রবিবার, ৪ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

বাউত উৎসবে মানুষের ঢল

পাবনা প্রতিনিধি

বাউত উৎসবে মানুষের ঢল

চলনবিল অধ্যুষিত পাবনার ভাঙ্গুড়ায় মাছ ধরার বাউত উৎসবে (স্থানীয় ভাষায়) হাজারো মানুষের ঢল নেমেছে। প্রতি বছরের মতো গতকাল উপজেলার রুহুল বিলে ভোরে শুরু হয়েছে এ উৎসব।

দেখা গেছে, রুহুল বিল কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে গেছে শিশু থেকে শুরু করে নানা বয়সী মানুষে। একেক জন ছিলেন একেক ধরনের উপকরণ হাতে। কেউ পলো,  কেউ ধর্মজাল, চাকজাল, ঠেলাজালসহ নানা ধরনের মাছ ধরার উপকরণ নিয়ে নেমে পড়েছেন বিলের পানিতে। কেউ আবার শীতে জড়োসড়ো অবস্থায় বিল পাড়ে আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছিলেন। সবমিলে এ উৎসব এক মিলন উৎসবে পরিণত হয়েছে।

বিলপাড়ে আসা জেলার আটঘরিয়া উপজেলার বেলদহ গ্রামের রতন মোল্লা জানান, পাবনার সীমান্তবর্তী রুহুল বিলে এসেছি শীতের রাতে মাছ ধরার আশায়। এই বিলে প্রতি বছর বাউত উৎসব হয়। এটা আমাদের এলাকার সবাই জানে, তাই শখ করে মাছ ধরতে এসেছি। শীতের ভিতর এসেছি ভাই, মাছ পেলে কোনো শীতই লাগে না আমাদের।

পাশর্^বর্তী ফরিদপুর উপজেলার হাদল গ্রামের মানিক মিয়া এসেছেন, তিনি নাকি মাছ কপালে মানুষ। আশেপাশের সব বিলেই যান তিনি ছোটবেলা  থেকেই। বিলে বাউত নামার খবর পেলেই তিন ছুটে যান, তবে এ জীবনে যতবারই তিন বাউতে এসেছেন কখনো খালি হাতে বাড়ি ফিরতে হয়নি তাকে। পলো দিয়ে ১২ কেজি ওজনের বোয়াল মাছ ধরারও অভিজ্ঞতা রয়েছে তার। গতকাল ঈশ্বরদী উপজেলার মানিকহাট গ্রাম থেকে খুব ভোরে শ্যালো ইঞ্জিন চালিত ৫টি নসিমন নিয়ে তারা ৪৫ জনের মতো আসেন বাউতে মাছ ধরতে। তারা জানান, প্রায় ৪৫ কিলোমিটার দূর থেকে এখানে মাছ শিকার করতে এসেছেন। অধিকাংশই পলো নিয়ে এসেছেন, মাছ পাবেন বলেই দাবি তাদের। এ রকম শুধু পাবনা জেলারই নয়, পাশর্^বর্তী নাটোর, সিরাজগঞ্জসহ বিভিন্ন জেলার মানুষ এসেছেন এই উৎসবে। তারা জানান, বাউত উৎসব প্রতি বছর নভেম্বর মাসের শেষের দিকে শুরু হয়ে চলে জানুয়ারি মাস পর্যন্ত। এটি মাছ ধরার প্রাণের উৎসব। সব শ্রেণিপেশার মানুষ এই উৎসবে অংশগ্রহণ করেন। মাছ শিকারের চেয়ে সবাই মিলে দল বেঁধে বিলের পানিতে নেমে আনন্দ উপভোগ করাই মূল উদ্দেশ্য। এ বিষয়ে ভাঙ্গুড়া উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা নাজমুল হুদা বলেন, এভাবে মাছ শিকার করায় মাছের ক্ষতি হলেও এলাকার এটা আদি উৎসব, বাধা দেওয়ার মতো অবস্থা নেই। তবে মাছের বংশবিস্তারের জন্য ক্ষতিকর। ভাঙ্গুড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা  মোহাম্মদ নাহিদ হাসান খান বলেন, বাউত উৎসব এই এলাকার অতীত ঐতিহ্য। শুনেছি প্রতি বছরের এ সময়ে এই বিলে মাছ ধরার উৎসব হয়। হাজার হাজার মানুষ আসেন বাউত উৎসবে যোগ দিতে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর