে পাথর এবং ইটের ওপর আরব্য অলংকরণ লক্ষ্য করা যায়। এক গম্বুজ বিশিষ্ট এ মসজিদের চার কোনায় চারটি টাওয়ার রয়েছে। টাওয়ারগুলো সুলতানি রীতিতে তৈরি। মসজিদটির দেয়ালগুলো ১ দশমিক ৬১ মিটার প্রশস্ত। মসজিদে প্রবেশের জন্য পাঁচটি খিলান পথ রয়েছে। প্রধান প্রবেশ পথ বরাবর মূল মেহরাবটি অবস্থিত। এটি কালো পাথরের তৈরি। অন্য দুটি মেহরাব ইটের তৈরি। তবে কালের পরিক্রমায় মসজিদটি এখন অযত্ন-অবহেলায় রয়েছে। দেয়ালের ইট ও আস্তরণ খসে পড়ে যাচ্ছে।

খোদাই করা টেরাকোটা অলংকরণও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। দেয়ালে জন্মাচ্ছে গাছ, লতাগুল্ম। মসজিদটির মূল ফটক তালাবদ্ধ থাকলেও খিলানের গ্রিল খুলে পড়ে আছে। দেয়ালে শ্যাওলা জমেছে। মসজিদের চার পাশে ঘাস-লতাপাতা বেড়ে ভৌতিক রূপ ধারণ করেছে। এখন মলিন মুখে নিঃসঙ্গ দাঁড়িয়ে সেই সোনালি যুগের স্মৃতির জানান দিচ্ছে মসজিদটি। প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর মসজিদের ইতিহাস সংবলিত সাইনবোর্ডে উল্লেখ করা হয়েছে, মুঘল আমলে ঢাকায় রাজধানী স্থাপনের আগে সোনারগাঁয়ে বারো ভূঁইয়া প্রধান ঈশা খাঁ, মুসা খাঁ ও এর আগের স্বাধীন সুলতানদের রাজধানী ছিল। রাজধানী ও রাজসভার জন্য মনোরম ইমারত ছাড়াও মুসলিম শাসকেরা এখানে মসজিদ, খানকা ও সমাধি নির্মাণ করেন। তার মধ্যে এ মসজিদ অন্যতম। মসজিদের ছাদে একটি গম্বুজ রয়েছে। মসজিদের দেয়াল প্রায় পাঁচ ফুট চওড়া। মসজিদে আকর্ষণীয় পাথরের দরজা রয়েছে। প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের প্রকৌশলী বলেন, ১৯৭৫ সাল থেকে সরকার ঐতিহাসিক এ মসজিদের রক্ষণাবেক্ষণসহ সার্বিক বিষয়ে দেখভাল করে আসছে। প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর উদ্যোগী হয়ে মসজিদের ইতিহাস সাইনবোর্ড টাঙিয়ে উল্লেখ করেছে, যাতে এর ইতিহাস বিকৃত না হয়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর