শুক্রবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

দেশে খাদ্য সংকটের আশঙ্কা নেই

আউশের ক্ষতি আমনে পূরণ, তিন জাতে বাড়বে বোরোর ফলন

শামীম আহমেদ

দেশে খাদ্য সংকটের আশঙ্কা নেই

অনাবৃষ্টির কারণে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরে আউশ মৌসুমে ধানের আবাদ ও ফলন কিছুটা কম হলেও আগামী বছর দেশে চাল সংকটের কোনো আশঙ্কা নেই বলে জানিয়েছে কৃষিভিত্তিক সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো। তাদের মতে, আউশের ঘাটতি পূরণ হয়ে গেছে আমন মৌসুমে। অন্যদিকে ২৬ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদ বৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। একই সঙ্গে ব্রি-২৮ ও ব্রি-২৯ জাতের পরিবর্তে উচ্চ ফলনশীল ব্রি-৮৯, ব্রি-৯২ ও বঙ্গবন্ধু-১০০ জাতের ধানের আবাদ উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে চালের ফলন এবার ৪ কোটি মেট্রিক টন ছাড়িয়ে যাবে, যা অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি। ফলে বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিলেও দেশে খাদ্য ঘাটতির কোনো আশঙ্কা নেই।

এদিকে দেশকে খাদ্যে পুরোপুরি স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের প্রতি ইঞ্চি জমি আবাদের আওতায় আনার নির্দেশ দিয়েছেন। সেই সঙ্গে উচ্চফলনশীল বিভিন্ন জাত উদ্ভাবনে গবেষণায়ও জোর দেওয়া হয়েছে। এতে প্রতি বছরই বাড়ছে হেক্টরপ্রতি ধানের ফলন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের (ডিএই) তথ্যানুযায়ী, ২০১৫-১৬ অর্থবছরে দেশে মোট ১১৩ লাখ ৮৮ হাজার হেক্টর জমিতে ধানের আবাদ হয়। নানা স্থাপনার কারণে কৃষি জমি কমলেও ২০২১-২২ অর্থবছরে ধানের আবাদ হয়েছে ১১৮ লাখ ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে। ধানের আবাদ বেড়েছে সাড়ে ৪ লাখ হেক্টর জমিতে। এ ছাড়া ২০১৫-১৬ অর্থবছরে মোট চাল উৎপাদন হয় ৩ কোটি ৪৭ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন। প্রতি হেক্টরে উৎপাদন হয় (আউশ-আমন-বোরোর গড়) ৩.০৫ মেট্রিক টন। ২০২১-২২ অর্থবছরে মোট চাল উৎপাদন হয় ৩ কোটি ৯১ লাখ ৮০ হাজার মেট্রিক টন। প্রতি হেক্টরে উৎপাদন হয় ৩.৩১ মেট্রিক টন। চলতি অর্থবছর আউশ মৌসুমে আগের বছরের চেয়ে ৯১ হাজার ৮০০ হেক্টর জমিতে ধানের আবাদ কম হওয়ায় চাল উৎপাদন কমেছে ২ লাখ ৪৪ হাজার মেট্রিক টন। মোট উৎপাদন হয়েছে প্রায় ৩০ লাখ মেট্রিক টন। তবে আমন মৌসুমে ধানের আবাদ হয়েছে ৫৯ লাখ ২৩ হাজার হেক্টর জমিতে, যা আগের বছরের চেয়ে ২ লাখ ৩ হাজার ১০০ হেক্টর বেশি। গত আমন মৌসুমে প্রতি হেক্টরে ফলন এসেছিল ২.৬২ মেট্রিক টন। সেই হিসাবেই চলতি বছর আমনে ফলন বাড়বে ৫ লাখ ৩২ হাজার মেট্রিক টন। মোট ফলন আসবে প্রায় ১ কোটি ৫৫ লাখ ১৮ হাজার মেট্রিক টন। বর্তমানে আমন সংগ্রহ চলছে। অন্যদিকে দেশের প্রধান ধানের মৌসুম বোরোর বীজতলা তৈরির কাজ চলছে এখন। ৪৯ লাখ ৭৮ হাজার হেক্টর জমিতে আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে ডিএই, যা আগের বছর আবাদ হওয়া জমির চেয়ে ২৬ হাজার হেক্টর বেশি। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ কোটি ১৫ লাখ ৩৩ হাজার মেট্রিক টন। লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়ন হলে চলতি বছর চালের ফলন আসবে ৪ কোটি ৫১ হাজার মেট্রিক টনের বেশি, যা এ যাবৎকালের মধ্যে সর্বোচ্চ। আগামী বছর বাংলাদেশে চালের কোনো সংকট হবে না জানিয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের (ডিএই) মহাপরিচালক মো. বেনজীর আলম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বাংলাদেশের কৃষকের অবস্থা আর আগের মতো নেই। আমনে বৃষ্টি না হলেও সেচ দিয়ে বিপুল পরিমাণ ধান উৎপাদন করেছে। আউশের ক্ষতি পুষিয়ে দিয়েছে। গত বছরের চেয়ে বোরোর আবাদি জমিও বেড়েছে। এ ছাড়া এবার ব্রি-৮৯, ব্রি-৯২ ও বঙ্গবন্ধু-১০০ জাতের উচ্চ ফলনশীল ধানের আবাদ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাড়ছে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কোনো প্রভাব বাংলাদেশের কৃষিতে পড়েনি। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এবার রেকর্ড পরিমাণ চাল উৎপাদন হবে। এদিকে দীর্ঘকাল ধরে দেশে বোরো উৎপাদনের সিংহভাগই আসছে ব্রি-২৮ ও ব্রি-২৯ ধান থেকে। দুই যুগের বেশি পুরনো এসব জাতের উৎপাদনশীলতা দিন দিন কমছে। রোগবালাইও বাড়ছে। এগুলোর বিকল্প হিসেবে ২০১৮ সালে ব্রি-৮৯, ২০১৯ সালে ব্রি-৯২ ও গত বছর মুজিববর্ষ উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু ধান-১০০ অবমুক্ত করে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি)। বর্তমানে বোরো মৌসুমে প্রতি হেক্টর জমিতে গড়ে ফলন হচ্ছে ৪.২৪ মেট্রিক টন। সেখানে ব্রি-৮৯ এর গড় ফলন হেক্টরে ৮ মেট্রিক টন। ব্রির পরিচালক (গবেষণা) ড. মোহাম্মদ খালেকুজ্জামান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, প্রতি হেক্টর জমিতে ব্রি-২৮ এর সর্বোচ্চ উৎপাদন ৬ টন, ব্রি-২৯ এর সাড়ে ৭ টন, সেখানে উপযুক্ত পরিচর্যা পেলে প্রতি হেক্টরে ব্রি-৮৯ এর ফলন সর্বোচ্চ ৯.৭ টন, ব্রি-৯২ এর ৯.৩ টন এবং বঙ্গবন্ধু-১০০ ধানের ৮.৮ টন। এগুলোর জীবনকালও কম। কৃষকের মধ্যে জাতগুলোর জনপ্রিয়তা বাড়ছে। ফলে চালের উৎপাদন নিয়ে আমাদের কোনো সংকট নেই।

সর্বশেষ খবর